ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থীদের মধ্যে ব্যবসায়ী সবচেয়ে বেশি। তাঁদের মধ্যে কোটিপতির সংখ্যাও কম নয়। এ ছাড়া বেশির ভাগ প্রার্থীর বিরুদ্ধে অতীতে মামলা ছিল এবং বর্তমানেও মামলা আছে। পাশাপাশি উচ্চশিক্ষিত প্রার্থীও বেশি।
আজ মঙ্গলবার সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানায়। অনলাইনে আয়োজিত এ সংবাদ সম্মেলনে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের গতিপ্রকৃতি এবং প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী চেয়ারম্যান প্রার্থীদের তথ্যের বিশ্লেষণ উপস্থাপন করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে অংশ নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী শাহদীন মালিক বলেন, নির্বাচন উঠে গেছে। এখন যা হচ্ছে, তা লোকদেখানো। কোনো অর্থেই নির্বাচন বলে কিছু নেই। কেন্দ্রীয় সরকারের নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখার জন্য স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা চালু রাখা হয়েছে। স্থানীয় সরকারের নামকাওয়াস্তে অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয়। এ অবস্থা যত দিন চলবে, তত দিন উন্নয়নের গলাবাজি হবে; কিন্তু জনগণের কোনো উন্নয়ন হবে না।
এবার ৫ ধাপে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন হচ্ছে। সর্বমোট ৪৫৯টি উপজেলার ১ হাজার ৮৭৪ জন চেয়ারম্যান প্রার্থী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে প্রার্থীদের জমা দেওয়া হলফনামা বিশ্লেষণ করে সুজন প্রার্থীদের বিস্তারিত চিত্র তুলে ধরেছে। সুজনের প্রধান কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী দিলীপ কুমার সরকার এ উপস্থাপনা তুলে ধরেন।
চেয়ারম্যান পদপ্রার্থীদের প্রায় ৬৮ শতাংশ ব্যবসায়ী। অন্যান্য নির্বাচনের মতো উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রতিদ্বন্দ্বিতার দৌড়েও ব্যবসায়ীরা এগিয়ে রয়েছেন। এ ছাড়া সম্পদের দিক থেকে প্রার্থীদের ৩২ শতাংশের বেশি কোটিপতি। সুজন বলেছে, প্রার্থীদের এক-তৃতীয়াংশ কোটিপতি। ৪৪ শতাংশের বেশি প্রার্থী বছরে ৫ লাখ টাকার কম আয় করেন। এবার ঋণগ্রহীতা প্রার্থী ২৮ শতাংশ।
এটা হচ্ছে নাই-এর নির্বাচন। ভোটার নাই, বিরোধী দল নাই, প্রতিদ্বন্দ্বিতা নাই। নির্বাচন এখন নির্বাসনে চলে গেছে।বদিউল আলম মজুমদার, সম্পাদক, সুজন
আয়কর দেওয়া প্রার্থীদের সংখ্যাও এবার বেশি। আয়কর প্রদানকারীদের মধ্যে লাখ টাকার বেশি আয়কর দেন ২৮ শতাংশের বেশি।
মামলার তথ্যে সুজন জানিয়েছে, ২০ শতাংশের বেশি প্রার্থীর বিরুদ্ধে বর্তমানে মামলা রয়েছে এবং অতীতে মামলা ছিল ৪৩ শতাংশ প্রার্থীর বিরুদ্ধে। সুজন বলছে, অধিকাংশ প্রার্থীই ক্ষমতাসীন দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকায় প্রার্থীদের ক্ষেত্রে অতীত মামলা বেশি হলেও বর্তমানে মামলা কম।
প্রার্থীদের বেশির ভাগ উচ্চশিক্ষিত হলেও এখনো উল্লেখযোগ্যসংখ্যক প্রার্থী রয়েছেন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের গণ্ডি অতিক্রম করেননি।
সুজন শীর্ষ ১০ সম্পদশালী চেয়ারম্যান প্রার্থীর নাম উল্লেখ করেছে। তাঁরা হলেন নরসিংদীর শিবপুরের ফেরদৌসী ইসলাম, নোয়াখালীর সেনবাগের এস এম জাহাঙ্গীর আলম, পিরোজপুরের ভান্ডারিয়ার মো. মিরাজুল ইসলাম, কুমিল্লার হোমনার রেহানা বেগম, ঢাকার ধামরাইয়ের সুধীর চৌধুরী, হবিগঞ্জের মাধবপুরের এস এফ এ এম শাহজাহান, নোয়াখালীর সুবর্ণচরের আতাহার ইসরাক শাবাব চৌধুরী, ফেনীর ছাগলনাইয়ার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান মজুমদার, শরীয়তপুরের জাজিরার মোহাম্মদ ইদ্রিস ফরাজী ও ময়মনসিংহের ভালুকার মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম।
তাঁরা সবাই কোটিপতি। সুজন বলছে, প্রার্থীরা হলফনামায় সম্পদের যে তথ্য দেন, তা প্রকৃত চিত্র নয়। কারণ, প্রার্থীদের অধিকাংশই প্রতিটি সম্পদের মূল্য উল্লেখ করেন। অধিকাংশ প্রার্থীর সম্পদের পরিমাণ আরও অনেক বেশি।
সঞ্চালকের বক্তব্যে সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘এটা হচ্ছে নাই-এর নির্বাচন। ভোটার নাই, বিরোধী দল নাই, প্রতিদ্বন্দ্বিতা নাই। নির্বাচন এখন নির্বাসনে চলে গেছে। যাঁরা নির্বাচনের দায়িত্বে, তাঁদের প্রতি মানুষের আস্থাহীনতার কারণে এ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।’
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন মানবাধিকারকর্মী হামিদা হোসেন, সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) কোষাধ্যক্ষ সৈয়দ আবু নাসের বখতিয়ার আহমেদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস।