‘যারা ধর্মঘট ডেকেছে, তারা সমিতির কেউ নয়’, প্রত্যাহারের আহ্বান

তেল সরবরাহ না থাকায় বন্ধ রাখা হয়েছে রাজধানীর মেঘনা পেট্রলপাম্প। ফলে তেলচালিত যানবাহনের চালকেরা বিপাকে পড়েন। মৎস্য ভবন মোড়, ৩ সেপ্টেম্বর
 ছবি: দীপু মালাকার

‘যারা ধর্মঘট ডেকেছে, তারা সমিতির কেউ নয়। একসময় তারা সমিতিতে ছিল। এখন নেই।’ পেট্রলপাম্প মালিকদের পুরোনো ও বড় সংগঠন বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম ডিলার্স, ডিস্ট্রিবিউশন, এজেন্টস অ্যান্ড পেট্রলপাম্প ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোহাম্মদ নাজমুল হক এসব কথা বলেছেন। তিনি ধর্মঘট প্রত্যাহার করার আহ্বান জানিয়েছেন।

আজ রোববার রাজধানীর কারওয়ান বাজারে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) অধীন থাকা রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানি যমুনার বোর্ডরুমে সংবাদ সম্মেলনে ধর্মঘট প্রসঙ্গে তিনি এসব কথা বলেন।

যৌক্তিক সময়ে দাবি আদায়ের আন্দোলন হবে বলে জানান নাজমুল হক। তিনি বলেন, যেহেতু সরকার ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে দাবি মানার আশ্বাস দিয়েছে, তাই এখন আন্দোলন করার যুক্তি নেই।

নাজমুল হক বলেন, ২০০৩ সালে তেল পাচারের দায়ে যাঁকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে, তিনি এখন স্বঘোষিত সভাপতি। অফিসের তহবিল তছরুপের দায়ে একজনকে বহিষ্কার করা হয়েছে তিনি এখন মহাসচিব। আগে রাজশাহী বিভাগের সভাপতি ছিলেন। দুজনেই আঞ্চলিক নেতা। এ পর্যন্ত ২৩ বার ধর্মঘট ডাকছে, এরপর প্রত্যাহার করছে। বিপিসির ওপর চাপ তৈরি করে অন্য ব্যবসার সুবিধা নেয় তারা।

মেঘনা পেট্রলপাম্প বন্ধ।মৎস্য ভবন মোড়, ৩ সেপ্টেম্বর

নাজমুল হক আরও বলেন, ‘যারা ধর্মঘট ডেকেছে, তারা কিন্তু এফবিসিসিআইতে নেই।এরপরও বিপিসি ওদের সঙ্গে বৈঠক করত। এরপর আইনি নোটিশ পাঠানো হয়। তাতেও থামেনি বিপিসি। তাদের বিপিসি আশ্রয়–প্রশ্রয় দিয়েছে। এখন ধর্মঘট বন্ধে আমাদের ডাকা হয়েছে সহায়তার জন্য। ঢাকা, সিলেট, বরিশাল, চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ কোথাও কোনো ধর্মঘট হয়নি। সক্রিয় না হলে ধর্মঘট হতো সারা দেশে।’

নাজমুল হক আরও বলেন, ২০১৬ সালের মার্চে ১২ দফা দাবি জানানো হয়।তাৎক্ষণিকভাবে তিনটা মেনে নেওয়া হয়। এরপর আরও কয়েকটা মেনে নিয়েছে।পাঁচটা দাবি বাকি রয়ে যায়। এর মধ্যে অন্যতম কমিশন বাড়ানো। কিন্তু এটি নিয়ে বারবার সময় পিছিয়েছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।

ধর্মঘটের কারণে ডিপো থেকে তেল না পাওয়ার বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনে বিপিসির পরিচালক অনুপম বড়ুয়া বলেন, পরিস্থিতি দেখা হচ্ছে। এমন ঘটনা দেখলে জ্বালানি তেল সরবরাহ স্বাভাবিক করতে কাল থেকে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি। দাবি কিছু মানা হয়েছে, বাকিটা প্রক্রিয়াধীন বলেও জানান। তিনি বলেন,  এর মধ্যে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়া অযৌক্তিক।

তিন দফা দাবি আদায়ে আজ থেকে ধর্মঘট পালন করার কথা পেট্রলপাম্পের মালিকদের একাংশের। সরকারি সংস্থার কাছ থেকে জ্বালানি তেল (ডিজেল, পেট্রল, অকটেন) কিনে, তা বিভিন্ন ডিপো ও পেট্রলপাম্পে পরিবহন এবং গ্রাহকের কাছে বিক্রি করেন তাঁরা।

বর্তমানে প্রতি লিটার জ্বালানি তেল বিক্রি করে ২০ পয়সা কমিশন পায় পেট্রলপাম্প। এটি বাড়িয়ে বিক্রয়মূল্যের সাড়ে ৭ শতাংশ করার দাবি তাদের। বাকি দাবির মধ্যে আছে পেট্রলপাম্পের ব্যবসায়ীরা কমিশন এজেন্ট ও ট্যাংকলরি ভাড়ার ওপর ভ্যাট সংযুক্ত নয়; এটি আলাদা প্রজ্ঞাপন আকারে প্রকাশ। ২৫ বছরের বেশি বয়সী ট্যাংকলরির ইকোনমিক লাইফের জন্য পৃথকভাবে প্রজ্ঞাপন প্রকাশ।

সরকার অনুমোদিত পরিবেশকদের নিয়মিত জ্বালানি তেল সরবরাহ করে বিপিসির অধীন থাকা তিন রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানি পদ্মা, মেঘনা ও যমুনা। এ জ্বালানি তেল কিনে নিয়ে পরিবেশকেরা নিজস্ব পেট্রলপাম্প থেকে ডিজেল, পেট্রল ও অকটেন বিক্রি করে গ্রাহকের কাছে।

জ্বালানি তেল পরিবহনে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম ট্যাংকার ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন নামেও একটি সংগঠন আছে। দাবি আদায়ে এই দুই সংগঠনের কোনো কর্মসূচি নেই। সরকারের সঙ্গে এক বৈঠকে ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে তাদের দাবি মানার বিষয়ে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। তাই জ্বালানি উত্তোলন স্বাভাবিক রাখার আহ্বান জানিয়েছে তারা।