কোটি টাকায় হচ্ছে উন্নয়নের যাত্রাপালা উৎসব

পাবনার একটি যাত্রা দলের আয়োজন
ফাইল ছবি: প্রথম আলো
কোটি টাকায় হচ্ছে উন্নয়নের যাত্রাপালা উৎসব

দেশব্যাপী যাত্রাপালার বিশাল আয়োজন শুরু হচ্ছে বৃহস্পতিবার থেকে। নরসিংদীর শিউলী অপেরা, বগুড়ার করতোয়া যাত্রা গোষ্ঠী ও শরীয়তপুরের মধুমালা নাট্য সংস্থার মতো দেশের বিভিন্ন জেলার ১২০টি যাত্রাদল অংশ নিচ্ছে এ উৎসবে।

এ উপলক্ষ্যে লেখা হয়েছে নতুন করে ২০টি পালা। এর মধ্যে শুধু ‘জননী জন্মভূমিশ্চ’ পালাটি মঞ্চস্থ হবে ১০ বার। ‘জননীর স্বপ্নপূরণ’ নামের পালা হবে ২২ বার। এর মধ্যে আবার একই জেলায় একই যাত্রা একাধিকবারও হচ্ছে। যেমন নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার পৌরসভা–সংলগ্ন মাঠে ৬ নভেম্বর হবে ‘জননী জন্মভূমিশ্চ’ পালা। চার দিন পরেই নরসিংদীর শিবপুরে ইটখোলা মোড়ে একই পালা মঞ্চস্থ করবে আরেকটি যাত্রা দল।

নরসিংদীর লোকনাথ নাট্য সংস্থা এবং দীপ্তি নাট্য সংস্থার স্বত্বাধিকারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, ‘জননী জন্মভূমিশ্চ’ পালাটি প্রবীণ যাত্রাশিল্পী মিলন কান্তি দের লেখা। দেশের উন্নয়নমূলক তথ্য রয়েছে এ পালায়। মঞ্চে অভিনয় করবে ১০টি চরিত্র। একটি নারী ও ৯টি পুরুষ চরিত্রের সঙ্গে আছে যাত্রাপালার ‘বিবেক’ চরিত্র।

‘গণজাগরণের আন্দোলন শীর্ষক যাত্রা উৎসব-২০২৩’ কার্যক্রমের অংশ হিসেবে শুরু হচ্ছে এ উৎসব। শিল্পকলা একাডেমির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তারা ১৮টি শিল্পমাধ্যম নিয়ে ধাপে ধাপে এমন আয়োজন করছে। এরই মধ্যে অনুষ্ঠিত হয়েছে পুতুল নাট্য উৎসব, পালাগান ও মূকাভিনয় উৎসব। এবারের পর্ব ‘যাত্রা’। উৎসবে ১২০টি পালার মধ্যে আরও গুরুত্ব পাচ্ছে ‘শেখ হাসিনার স্মার্ট বাংলাদেশ’, ‘বদলে যাওয়া বাংলাদেশ’, ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ শিরোনামের যাত্রাগুলো। মূলত এবারের আয়োজনের সব যাত্রাই বর্তমান উন্নয়ন তুলে ধরার প্রয়াসে।  

রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলার শিল্পকলা একাডেমি চত্বর, উপজেলা পরিষদের মিলনায়তন, টাউন হলের মতো স্থানে হবে এবারের যাত্রা উৎসব। নরসিংদীর দীপ্তি নাট্য সংস্থার কর্ণধার মো. হাসান জানান, প্রতি পালা বাবদ ৬০ হাজার টাকা করে দেওয়া হবে বলে শুনেছেন। তবে শিল্পকলা একাডেমির নাট্যকলা ও চলচ্চিত্র বিভাগের উপপরিচালক আলি আহমেদ প্রথম আলোকে জানান, প্রতিটি পালার জন্য দলকে দেওয়া হবে ৫০ হাজার টাকা করে।

প্রতিটি পালা বাবদ কারিগরি ব্যবস্থাপনা খাতে খরচ ধরা হয়েছে ২০ হাজার টাকা করে। অর্থাৎ প্রতি পালায় খরচ ৭০ হাজার টাকা। ১২০টি পালায় খরচ মোট  ৮৪ লাখ টাকা। এর সঙ্গে প্রচার বাবদ ব্যয় ধরা হয়েছে ৩ লাখ টাকা।

বিপুল আয়োজনের এ উৎসবে যাত্রাপালার স্বভাবগত ধরন, পৌরাণিক কথা, রূপকথা বা লোকসংস্কৃতির অনুপস্থিতি সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে আলি আহমদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা যাত্রার যে ফর্ম তা পরিবর্তন করিনি। শিল্পীরা তাদের নিজেদের ধারাতেই মঞ্চে অভিনয় করবেন। তবে যেহেতু এটা ‘গণজাগরণের শিল্প’ শীর্ষক উৎসব। তাই গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে মুক্তিযুদ্ধ, দেশের উন্নয়ন এবং অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের ওপর।’

দুই সপ্তাহ ধরে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া প্রায় কোটি টাকার এ আয়োজনে গ্রামবাংলার স্বভাবসুলভ কোনো পালা না থাকায় যাত্রাশিল্পীদের আক্ষেপ আছে। তবে তাঁরা কেউ নাম প্রকাশ করতে ইচ্ছুক নন।

পিরোজপুরের স্বরূপকাঠির দুজন যাত্রাশিল্পী প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা অন্য সময় টুকটাক করে নিজেদের পালা করেন গ্রামগঞ্জে। শিল্পকলা একাডেমির উদ্যোগে ২ নভেম্বর থেকে শুরু হতে যাওয়া উৎসবের প্রথম দিন লোকনাট্য গোষ্ঠী মঞ্চে আনবে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’, জ্যোতি অপেরা আনবে ‘জননীর স্বপ্নপূরণ’ আর বাংলার বাণী অপেরা আনছে ‘জাগো মানুষ জাগাও দেশ’ নামের পালা।  

গণজাগরণের শিল্প শীর্ষক যাত্রা উৎসব-২০২৩ শেষ হবে ১৯ নভেম্বর হবিগঞ্জের চুনারুঘাটে খোয়াই অপেরার ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ যাত্রাপালা মঞ্চায়নের মধ্য দিয়ে।