প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা পরিদপ্তরের (ডিজিএফআই) কথিত আয়নাঘর থেকে মুক্তি পেয়েছেন ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টের (ইউপিডিএফ) নেতা মাইকেল চাকমা। আজ বুধবার ইউপিডিএফ এ তথ্য জানিয়ে বলেছে, রাষ্ট্রীয় গুমের শিকার হওয়া ইউপিডিএফের সংগঠক মাইকেল চাকমা দীর্ঘ পাঁচ বছর তিন মাস পর অবরুদ্ধদশা থেকে মুক্তি পেয়েছেন। গতকাল মঙ্গলবার ভোরের দিকে চট্টগ্রামের একটি স্থানে তাঁকে চোখ বাঁধা অবস্থায় ছেড়ে দেওয়া হয়।
ইউপিডিএফের অন্যতম সংগঠক অংগ্য মারমা আজ দুপুরে প্রথম আলোকে বলেন, মাইকেল চাকমা ‘আয়নাঘর’ থেকে মুক্তি পেয়েছেন। নিরাপত্তার জন্য তাঁকে বিশেষ স্থানে রাখা হয়েছে।
এর আগে গতকাল ভোরে আট বছর পর নিজ নিজ বাসায় ফেরেন সাবেক সেনা কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (বরখাস্ত) আবদুল্লাহিল আমান আযমী ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী আহমাদ বিন কাসেম (আরমান)। ২০১৬ সালের ৯ আগস্ট আহমদ বিন কাসেমকে (আরমান) মিরপুর ডিওএইচএস থেকে এবং এর কয়েক দিন পর ২৩ আগস্ট আবদুল্লাহিল আমান আযমীকে গুম করা হয়েছিল।
মাইকেল চাকমা নিখোঁজ হয়েছিলেন ২০১৯ সালের ৯ এপ্রিল। মাইকেল চাকমা পার্বত্য চট্টগ্রামসহ সারা দেশের সব জাতিসত্তার জনগণ, কৃষক, শ্রমিক, মেহনতি মানুষের মুক্তির জন্য, গণতান্ত্রিক অধিকার আদায়ের জন্য রাজনৈতিকভাবে সক্রিয় ছিলেন।
ইউপিডিএফের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ২০১৯ সালের ৯ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জের কাঁচপুর এলাকা থেকে সাংগঠনিক কাজ শেষে ঢাকায় ফেরার পথে রাষ্ট্রীয় সংস্থা কর্তৃক মাইকেল চাকমা গুমের শিকার হন। এর পর থেকে তাঁর কোনো হদিশ পাওয়া যায়নি।
মাইকেল চাকমাকে উদ্ধার ও মুক্তির দাবিতে ইউপিডিএফ ও এর সহযোগী বিভিন্ন সংগঠন, প্রগতিশীল ও মানবাধিকার সংগঠন, শিক্ষক-নাগরিক সমাজসহ পরিবারের লোকজন নানা কর্মসূচি পালন করেছেন। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, সিএইচটি কমিশনসহ মানবাধিকার নিয়ে কাজ করা ব্যক্তিরাও মাইকেল চাকমা গুমের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে তাঁর সন্ধান দেওয়ার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছিলেন।
সংশ্লিষ্ট নারায়ণগঞ্জ থানায় অভিযোগ দায়ের ও মাইকেল চাকমার সন্ধান চেয়ে পরিবারের পক্ষ থেকে হাইকোর্টে রিট পিটিশন দাখিল করা হলেও এত দিন সরকারের পক্ষ থেকে তাঁকে উদ্ধারে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। ছাত্র গণ–অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হওয়ার পর তাঁকে মুক্তি দেওয়া হলো।
ইউপিডিএফের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি নুতন কুমার চাকমা এক বিবৃতিতে মাইকেল চাকমাকে মুক্তি দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ‘ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের নির্দেশে মাইকেল চাকমাকে তুলে নিয়ে দীর্ঘ পাঁচ বছরের অধিক বন্দী করে রাখে।’ তিনি এই গুমের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিচারের দাবি জানান। পাশাপাশি কারাগারে আটক ইউপিডিএফ নেতা আনন্দ প্রকাশ চাকমাসহ সব রাজবন্দীকেও মুক্তি দেওয়ার দাবি জানান।