প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনাকে হত্যার হুমকি দেওয়ায় রাজশাহী জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সাঈদ ওরফে চাঁদের বিচার দাবি করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) শিক্ষক সমিতির নেতারা। সমিতির এক মানববন্ধনে অংশ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. আখতারুজ্জামান বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার হুমকি তাদের (বিএনপি) নীলনকশা প্রণয়ন ও সেটির কার্যক্রম শুরু করারই একটি ইঙ্গিত। তারা হয়তো অগ্নিসন্ত্রাসের কৌশল পরিবর্তন করেছে। অগ্নিসন্ত্রাসেরই একটি নতুন সংস্করণ হলো এ ধরনের হত্যার হুমকি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার হুমকির প্রতিবাদে আজ সোমবার দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে শিক্ষক সমিতির মানববন্ধন হয়। সেখানে শিক্ষক সমিতির নেতাসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের আওয়ামী লীগপন্থী শিক্ষকদের সংগঠন নীল দলের নেতারা অংশ নেন। বর্তমানে শিক্ষক সমিতির ১৫ পদের ১৪টিতেই (সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকসহ) আছেন নীল দলের শিক্ষকেরা।
মানববন্ধনে উপাচার্য ও শিক্ষক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. আখতারুজ্জামান বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে এমন ভাষায় হত্যার হুমকি দেওয়া হয়েছে, যার নিন্দা জানানোর ভাষা আমাদের জানা নেই। আমি এর তীব্র নিন্দা জানাই। এটি শুধু একটি অঞ্চলের নিম্নপর্যায়ের কোনো নেতার বক্তব্য নয়, বরং এটি গভীর ষড়যন্ত্রের অংশ ও তার বহিঃপ্রকাশ।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য (শিক্ষা) ও শিক্ষক সমিতির সাবেক সভাপতি এ এস এম মাকসুদ কামাল বলেন, বিএনপিকে কানাডার আদালতে সন্ত্রাসী রাজনৈতিক দল হিসেবে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। এখন লন্ডনে বসে এই দলকে যে পরিচালনা করছে, সেই তারেক জিয়াকে একজন সন্ত্রাসী হিসেবে সেখানে উল্লেখ করা হয়েছে। দলটি বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার বন্ধ করতে ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারি করেছিল। যে ব্যক্তি প্রধানমন্ত্রীকে হত্যার হুমকি দিয়েছে, সেটি এককভাবে ওই ব্যক্তির কথা নয়, এটি একটি রাজনৈতিক দলের ভাষা। এ ধরনের রাজনৈতিক দলের রাজনীতি করার সুযোগ আছে কি না, সেই কথাও ভাবার সময় এসেছে।
সহ-উপাচার্য (প্রশাসন) মুহাম্মদ সামাদ বলেন, ‘বারবার হত্যার অপচেষ্টা হলেও সৃষ্টিকর্তা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিজ হাতে বাঁচিয়ে এনেছেন। বঙ্গবন্ধুকন্যাকে হত্যার যেকোনো ষড়যন্ত্র ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকসমাজ রুখে দেবে। জীবন দিয়ে হলেও বঙ্গবন্ধুকন্যাকে রক্ষার চেষ্টা করব। যে ব্যক্তি শেখ হাসিনাকে হত্যার হুমকি দিয়েছে, তাকে অবিলম্বে গ্রেপ্তার করতে হবে।’
শিক্ষক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক এবং নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য এম অহিদুজ্জামান বলেন, একই খুনি চক্র শেখ হাসিনাকে বারবার হত্যার চেষ্টা করেছে। সেই খুনির দলের নেত্রী খালেদা জিয়া যুদ্ধাপরাধীদেরও দেশপ্রেমিক বলেছিলেন। তিনি আরও বলেন, যাদের নির্দেশে বিএনপির সেই তথাকথিত নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার হুমকি দিয়েছে, তাদের খুঁজে বের করে সমূলে উৎপাটন করতে হবে।
সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের সাবেক ডিন ও শিক্ষক সমিতির সাবেক সদস্য সাদেকা হালিম বলেন, রাজনীতিতে কি কোনো শিষ্টাচার নেই? শিষ্টাচারবহির্ভূত এমন একটি বক্তব্য দেওয়া হলো, যেখানে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে কবরস্থানে পাঠানোর কথা বলা হয়েছে। চীন, যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতকে ব্যালেন্স করে প্রধানমন্ত্রী যখন এগিয়ে যাচ্ছেন, সেই সময়ে এ ধরনের বক্তব্য কার উসকানিতে দেওয়া হচ্ছে, সেটা অবশ্যই দেখতে হবে।
শিক্ষক সমিতির সভাপতি নিজামুল হক ভূইয়ার সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক জিনাত হুদার সঞ্চালনায় সমাবেশে অন্যদের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ মমতাজ উদ্দিন আহমেদ, নীল দলের আহ্বায়ক আবদুস ছামাদ, শিক্ষক সমিতির সদস্য জিয়াউর রহমান, কে এম সাইফুল ইসলাম খান, আবু জাফর মো. শফিউল আলম ভূঁইয়া, চন্দ্রনাথ পোদ্দার, সাবেক যুগ্ম সম্পাদক আবদুর রহিম, সাবেক প্রক্টর এ কে এম গোলাম রব্বানী, সিন্ডিকেট সদস্য আবুল মনসুর আহাম্মেদ প্রমুখ বক্তব্য দেন।