বিডিআর বিদ্রোহের ১৪ বছর

‘বুকে পাথর চেপে বেঁচে আছি’

বিডিআর বিদ্রোহে শহীদ সেনা কর্মকর্তাদের প্রতি আজ শনিবার রাজধানীর বনানী সামরিক কবরস্থানে শ্রদ্ধা নিবেদন ও দোয়া করেন তাঁদের স্বজনেরা
ছবি: প্রথম আলো

হত্যার ১৪ বছর হয়ে গেল। ছেলে হত্যার বিচার তো পেলামই না। এত দিন পর এসেও জানতে পারলাম না কারা, কেন আমার ছেলেকে হত্যা করলেন।

আজ ২৫ ফেব্রুয়ারি বিডিআর বিদ্রোহের ১৪ বছর পূর্তিতে রাজধানীর বনানী সামরিক কবরস্থানে শহীদদের প্রতি আরও অনেকের মতো শ্রদ্ধা জানাতে আসেন মেজর মোহাম্মদ মাকসুম উল হাকিমের মা রওশনারা বেগম। এ সময় তাঁর এই ছেলেকে হত্যার বিচার না পেয়ে এভাবে ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি।

রওশনারা বেগম প্রথম আলোকে বলেন, ‘ওর বাবা ক্যানসার আক্রান্ত ছিলেন। আর মাকসুমের স্ত্রী ছিলেন তিন মাসের অন্তঃসত্ত্বা। বাবা ও স্ত্রীর পাশে থাকতেই আমার ছেলে বিডিআর বিদ্রোহের তিন মাস আগে সিলেট থেকে বদলি হয়ে পিলখানায় আসে।’

বিদ্রোহের ঘটনায় নিহত হন মোট ৭৪ জন। দুই দিনব্যাপী ওই বিদ্রোহে নিষ্ঠুর আচরণ ও পাশবিক নির্যাতনের শিকার হন বিডিআরের বিভিন্ন পর্যায়ে দায়িত্ব পালনরত অনেক কর্মকর্তা ও তাঁদের পরিবারের সদস্যরা।

ছেলে হত্যার বিচার চাইতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন রওশনারা। পরে বলেন, ‘আমি ছেলে হত্যার বিচার দেখে যেতে পারব কি না জানি না।’

রওশনারা বেগম অন্যের সাহায্য ছাড়া চলাফেরা করতে পারেন না। তাই বড় ছেলে খায়রুল এনামকে সঙ্গে নিয়ে বনানী কবরস্থানে আসেন তিনি।

ঘটনা শুরু হলে মাকসুম পিলখানার একটি বাথরুমে লুকায়। সেখানে গিয়ে ওরা আমার ভাইকে বুকে গুলি করে হত্যা করে।
খায়রুল এনাম, শহীদ মেজর মোহাম্মদ মাকসুম উল হাকিমের ভাই

খায়রুল এনাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘ঘটনা শুরু হলে মাকসুম পিলখানার একটি বাথরুমে লুকায়। সেখানে গিয়ে ওরা আমার ভাইকে বুকে গুলি করে হত্যা করে।’ তিনি জানান, মাকসুম দরবার হলের অপারেশন কর্মকর্তা ছিলেন। এ ছাড়া ছিলেন প্যারেড কমান্ডার।

এদিকে রওশনারার মতোই ছেলের কবরে শ্রদ্ধা জানাতে এসেছিলেন কর্নেল কুদরত ইলাহীর বাবা হাবিবুর রহমান। তিনি বলেন, ‘১৪ বছর বুকে পাথর চেপে বেঁচে আছি। ছেলের শোকে ঘটনার তিন বছর পর মারা গেছেন ওর মা। ওর মা বিচার দেখে যেতে পারেনি। আমি বেঁচে থাকতে ছেলে হত্যার বিচার দেখে যেতে পারব কি না জানি না।’

আজ থেকে ১৪ বছর আগে ২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি বিডিআরের (বর্তমানে বিজিবি) সদর দপ্তর পিলখানাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বিদ্রোহ হয়। পিলখানায় নির্মম হত্যাযজ্ঞের শিকার হন বিডিআরের তৎকালীন মহাপরিচালক মেজর জেনারেল শাকিল আহমেদসহ ৫৭ সেনা কর্মকর্তা। বিদ্রোহের ঘটনায় নিহত হন মোট ৭৪ জন। দুই দিনব্যাপী ওই বিদ্রোহে নিষ্ঠুর আচরণ ও পাশবিক নির্যাতনের শিকার হন বিডিআরের বিভিন্ন পর্যায়ে দায়িত্ব পালনরত অনেক কর্মকর্তা ও তাঁদের পরিবারের সদস্যরা।

পিলখানায় বিডিআর বিদ্রোহ ও নৃশংস হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় করা দুই মামলার একটি (হত্যা মামলা) এখন আপিল বিভাগে শুনানির অপেক্ষায় আছে। অপরটির (বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে করা) বিচার শেষ হয়নি। মামলাটি এখনো বিচারিক আদালতে সাক্ষ্য গ্রহণ পর্যায়ে রয়েছে।