দায়িত্ব পালনের মাঝপথে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যানকে অপসারণের ঘটনায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।
সংস্থাটির দাবি, নদী রক্ষায় সরকারের অঙ্গীকারের সঙ্গে এই পদক্ষেপ সাংঘর্ষিক। সংবিধিবদ্ধ সংস্থা হলেও, জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনকে কার্যত অকার্যকর করে রাখা হয়েছে।
আজ শুক্রবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে সংস্থাটি এসব কথা বলে।
বিবৃতিতে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, নদী রক্ষা কমিশন কেবল সরকারকে পরামর্শ দিতে পারে। দখলদার আর দূষণকারীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষমতা তাদের নেই। আবার (সরকারের) কমিশনের প্রতিবেদন বা পরামর্শ মানার বাধ্যবাধকতাও নেই। অথচ এই ভূখণ্ডের চরিত্র, দেশের মানুষের জীবন ও জীবিকার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এই কমিশনকে শক্তিশালী করার বিকল্প নেই।
উল্লেখ্য, মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান মনজুর আহমেদ চৌধুরীকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দিয়েছে সরকার। ১৮ অক্টোবর তাঁর চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল করা হয়েছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, মনজুর আহমেদ চৌধুরীর চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের অবশিষ্ট মেয়াদ জনস্বার্থে বাতিল করা হলো।
মনজুর আহমেদ চৌধুরী দায়িত্বভার গ্রহণের পর থেকে নদী দখল নিয়ে বক্তব্যের কারণে বিভিন্ন সময় আলোচনায় এসেছিলেন। গত ২৪ সেপ্টেম্বর বিশ্ব নদী দিবস উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে তিনি সরাসরি নাম না উল্লেখ করে বর্তমান শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনির সমালোচনা করেন।
সদ্য সাবেক চেয়ারম্যানের সাহসী অবস্থানের কারণে দেশবাসী কিছুটা আশাবাদী হওয়ার সুযোগ পেয়েছিল বলে মনে করেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক। তিনি বলেন, নদী কারা দখল করছে, ধ্বংস করছে, দূষণ করছে, সেটা জানতে পারছিলাম। একটা জনমত তৈরি হওয়ার আবহ দেখা যাচ্ছিল। বেগবান হচ্ছিল নদী রক্ষার আন্দোলন।
ইফতেখারুজ্জামান বলেন, দীর্ঘদিন ধরে অকার্যকর একটি সংস্থার প্রধান যখন সুস্পষ্টভাবে দোষীদের চিহ্নিত করেন, সেটি আশাবাদী হওয়ার মতো। দেশের মানুষ আশা করেছিল, সরকার কমিশন চেয়ারম্যানের সুস্পষ্ট অভিযোগগুলো আমলে নেবে। তদন্ত হবে, দোষীরা জবাবদিহির আওতায় আসবে। বাস্তবে সেটা তো হলোই না; বরং সরে যেতে হলো কমিশন প্রধানকেই।
সরকার দোষীকে দোষী বলার ক্ষমতাকেও নিয়ন্ত্রণ করতে চাইছে মন্তব্য করে ইফতেখারুজ্জামান বলেন, সরকার বলছে ‘জনস্বার্থে’ নদী কমিশনের চেয়ারম্যানের নিয়োগ চুক্তি বাতিল করা হয়েছে। প্রভাবশালীদের স্বার্থরক্ষাকে এখন জনস্বার্থ বিবেচনা করা হচ্ছে কি না, সেই প্রশ্ন তোলেন তিনি।
কমিশনের চেয়ারম্যানকে অপসারণের প্রভাব সুদূরপ্রসারী বলে মন্তব্য করে ইফতেখারুজ্জামান বলেন, (সরকার) শুধু নদী হত্যাকারীদের দায়মুক্তি দিয়ে ক্ষান্ত হচ্ছে না; বরং তাদের যেন দুর্নাম না হয়, কেউ যেন তাদের দিকে আঙুল না তোলে, সেই ব্যবস্থা করা হচ্ছে। তিনি সরকারের প্রতি মনজুর আহমেদ চৌধুরীকে অপসারণের সিদ্ধান্ত ফিরিয়ে নেওয়ার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, যারা নদী দখল করছে, অবৈধভাবে বালু তুলে স্থাপনা তৈরি করে নদীকে হত্যা করছে, তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।