জার্মানির মিউনিখে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির বৈঠকের কারণে রাশিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কে কোনো প্রভাব পড়বে না বলে মনে করেন ঢাকায় নিয়োজিত রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত আলেকজান্ডার মান্টিটস্কি। আজ বৃহস্পতিবার সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবে ডিকাব টক অনুষ্ঠানে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলনে অংশ নেওয়ার ফাঁকে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করবেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট। দুই শীর্ষ নেতার বৈঠক ঢাকা–মস্কো সম্পর্কে প্রভাব ফেলবে কি না, জানতে চাইলে রাষ্ট্রদূত আলেকজান্ডার মান্টিটস্কি বলেন, ‘বাংলাদেশের সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়’ নীতিকে আমরা স্বাগত জানাই। আমরা এখানে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যুদ্ধ করছি না। তাদের নিজস্ব অর্থনৈতিক স্বার্থ রয়েছে। আমাদেরও বাংলাদেশের সঙ্গে অর্থনৈতিক সহযোগিতা রয়েছে। আমরা আশা করি, ওই বৈঠকের কোনো প্রভাব আমাদের সম্পর্কে পড়বে না।’
মান্টিটস্কি আরও বলেন, ইউক্রেন তাদের দেওয়া যুদ্ধ বন্ধের প্রস্তাবের পক্ষে সমর্থন আদায়ের জন্য বিভিন্ন দেশের সঙ্গে আলোচনা করছে। এটা ভণ্ডামি ছাড়া কিছু নয়। রাশিয়া ওই প্রস্তাব সমর্থন করে না।
‘ভারতের চোখ দিয়ে দেখি না’
বাংলাদেশের ক্ষেত্রে ভারতের নীতি রাশিয়া অনুসরণ করে কি না, জানতে চাইলে রুশ রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘আমরা আমাদের নীতি অনুসরণ করি। রাশিয়া ও ভারতের মধ্যে অনেক বিষয়ে মতপার্থক্য আছে এবং আমরা এখানে আমাদের নীতি অনুসরণ করি। আমরা বাংলাদেশকে ভারতের চোখে দেখি না।’
অন্য এক প্রশ্নের জবাবে আলেকজান্ডার মান্টিটস্কি বলেন, ‘আমাদের অবস্থান হচ্ছে বাংলাদেশ কী করবে, সেটি যুক্তরাষ্ট্র বা পশ্চিমা দেশগুলোর বলা উচিত নয়। বাংলাদেশিরা ঠিক করবে কার সঙ্গে কীভাবে সম্পর্ক রাখবে এবং এটি বাংলাদেশের ইচ্ছার ওপর নির্ভর করবে। বাংলাদেশে হস্তক্ষেপ করা তাদের উচিত নয়।’
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন
রুশ রাষ্ট্রদূত জানান, রাশিয়া চায় রোহিঙ্গারা তাদের নিজ ভূমিতে ফেরত যাক। আলেকজান্ডার মান্টিটস্কি বলেন, ‘আমরা মনে করি, অন্য কোনো দেশ বা এনজিও এই প্রক্রিয়ায় যেন হস্তক্ষেপ না করে। অবশ্য এখন অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে এবং মিয়ানমারে সমস্যা তৈরি হয়েছে। প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া কখন শুরু হবে, সেটি এখন অনিশ্চিত।’
রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত বলেন, অনেক দেশ, যেমন যুক্তরাষ্ট্র বা জাপান প্রস্তাব দিয়েছে তারা রোহিঙ্গাদের নিয়ে যাবে। এর মধ্যে তারা কতজন রোহিঙ্গা নিয়ে গেছে, সেই প্রশ্ন ছুড়ে দেন তিনি।
মিয়ানমারের সামরিক সরকারের কাছে রাশিয়া কেন অস্ত্র বিক্রি করে, সে প্রশ্নের জবাবে মান্টিটস্কি বলেন, ‘আমরা অস্ত্র সরবরাহ করছি। কিন্তু একই সঙ্গে ভারত, চীনও অস্ত্র সরবরাহ করছে। আমরা বাংলাদেশকেও অস্ত্র সরবরাহ করতে প্রস্তুত আছি। এগুলো উন্নত মানের অস্ত্র এবং ইউক্রেন যুদ্ধ দেখলে সেটি বোঝা যায়। আমরা আগেও বাংলাদেশকে অস্ত্র সরবরাহ করেছি। বিমান ও আরও কিছু।’
এক প্রশ্নের জবাবে রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত বলেন, তাঁরা রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে প্রত্যাবাসন চান। এ নিয়ে তাঁদের কোনো দ্বিধা নেই। তবে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া কখন শুরু হবে, সেটি এখন অনিশ্চিত।
মিয়ানমারের সমস্যার কারণে কেউ লাভবান হচ্ছে, কিন্তু ভারত বা বাংলাদেশ লাভবান হচ্ছে না। কেউ এ সমস্যা তৈরি করেছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ফিলিস্তিন ইস্যুতে পশ্চিমারা দ্বিমুখী নীতি (ডাবল স্ট্যান্ডার্ড) নিয়েছে। তারা ইউক্রেন ইস্যুতে অনেক সোচ্চার, তবে গাজায় গণহত্যা নিয়ে নিশ্চুপ রয়েছে। ফিলিস্তিন ইস্যুতে বাংলাদেশ ও রাশিয়া একই মনোভাব পোষণ করে থাকে।
ডিকাব সভাপতি নূরুল ইসলামের (হাসিব) সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তৃতা দেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক আশিকুর রহমান (অপু)।