ডিকাব টকে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলছেন চীনের রাষ্ট্রদূত লি জিমিং। গতকাল জাতীয় প্রেসক্লাবে
ডিকাব টকে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলছেন চীনের রাষ্ট্রদূত লি জিমিং। গতকাল জাতীয় প্রেসক্লাবে

ডিকাব টক

বাংলাদেশের জ্বালানিসংকটে চীন অলস বসে থাকবে না

ঢাকায় চীনের রাষ্ট্রদূত লি জিমিং বলেছেন, বাংলাদেশে জ্বালানিসংকটের কারণে জরুরি পরিস্থিতির উদ্ভব হলে চীন প্রয়োজনীয় সহায়তা দেবে।

রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে চলমান যুদ্ধের কারণে বিশ্বের অনেক দেশের মতো বাংলাদেশও জ্বালানিসংকটে পড়েছে। জ্বালানিসংকট সামাল দিতে চীনের সহায়তা চেয়েছে বাংলাদেশ। ঢাকায় চীনের রাষ্ট্রদূত লি জিমিং বলেছেন, জরুরি পরিস্থিতির উদ্ভব হলে চীন চুপচাপ বসে থাকবে না, বাংলাদেশকে প্রয়োজনীয় সহায়তা দেবে।

গতকাল বুধবার জাতীয় প্রেসক্লাবে ডিপ্লোমেটিক করেসপন্ডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশ (ডিকাব) আয়োজিত ‘ডিকাব টক’ অনুষ্ঠানে চীনের রাষ্ট্রদূত লি জিমিং এ কথা বলেন।

বাংলাদেশে জ্বালানির চরম সংকট দেখা দিলে চীন বাংলাদেশের পাশে থাকবে কি না এবং যেকোনো উৎস থেকে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস রপ্তানি করবে কি না; সাংবাদিকের এমন প্রশ্নের জবাবে লি জিমিং বলেন, চীন এলএনজিসহ নানা ধরনের জ্বালানি আমদানি করে থাকে। তাই এসব জ্বালানি বাংলাদেশে রপ্তানির মতো অবস্থা চীনের নেই। যদি কোনো জরুরি পরিস্থিতি তৈরি হয়, তবে সব সময়ের মতো চীন চুপচাপ অলস বসে না থেকে পদক্ষেপ নেবে। তিনি জানান, বাংলাদেশ সরকারের কিছু প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে অনুরোধ করা হয়েছে। বাংলাদেশের অনুরোধের বিষয়টি বেইজিংকে জানানো হয়েছে। বাংলাদেশকে পরিবেশবান্ধব জ্বালানি খাতে সহযোগিতায় চীন আগ্রহী। কারখানা ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পরিবেশবান্ধব জ্বালানির লক্ষ্যে সোলার প্যানেল প্রতিষ্ঠায় চীনের কোম্পানি বিনিয়োগ করতে চায়।

বাংলাদেশের জন্য চীনের ঋণ ‘ফাঁদ’ নয়

ঢাকায় নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত লি জিমিং বলেছেন, চীন বাংলাদেশকে যে ঋণ দিয়েছে, তা কোনোভাবেই ‘ঋণফাঁদ’ নয়। সুতরাং এটা নিয়ে কথা বলা অমূলক। তিনি বলেন, বাংলাদেশের অবস্থা শ্রীলঙ্কার চেয়ে অনেক অনেক ভালো। শ্রীলঙ্কার চেয়ে বাংলাদেশে চীনা ঋণও অনেক কম। এ ছাড়া বাংলাদেশে শুধু চীনই ঋণ দেয় না, আরও অনেক দেশ ঋণ দেয়। এখানে চীনা ঋণ মাত্র ৬ শতাংশ।

লি জিমিং জানান, বৈশ্বিক ঋণের ১০ শতাংশ চীনের। আর সেটার সঙ্গে তুলনা করলে বাংলাদেশে চীনা ঋণের পরিমাণ কম। তিনি বলেন, শ্রীলঙ্কায় পশ্চিমা বাণিজ্যিক ও বহুজাতিক আন্তর্জাতিক আর্থিক সংস্থার ঋণ বেশি। সে দেশে মোট বৈদেশিক ঋণের ১০ শতাংশের কম চীনের ঋণ। সম্ভবত তেমন পরিস্থিতি বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও। বাংলাদেশের বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ অন্য দেশের চেয়ে কম।

বাংলাদেশের অর্থ মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে চীনা রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘বাংলাদেশে মোট বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ জিডিপির ৩৬ শতাংশ, যা অন্য অনেক দেশের চেয়ে কম, এমনকি উন্নত দেশগুলোর চেয়েও। যুক্তরাষ্ট্রের ঋণের পরিমাণ ৩১ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার। অথচ তাদের জিডিপি মাত্র ২৪ ট্রিলিয়ন ডলার। সুতরাং আপনারা নিজেরাই পরিস্থিতি হিসাব করে দেখতে পারেন।’ রাষ্ট্রদূতের মতে, যুক্তরাষ্ট্রের মতো জাপান এবং অন্যান্য পশ্চিমা দেশের চিত্রও এ রকম।

লি জিমিং বলেন, ‘চীনা বাজারে ৯৮ শতাংশ বাংলাদেশি পণ্য শুল্ক সুবিধা পাচ্ছে। আগামী দিনে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য সহযোগিতা আরও বাড়বে বলে আশা করছি।’

স্থিতিশীল বাংলাদেশ চায় চীন

উন্নয়ন ও স্থিতিশীলতার বিষয়ে সাংবাদিকেরা জানতে চাইলে লি জিমিং বলেন, চীন যেকোনো সমস্যার ক্ষেত্রে শান্তিপূর্ণ আলোচনার মাধ্যমে সমাধানে বিশ্বাস করে। চীন সব সময় স্থিতিশীল বাংলাদেশ দেখতে চায়। চীন বিশ্বাস করে, বাংলাদেশ তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়াদি শান্তিপূর্ণ ও গণতান্ত্রিক উপায়ে সমাধান করবে। এমনটাই চীনের চাওয়া।

রাষ্ট্রদূত বলেন, অনেক চীনা কোম্পানি বাংলাদেশে বিনিয়োগে আগ্রহী। চীনের মানুষ যেমন বাংলাদেশকে পছন্দ করে, তেমনি চীনের ব্যবসায়ীরাও। যেহেতু ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশ নিয়ে আগ্রহ রয়েছে, সে ক্ষেত্রে চীন চায় বাংলাদেশে স্থিতিশীলতা বজায় থাকুক।

বর্তমান বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে বাংলাদেশে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমছে। লি জিমিং বলেন, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সাশ্রয়ে বাংলাদেশ চাইলে ডলারের পরিবর্তে চীনের মুদ্রায় বাণিজ্যিক লেনদেন করতে পারে। চীনে রপ্তানি বাড়ানোর জন্য বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা অবদান রাখতে পারেন। এতে বাংলাদেশ সুফলও পাবে।

ডিপ্লোমেটিক করেসপন্ডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশ (ডিকাব) আয়োজিত অনুষ্ঠানে সংগঠনের সভাপতি রেজাউল করিম ও সাধারণ সম্পাদক এ কে এম মঈনউদ্দিন বক্তব্য দেন।