‘বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্ররাজনীতি থাকবে। এই রাজনীতি হবে শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ের। কাউকে দমন করে কিংবা দখলদারত্ব কায়েম করার রাজনীতি নয়। কারণ, একমাত্র ছাত্ররাজনীতিই পারে শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ পুরো ক্যাম্পাসের অধিকার নিশ্চিত করতে।’
আজ বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের এক আলোচনা সভায় উপস্থিত হয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক ও অরাজনৈতিক সংগঠনের বক্তারা এসব কথা বলেন। শিক্ষার্থীদের সংগঠন স্টুডেন্ট অ্যালায়েন্স ফর ডেমোক্রেসি বেলা আড়াইটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান অনুষদে এই সভার আয়োজন করে। এতে বিপ্লবী ছাত্র–যুব আন্দোলন, ছাত্র মৈত্রী, ছাত্রদল, ইসলামী ছাত্রশিবির, ছাত্র ফেডারেশন, ছাত্র অধিকার, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদসহ ১৬ সংগঠনের প্রতিনিধি বক্তব্য দেন। আলোচনার বিষয় ছিল ‘চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র রাজনীতি: সংকট ও সম্ভাবনা।’
সভায় বিপ্লবী ছাত্র–যুব আন্দোলনের ঈশা দে বলেন, ‘অসুস্থ রাজনীতি যেটা এতদিন চলে আসছিল সেটা সুস্থ রাজনীতি দিয়ে পরিবর্তন সম্ভব। ১৯৪৯ সাল থেকে ১৯৭৬ সাল পর্যন্ত আমরা গণচীনে দেখেছি শ্রমিক, কৃষক ও মেহনতি জণগণ তাদের ক্ষমতা প্রতিষ্ঠা করেছে। তাদের উদাহরণ দিয়ে বলতে চাই, এই অস্থির প্রতিযোগিতাময় এবং মুনাফালোভীদের রাষ্ট্রব্যবস্থা ভেঙে সংখ্যাগরিষ্ঠ শ্রমিক-কৃষক, নিপীড়িত রাষ্ট্রব্যবস্থা কায়েম করা সম্ভব।’
পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের (ইউপিডিএফ–সমর্থিত) সভাপতি রোনাল চাকমা বলেন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় বহুজাতি এবং বহুভাষার সম্মেলনের কেন্দ্র। এখানে সাত শতাধিক পাহাড়ি শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছে। গত জুলাই আন্দোলনে পাহাড়ি শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেছে। চলতি বছর যে ডামি নির্বাচন হয়েছে, সেই নির্বাচনে খাগড়াছড়িতে ১৯টি ভোটকেন্দ্র আর রাঙামাটিতে আটটি ভোটকেন্দ্রে ভোটার ছিল শূন্য।
ইসলামী ছাত্র মজলিসের সভাপতি সাকিব মাহমুদ বলেন, যাঁরা আজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ চাচ্ছেন, তাঁদের চাওয়া স্বাভাবিক; কিন্তু এই চাওয়ায় যৌক্তিকতার চেয়ে ভীতি বা শঙ্কার জায়গাটা বেশি। বিগত দশকগুলোতে শুধু ছাত্রলীগ নয়, রাজনৈতিক দলগুলো যে যখন ক্ষমতায় এসেছে, তারা রাজনীতি এমনভাবে চর্চা করেছিল সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর একধরনের বিদ্বেষ ছড়িয়ে গিয়েছিল। সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করতে হলে প্রশাসনের নিরপেক্ষ হওয়ার বিকল্প নেই।
সভায় নারী অঙ্গনের প্রতিনিধি সুমাইয়া শিকদার বলেন, ‘আমাদের দাবি থাকবে বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌন নিপীড়ন সেল কার্যকর করা, সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং হলে ফেরার যে সান্ধ্যকালীন আইন আছে, সেটি বাতিল করা।’
ছাত্রদল প্রতিনিধি শাহরিয়ার ফারুক ভূঁইয়া বলেন, ‘যারা বিগত বছরগুলোতে ক্ষমতার সুবিধাভোগী ছিলেন তাঁরাই ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ চান। বিপরীতে যাঁরা আক্রান্ত হয়েছেন, তাঁরা ছাত্ররাজনীতি চান। ক্যাম্পাসে আমরা দখলদারত্বের রাজনীতি করব না। ফ্যাসিবাদ আবার মাথাচাড়া দিলে আপনারা সবাই প্রতিরোধ করবেন এবং যদি সেটি আমরাও হই, আপনারা প্রতিরোধ করবেন। আমরা সুস্থ ও মেধাবিকাশের রাজনীতি চাই।’
বিপ্লবী ছাত্রমৈত্রীর আহ্বায়ক জশদ জাকির বলেন, ‘আমি মনে করি না পৃথিবীর আলো, বাতাস ও বালুকণাও রাজনীতি–বহির্ভূত। ছাত্ররাজনীতি নয়, লেজুড়বৃত্তিক ছাত্ররাজনীতিই নিষিদ্ধ করতে হবে।’
ইসলামী ছাত্রশিবির বিশ্ববিদ্যালয় শাখার প্রচার সম্পাদক সাঈদ বিন হাবিব বলেন, ‘কোন দল আদর্শের রাজনীতি প্রচার করে তা শিক্ষার্থীরাই খুঁজে নেবে; কারও ওপর চাপিয়ে দেওয়া যাবে না। প্রযুক্তির বাংলাদেশে কাউকে ট্যাগের রাজনীতি দিয়ে দমিয়ে রাখা যাবে না।’
স্টুডেন্ট অ্যালায়েন্স ফর ডেমোক্রেসির আহ্বায়ক জোবাইরুল হাসান এই অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন। সংগঠনটির মুখপাত্র জগলুল আহমেদের সঞ্চালনায় এতে আরও বক্তব্য দেন ছাত্র ফেডারেশনের আজাদ হোসেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধি রিজাউর রহমান, বিশ্ববিদ্যালয় রাষ্ট্রচিন্তার প্রতিনিধি আল মাসনুন, গাউছিয়া কমিটির বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক মুনতাসির মাহমুদ, পার্বত্য চট্টগ্রাম ছাত্র পরিষদের তারেক মনোয়ার, ক্লাব অ্যালায়েন্স অব চিটাগাং ইউনিভার্সিটির প্রতিনিধি সাজ্জাদ হোসেন, ছাত্র অধিকার পরিষদের প্রতিনিধি তামজীদ উদ্দিন, ইসলামী ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধি আমিনুল ইসলাম প্রমুখ।