প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আজ সোমবার ‘স্বাধীনতা পুরস্কার-২০২৪’ প্রদান অনুষ্ঠানে
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আজ সোমবার ‘স্বাধীনতা পুরস্কার-২০২৪’ প্রদান অনুষ্ঠানে

মানুষের কল্যাণে নীরবে কাজ করা ব্যক্তিদের খুঁজে সম্মানিত করুন: প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নীরবে-নিভৃতে থেকে মানুষের কল্যাণে কাজ করে যাওয়া নিবেদিতপ্রাণ ব্যক্তিদের খুঁজে বের করে পুরস্কারে সম্মানিত করার জন্য সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

প্রধানমন্ত্রী আজ সোমবার সকালে জাতীয় পর্যায়ে নিজ নিজ ক্ষেত্রে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ১০ বিশিষ্ট ব্যক্তির মধ্যে ‘স্বাধীনতা পুরস্কার-২০২৪’ প্রদানকালে প্রধান অতিথির ভাষণে এই আহ্বান জানান। রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ দেশের সর্বোচ্চ জাতীয় বেসামরিক এই পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদানের জন্য যাঁরা এবার স্বাধীনতা পুরস্কার পেয়েছেন, তাঁদের সবাইকে অভিনন্দন জানান প্রধানমন্ত্রী।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি আপনাদের আহ্বান জানাচ্ছি, যাঁরা বিভিন্ন গ্রামগঞ্জে ও অন্যান্য এলাকায় নিবেদিতপ্রাণ হয়ে কাজ করে চলেছেন, তাঁদের খুঁজে বের করে পুরস্কার দিয়ে সম্মানিত করার জন্য। তাঁদের জন্য নয়, বরং জনগণের কল্যাণের জন্য। কারণ, তাঁরা কখনই সামনে আসেন না বা আসতে চান না। নিজস্ব উদ্যোগে বা স্বপ্রণোদিত হয়ে যাঁরা মানুষের কল্যাণে বিভিন্ন অবদান রেখে যাচ্ছেন, তাঁদের পুরস্কৃত করতে পারাটাই সবচেয়ে বড় কথা।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এই পুরস্কারপ্রাপ্তির ফলে মানুষের জন্য কাজ করা ও দেশের জন্য কাজ করার ক্ষেত্রে আরও অনেকে অনুপ্রাণিত হবেন। এবং দেশের কল্যাণে কাজ করবেন। সেটাই আমরা আশা করি।’

সরকারপ্রধান তাঁর ভাষণে বিগত ১৫ বছর দেশ শাসনে আওয়ামী লীগ সরকারের সাফল্য তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘অন্তত এইটুকু দাবি করতে পারি, বাংলাদেশের সেই হারানো গৌরব আমরা ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছি। মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের পর যে মর্যাদা বাংলাদেশ অর্জন করেছিল এবং ৭৫-এ জাতির পিতাকে সপরিবার হত্যার পর যা হারিয়ে যায়।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘জাতির পিতা যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ গড়ে তুলে দেশকে স্বল্পোন্নত দেশের পর্যায় রেখে যান। সেখান থেকে আমরা আরও এক ধাপ উত্তরণ ঘটিয়ে দেশকে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা এনে দিতে পেরেছি। ২০২৬ সাল থেকে যা কার্যকর হবে। আজ জাতির পিতার ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ বিশ্ব ঐতিহ্যের প্রামাণ্য দলিলে স্থান পেয়েছে। জয় বাংলা আবার ফিরে এসে এখন আমাদের জাতীয় স্লোগানে পরিণত হয়েছে।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘ইতিহাস বিকৃতির যত চক্রান্তই হোক না কেন, আজকের নতুন প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানতে চায়, বুঝতে চায়। সেই প্রেরণা নিয়েই সামনের দিকে চলতে চায়। এবং জীবনকে গড়ে তুলতে চায়। আর এটাই আমাদের সামনে সবচেয়ে বড় আশার বাণী।’

১৫ মার্চ মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ বছরের স্বাধীনতা পুরস্কার বিজয়ী ১০ জনের নাম ঘোষণা করে। পুরস্কারপ্রাপ্তরা হলেন, স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধে কাজী আবদুস সাত্তার বীর প্রতীক, বীর মুক্তিযোদ্ধা ফ্লাইট সার্জেন্ট মো. ফজলুল হক (মরণোত্তর) ও বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ আবু নঈম মো. নজিব উদ্দীন খান (খুররম) (মরণোত্তর)। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে ড. মোবারক আহমদ খান। চিকিৎসাবিদ্যায় ডা. হরিশংকর দাশ। সংস্কৃতিতে মোহাম্মদ রফিকউজ্জামান। ক্রীড়াক্ষেত্রে ফিরোজা খাতুন। সমাজ বা জনসেবায় অরন্য চিরান, বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক ডা. মোল্লা ওবায়েদুল্লাহ বাকী ও এস এম আব্রাহাম লিংকন।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন পুরস্কার বিতরণী পর্বটি সঞ্চালনা করেন। তিনি পুরস্কার বিজয়ীদের সংক্ষিপ্ত জীবনবৃত্তান্ত তুলে ধরেন। স্বাধীনতা পুরস্কার-২০২৪ বিজয়ীদের পক্ষে মোহাম্মদ রফিকউজ্জামান অনুষ্ঠানে নিজস্ব অনুভূতি ব্যক্ত করেন।

পুরস্কার হিসেবে প্রত্যেককে ১৮ ক্যারেট মানের ৫০ গ্রাম স্বর্ণের পদক, সম্মানীর অর্থের চেক ও একটি সম্মাননাপত্র দেওয়া হয়।

অনুষ্ঠানে মন্ত্রিপরিষদের সদস্য, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা, সংসদ সদস্য, ঊর্ধ্বতন বেসামরিক-সামরিক কর্মকর্তা, আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে দেশবরেণ্য কবি-সাহিত্যিক-লেখকসহ দেশের বিশিষ্ট নাগরিকেরা উপস্থিত ছিলেন।