দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি কম ছিল। সেই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য হয়তো উপজেলা নির্বাচনে সরকারি দল তাদের প্রতীক দেয়নি। সবার জন্য উন্মুক্ত করে দিয়েছে। হয়তো অন্যান্য দলকে আনাও তাদের লক্ষ্য ছিল। কিন্তু কোনো লক্ষ্যই অর্জন হয়নি; বরং জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যতটুকু ভোট পড়েছে, উপজেলায় তার চেয়েও কম ভোট পড়েছে।
উপজেলা নির্বাচন ঘিরে সরকারি দল নিজেদের মধ্যে অর্থাৎ দলের ভেতরে শৃঙ্খলা আনার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু সেটাও হয়নি। সেই দুর্বলতাও দৃশ্যমান হয়।
নির্বাচন কমিশনের হিসাবেই দেখা যাচ্ছে, প্রথম ধাপের নির্বাচনে ৩৬ দশমিক ১ শতাংশ ভোট পড়েছে। এর মধ্যে ইভিএমে ভোটের হার ৩১ দশমিক ৩১ শতাংশ আর ব্যালটে ৩৭ দশমিক ২২ শতাংশ।
স্থানীয় সরকারব্যবস্থার নির্বাচনে এই ভোটের হার অনেক কম। আসলে দেশের মানুষের মধ্যে ভোটের প্রতি অনীহা তৈরি হয়েছে। নির্বাচনই প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে রয়েছে।
ভোটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা থাকছে না। একতরফা ভোট যখন হয়, তখন মানুষের মধ্যে একটা ধারণা তৈরি হয় যে ভোট দিয়ে কী লাভ। এমন পরিস্থিতি দেখা যাচ্ছে। সে জন্য ভোটের প্রতি মানুষের অনীহা বাড়ছে।
আমাদের দেশে গণতন্ত্রের বড় দুর্বল দিক হচ্ছে নির্বাচন নিয়ে মানুষের আস্থার সংকট। ভোটের প্রতি মানুষের আগ্রহ কমছে।
ভোটের প্রতি মানুষের আগ্রহ যে কমে যাচ্ছে, সে জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর দায় রয়েছে। সরকার ও বিরোধী, সব পক্ষই এর জন্য দায়ী। কারণ, নির্বাচন নিয়ে মানুষের আস্থা তৈরি করা এবং তা রক্ষার দায়িত্ব রাজনৈতিক দলগুলোর।
তবে এখানে সরকার ও সরকারি দলের দায় সবচেয়ে বেশি। ভোট কতটা সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ করা যাচ্ছে, মানুষ নির্বিঘ্নে তার ভোট দিয়ে প্রভাবমুক্তভাবে ফলাফল দেখতে পাচ্ছে, সেটা নির্ভর করে সরকারি দলের ওপর। বিরোধী দলগুলোরও দায় রয়েছে। মানুষের আস্থা তৈরিতে তাদেরও ভূমিকা প্রয়োজন।
রাজনৈতিক দলগুলো তা কতটা অনুধাবন করে, সেই প্রশ্ন রয়েছে। তবে মানুষ যে ভোট থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে, সেটা গণতন্ত্রের জন্য বিপজ্জনক।
এম সাখাওয়াত হোসেন, সাবেক নির্বাচন কমিশনার