দেড় বছরে প্রায় পৌনে পাঁচ লাখ কর্মী গেছেন মালয়েশিয়ায়। গড়ে পাঁচ লাখ টাকার বেশি খরচ করেছেন তাঁরা। এঁদের মধ্যে কেউ কেউ চাকরি পাননি। আগে থেকেই দেশটিতে আছেন আরও কয়েক লাখ বাংলাদেশি কর্মী। বাংলাদেশের মতো মালয়েশিয়াতেও আজ উদ্যাপিত হচ্ছে পবিত্র ঈদুল আজহা। পরিবার-পরিজন থেকে দূরে একাকিত্বে ঈদ কাটাচ্ছেন প্রবাসীরা।
মাদারীপুরের শিবচরের মো. রাজীব তিন মাস আগে গেছেন মালয়েশিয়ায়। ৪ লাখ ৯০ হাজার টাকা খরচ করে দেশটিতে গেলেও এখন পর্যন্ত চাকরি পাননি। তাঁর এক খালু আছেন কুয়ালালামপুরে, সেখানেই আপাতত থাকা-খাওয়ার সুবিধা পাচ্ছেন। তিনি বলেন, ‘মালয়েশিয়ায় এসে তিন মাসে কাজ পাইনি, ঈদ চলে এসেছে। পরিবারে কোনো টাকা পাঠাতে পারিনি। নিজের জন্যও কিছু কিনতে পারিনি।’
প্রবাসীরা বলছেন, মালয়েশিয়ায় শ্রমিকদের একটি বড় অংশ ঈদের দিনও ছুটি পান না। ভোরবেলায় ঘুম থেকে উঠে মুসল্লিরা ঈদের জামাতের দিকে গেলেও তাঁরা যান কর্মস্থলে। বিষাদে ভরে থাকে মন। ফেসবুকে স্বজনদের ঈদ আনন্দের ছবি দেখেন। মন খারাপ এড়াতে ফেসবুক থেকে দূরে থাকেন কেউ কেউ। তাঁদের পরিশ্রমের টাকায় দেশে পরিবারে কোরবানি হয়, কিন্তু তাঁরা ঈদের সকালে একটা ফোনও পান না। এমন আক্ষেপও আছে কারও কারও। মো. রসুল রানা বলেন, পরিবার-পরিজন ছেড়ে একা একা ঈদ করায় তেমন আনন্দ আসে না। আবার এখানে অধিকাংশ শ্রমিকের ঈদের দিন কাজ করতে হয়। এটাই ভাগ্য, নিয়তি।
ছয় থেকে সাত বছর ধরে মালয়েশিয়ায় আছেন মো. রায়হান কাশেম। তিনি দেশটির মালাক্কা প্রদেশের একটি সুপারশপে কাজ করেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ঈদের দিনও ছুটি নেই। এমনকি নামাজ পড়ার জন্যও সময় দেওয়া হয়নি। কোনো বছরই নামাজ পড়ার সময় দেয় না। ঈদের দিন কাজ করা অবশ্যই কষ্টের। পরিবার-পরিজন ছেড়ে এভাবেই ঈদ কাটে। কষ্ট হলেও মেনে নিতে হয়।
‘মালয়েশিয়া কাজের খবর নামে’ প্রবাসীদের একটি ফেসবুক গ্রুপ আছে। সেখানে ইফতেখার আহমেদ নামের এক প্রবাসী লিখেছেন, ঈদের দিনও যাচ্ছেন ডিউটিতে। সকাল ১০টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত কাজ। একটা দিন ছুটি চেয়েও পাওয়া গেল না। তাঁর এ পোস্টে মন্তব্য করে আরেক প্রবাসী মো. আশরাফুল আহমেদ লিখেছেন, ‘আরে আমি সকাল ৬টা থেকে রাত ৮টা।’
তবে পরিবার থেকে দূরে থাকলেও তা মেনে নিয়ে কেউ কেউ ঈদের আনন্দ উপভোগ করার চেষ্টা করেন প্রবাসজীবনে। মালয়েশিয়ার পেনাং প্রদেশের জর্জ টাউনে কাজ করেন মো. শান্ত খান। তিনি বলেন, ঈদের দিনে পরিবার-পরিজন দূরে থাকায় খারাপ লাগে। তবু ঈদের দিনটা কোনোভাবে উপভোগ করার চেষ্টা করি। গোলাম রব্বানী বলেন, ‘প্রবাসীদের আসলে ঈদ বলতে কিছু নেই। পরিবার ছাড়া ঈদ কষ্টের। তবু এখানে বন্ধুদের নিয়ে ঈদ উদ্যাপন করি।’
প্রবাসীরা নিজেরা মিলে আনন্দ ভাগাভাগি করে নেন। যাঁরা ছুটি পেয়েছেন, তাঁদের অনেকে প্রবাসী বন্ধুদের নিয়ে ঘুরতে বের হয়েছেন। তবু শূন্যতা কাজ করে পরিবারের জন্য, সন্তানের জন্য, মা-বাবার জন্য। মালয়েশিয়াপ্রবাসী মো. আরিফ হোসেন বলেন, ‘ঈদের নামাজ পড়ে আসছি। মিষ্টান্ন খেয়েছি। এখন ঘুরতে যাব। দেশ থেকে একমাত্র কন্যা বারবার ফোন দিচ্ছে। পরিবার, সন্তানকে মিস করছি।’
‘মালয়েশিয়াপ্রবাসী বাংলাদেশি’ নামে একটি ফেসবুক পেজ আছে প্রবাসীদের। এ পেজের একজন অ্যাডমিন রাকিব রানা প্রথম আলোকে বলেন, পরিবারের আনন্দের জন্য, পরিবারের পশু কোরবানির জন্য নিজেদের জীবন কোরবানি দেন প্রবাসীরা। তাঁদের আসলে ঈদ বলতে আলাদা কিছু থাকে না।