সুপ্রিম কোর্ট
সুপ্রিম কোর্ট

রুল শুনানি

সংবিধান সংশোধনের পদ্ধতি পঞ্চদশ সংশোধনীর ক্ষেত্রে অনুসরণ করা হয়নি

বহুল আলোচিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বিলোপসহ বেশ কিছু বিষয়ে আনা সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী প্রশ্নে রুলের ওপর শুনানির জন্য আগামী রোববার পরবর্তী দিন রেখেছেন হাইকোর্ট। শুনানি নিয়ে বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ আজ বুধবার পরবর্তী শুনানির ওই দিন রাখেন।

সপ্তম দিনের মতো শুনানিতে আজ ইন্টারভেনার (আদালতকে সহায়তা করতে) হিসেবে বিএনপি, দুই আইনজীবীসহ চারজনের পক্ষে এবং গণফোরাম, ইনসানিয়াত বিপ্লব ও বেসরকারি একটি সংস্থার পক্ষে আইনজীবী শুনানিতে অংশ নেন।

বিএনপির পক্ষে আইনজীবী নওশাদ জমির বলেন, পঞ্চদশ সংশোধনী হওয়ার আগের সংবিধানের গণভোটের বিধান ছিল। এ ক্ষেত্রে যেসব বিধান সংশোধন করা হয়েছে, সে জন্য গণভোটের প্রয়োজনীয়তা ছিল। এটি অনুসরণ করা হয়নি। তাই পঞ্চদশ সংশোধনী বাতিলযোগ্য।

গণফোরামের পক্ষে আইনজীবী মহিউদ্দিন আবদুল কাদের বলেন, সংবিধান সংশোধনের পদ্ধতি ১৪২ অনুচ্ছেদে বলা রয়েছে। পঞ্চদশ সংশোধনীর ক্ষেত্রে এই পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়নি। অথচ এই পদ্ধতি অনুসরণ করা বাধ্যতামূলক। এ পদ্ধতি অনুসরণ না করে অসাংবিধানিকভাবে পরিবর্তন আনায় পঞ্চদশ সংশোধনী অবৈধ সংশোধনী। তাই পদ্ধতিগত কারণে পুরো সংশোধনীই বাতিলযোগ্য।

আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে আনা পঞ্চদশ সংশোধনী আইন চ্যালেঞ্জ করে গত ১৮ আগস্ট সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদারসহ পাঁচ বিশিষ্ট ব্যক্তি রিট করেন। প্রাথমিক শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট গত ১৯ আগস্ট রুল দেন। রুলে পঞ্চদশ সংশোধনী আইন কেন সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়।

রুলে ইন্টারভেনার হিসেবে বিএনপি, গণফোরাম, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, সংস্থা ও ব্যক্তিসহ বেশ কয়েকজন যুক্ত হন। এর মধ্যে শুনানিতে রিট আবেদনকারীপক্ষের আইনজীবী, বিএনপির আইনজীবী, রাষ্ট্রপক্ষ ও জামায়াতের আইনজীবী বক্তব্য তুলে ধরেছেন। রুলের ওপর গত ৩০ অক্টোবর, ৬ নভেম্বর, ৭ নভেম্বর, ১০ নভেম্বর, ১৩ নভেম্বর, ১৪ নভেম্বর ও আজ শুনানি হয়।

আদালতে দুই আইনজীবীসহ চারজনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী জুনায়েদ আহমেদ চৌধুরী। তিনি বলেন, সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিলুপ্তির ফলে সংবিধানের তৃতীয় ভাগের অনুচ্ছেদ ৩৯ এর অধীনে ভাবপ্রকাশের স্বাধীনতার মৌলিক অধিকারকে লঙ্ঘন করেছে। এই লঙ্ঘনের ফলে অনুচ্ছেদ ২৬(২) অনুসারে পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিলুপ্তি একটি অবৈধ সংশোধন হিসেবে বিবেচিত হবে।

ইন্টারভেনার হিসেবে এই মামলায় যুক্ত হয়েছে সেলগ্যাপ নামের একটি সংস্থা। সংস্থাটির পক্ষে আইনজীবী এহসান এ সিদ্দিক বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বিলোপ করে আনা পঞ্চদশ সংশোধনীর পর অনুষ্ঠিত তিনটি নির্বাচন বিফল হয়েছে। অথচ তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থার অধীন অনুষ্ঠিত তিনটি নির্বাচনই সফল হয়েছে। এটি গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করেছে। গণতন্ত্র সংবিধানের মৌলিক কাঠামো। এই ব্যবস্থাও সংবিধানের মৌলিক কাঠামো। তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা বাতিল করে পঞ্চদশ সংশোধনী আনা হলেও নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা সাংবিধানিক প্রথা হিসেবেই রয়ে গেছে। যে কারণে এটি বাদ দেওয়া যাবে না।

অবৈধভাবে ক্ষমতা ধরে রাখতে পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল করা হয় বলে শুনানিতে উল্লেখ করেন ইনসানিয়াত বিপ্লব-এর পক্ষে আইনজীবী ইশরাত হাসান। তিনি বলেন, ফলে তিনটি ব্যর্থ অগণতান্ত্রিক নির্বাচন পরিলক্ষিত হয়। জনগণের ভোটের ক্ষমতা কেড়ে নিয়ে একতরফা নির্বাচন দিয়ে ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখা হয়। জনস্বার্থ পরিপন্থী এই সংশোধনীর ফলে দেশের জনগণের অধিকার খর্ব হয়েছে, যার ফলে এসেছে জুলাই বিপ্লব।

আদালতে শুনানির সময় রিট আবেদনকারীদের পক্ষে আইনজীবী রিদুয়ানুল করিম এবং রাষ্ট্রপক্ষে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদ উদ্দিন ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল মুজাহিদুল ইসলাম শাহীন উপস্থিত ছিলেন।

আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে পঞ্চদশ সংশোধনী আইন ২০১১ সালের ৩০ জুন জাতীয় সংসদে পাস হয়। ২০১১ সালের ৩ জুলাই এ-সংক্রান্ত গেজেট প্রকাশ করা হয়। পঞ্চদশ সংশোধনী আইন চ্যালেঞ্জ করে গত ১৮ আগস্ট সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদারসহ পাঁচ বিশিষ্ট ব্যক্তি ওই রিট করেন।