সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদ ও তাঁর স্ত্রী-সন্তানের স্থাবর সম্পদ জব্দ ও ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধের বিষয়ে আদালতের আদেশ বাস্তবায়ন শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান শনিবার প্রথম আলোকে বলেন, অনুসন্ধানের অংশ হিসেবে আদালত বেনজীর আহমেদ, তাঁর স্ত্রী ও সন্তানদের সম্পদ জব্দের যে আদেশ গত বৃহস্পতিবার দেন, সেটি বাস্তবায়ন শুরু করেছে দুদক। সম্পদ জব্দ ও ব্যাংক হিসাবগুলো অবরুদ্ধের আদেশের অনুলিপি দুদকের হাতে এসেছে। পর্যায়ক্রমে আদালতের আদেশ সংশ্লিষ্ট সরকারি সংস্থার কার্যালয় ও ব্যাংক কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হবে।
ঢাকা মহানগর আদালতের সিনিয়র স্পেশাল জজ মোহাম্মদ আসসামছ জগলুল হোসেন গত বৃহস্পতিবার বেনজীর আহমেদ, তাঁর স্ত্রী ও সন্তানদের নামে থাকা স্থাবর সম্পদ জব্দ (ক্রোক) করার আদেশ দেন। একই সঙ্গে তাঁদের ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ (ফ্রিজ) করারও আদেশ দেওয়া হয়।
দুদক এখন পর্যন্ত অনুসন্ধান চালিয়ে বেনজীর আহমেদ, তাঁর স্ত্রী, তিন মেয়ে ও স্বজনের নামে ৩৪৫ বিঘা (১১৪ একর) জমি খুঁজে পেয়েছে। বেনজীর ও তাঁর স্ত্রী-সন্তানদের নামে বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি ব্যাংকে ৩৩টি ব্যাংক হিসাব (অ্যাকাউন্ট) পাওয়া গেছে। নথিতে ওই সব ব্যাংক হিসাবে কত টাকা রয়েছে, তা উল্লেখ নেই।
আদালতের আদেশে এই জমি জব্দ ও ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধের কাজই শুরু করেছে দুদক। দুদকের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) মাহমুদ হোসেন জাহাঙ্গীর প্রথম আলোকে বলেন, আইন অনুযায়ী, সম্পদ জব্দ ও ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধের বিষয়ে আদালতের আদেশ বাস্তবায়নে প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে। সেই প্রজ্ঞাপন দুটি পত্রিকায় প্রকাশিত হবে। তিনি বলেন, সম্পদ হস্তান্তর কিংবা বিক্রির বিষয়টি যেসব সরকারি কার্যালয়ের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত হয়, সেসব কার্যালয়ের প্রধান বরাবর আদালতের আদেশ পাঠাবে দুদক। ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধের জন্য ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী বরাবর আদালতের আদেশ পাঠানো হবে।
বেনজীর আহমেদ ২০২০ সালের ১৫ এপ্রিল থেকে ২০২২ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আইজিপি ছিলেন। এর আগে তিনি ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার ও র্যাবের মহাপরিচালক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে র্যাব এবং র্যাবের সাবেক ও বর্তমান যে সাত কর্মকর্তার ওপর যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা দেয়, তাঁদের মধ্যে বেনজীর আহমেদের নামও ছিল। তখন তিনি আইজিপির দায়িত্বে ছিলেন।
সম্পদ জব্দের আবেদনের শুনানিতে আদালতে দুদকের পিপি উল্লেখ করেছিলেন, বেনজীর আহমেদের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার, অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে নিজ নামে এবং স্ত্রী-সন্তানদের নামে দেশে-বিদেশে শত শত কোটি টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ করা হয়েছে। তাঁরা এই সম্পদ (তফসিলে বর্ণিত) অবৈধভাবে অর্জন করেছেন।
পিপি মাহমুদ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, আদালতের আদেশ অনুযায়ী, অবরুদ্ধ ব্যাংক হিসাবগুলো থেকে কোনো অর্থ উত্তোলন করা যাবে না। কোনো সম্পদও হস্তান্তর করা সম্ভব হবে না। এগুলো আদালতের নিয়ন্ত্রণে থাকবে।