আগে বঙ্গবাজার কমপ্লেক্স যেখানে ছিল, সেখানে ব্যবসায়ীরা এখন অস্থায়ীভাবে খুপরির মতো দোকান বসিয়েছেন। দোকানগুলো কত দিন থাকবে তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। এখানে বড় বিপণিবিতান তৈরি করে ব্যবসায়ীদের পুনর্বাসনের কথা বলা হচ্ছে। তবে সেটি আদৌ হবে কি না, তা নিয়েও ব্যবসায়ীদের মধ্যে অনিশ্চয়তা রয়েছে।
বিদায়ী বছরের ৪ এপ্রিল রাজধানীর বঙ্গবাজারে পাশাপাশি চারটি বিপণিবিতানে আগুন লাগে। এসব বিপণিবিতানের সমন্বিত নাম বঙ্গবাজার কমপ্লেক্স। আগুনে সব কটি বিপণিবিতানই পুড়ে যায়। কয়েক হাজার ব্যবসায়ী নিঃস্ব হয়ে যান নিমেষেই। পরে সেখানে ধ্বংসস্তূপ সরিয়ে অস্থায়ীভাবে ব্যবসায়ীদের বসার সুযোগ করে দেওয়া হয়।
ভবনে গ্যাসের লাইন সঠিকভাবে আছে কি না, নিরাপত্তায় কোনো ত্রুটি আছে কি না, অগ্নিনিরাপত্তা আছে কি না, এগুলো দেখভাল করা সেবা সংস্থাগুলোর নিয়মিত কাজ। দুর্ঘটনার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হলে এ ধরনের ঘটনা প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে।বিআইপি সভাপতি আদিল মুহাম্মদ খান
বঙ্গবাজার কমপ্লেক্সের ঘটনার পাশাপাশি গত ১৫ এপ্রিল ঢাকা নিউ সুপার মার্কেট এবং ১৪ সেপ্টেম্বর মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এই দুটি ঘটনাতেও কয়েক শ ব্যবসায়ী ক্ষতিগ্রস্ত হন। গত ৭ মার্চ ঢাকার সিদ্দিকবাজারে কুইন্স স্যানিটারি মার্কেট নামে পরিচিত একটি বিপণিবিতানে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনায় ২৬ জনের প্রাণহানি হয়। এ ঘটনার দুদিন আগে ৫ মার্চ সায়েন্স ল্যাব এলাকায় একটি ভবনে বিস্ফোরণের ঘটনায় ছয়জনের প্রাণহানি হয়। এ ছাড়া ৪ মার্চ সীতাকুণ্ডের সোনাইছড়ির কেশবপুরে সীমা অক্সিজেন লিমিটেড নামে অক্সিজেন তৈরির কারখানায় বিস্ফোরণে সাতজন নিহত হন।
ফায়ার সার্ভিস বলছে, বঙ্গবাজার ও ঢাকা নিউ সুপার মার্কেটে মশার কয়েল অথবা বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়েছে। বঙ্গবাজার কমপ্লেক্সের চারটি বিপণিবিতান এবং ঢাকা নিউ সুপার মার্কেট অগ্নিকাণ্ডের ঝুঁকিতে ছিল। ফায়ার সার্ভিস–সংশ্লিষ্টদের সতর্ক করলেও বিষয়টি আমলে নেয়নি তারা।
এদিকে কুইন্স স্যানিটারি মার্কেট ও সায়েন্স ল্যাবে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে তিতাস গ্যাসের অবহেলা ও গাফিলতিতে। এই দুটি ঘটনায় মামলার তদন্তে বিষয়টি উঠে এলেও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যাচ্ছে না। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অসহযোগিতার কারণে দায়ী ব্যক্তিদের খুঁজে বের করা সম্ভব হচ্ছে না বলেও তদন্ত–সংশ্লিষ্টদের ভাষ্য।
বঙ্গবাজার কমপ্লেক্সে লাগা আগুনে চারটি বিপণিবিতান সম্পূর্ণ ভস্মীভূত হয়। সর্বস্ব হারান ৩ হাজার ৮৪৫ ব্যবসায়ী। ব্যবসায়ীদের ভাষ্য, ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে ৩০৫ কোটি টাকার। গত বুধবার সেখানে গিয়ে কথা হয় খুপরির মতো দোকানে ব্যবসা চালিয়ে যাওয়া ব্যবসায়ীদের সঙ্গে। ব্যবসায়ীরা জানান, তাঁরা ক্ষতিপূরণ পাননি। আগামী ঈদ পর্যন্ত এসব অস্থায়ী দোকান থাকবে। তারপর সেখানে নতুন করে বিপণিবিতান তৈরির কাজ শুরু করা হবে বলে দোকান মালিক সমিতির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে। তবে কোনো কিছুই এখন পর্যন্ত নিশ্চিত না।
এদিকে ঢাকা নিউ সুপার মার্কেটে অগ্নিকাণ্ডে ২২৬টি দোকান পুড়ে যায়। মার্কেটের মালিক সমিতি বলছে, আগুনে ৩৫০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। তবে তাঁরা কোনো ক্ষতিপূরণ পাননি বলে দাবি করেন। দোকানমালিকদের ভাষ্য, তাঁরা নিজেদের অর্থায়নে দোকান মেরামত করেছেন।
আগুনে কৃষি মার্কেটের ‘খ’ ব্লকের ১৩১টি আর ‘গ’ ব্লকের ১১২টি দোকানের সব কটিই ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কৃষি মার্কেটের ব্যবসায়ী মালিক সমিতির সভাপতি ও স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর সলিম উল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, এই মার্কেট আবার নতুন করে তৈরি করা হচ্ছে। তবে কবে নাগাদ এর কাজ শেষ হবে, সেটি কেউ জানেন না। এখানকার কোনো কোনো ব্যবসায়ী মার্কেটের সামনে ও আশপাশ এলাকায় ভাসমান অবস্থায় এখন ব্যবসা করছেন। তাঁদের স্থায়ী ব্যবস্থা কবে হবে সেটি বলা যাচ্ছে না।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবান ও রিজিওনাল প্ল্যানিং বিভাগের অধ্যাপক ও বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) সভাপতি আদিল মুহাম্মদ খান প্রথম আলোকে বলেন, ভবনে গ্যাসের লাইন সঠিকভাবে আছে কি না, নিরাপত্তায় কোনো ত্রুটি আছে কি না, অগ্নিনিরাপত্তা আছে কি না, এগুলো দেখভাল করা সেবা সংস্থাগুলোর নিয়মিত কাজ। দুর্ঘটনার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হলে এ ধরনের ঘটনা প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে। নতুন বছরে অগ্নিদুর্ঘটনা রোধ এবং ভবনের নিরাপত্তার জন্য যে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত, সেটি নিশ্চিত করার জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থাগুলো সঠিকভাবে কাজ করবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।