সরকারি প্রতিবেদন

নতুন মাদকের ছড়াছড়ি, কমেনি ইয়াবা; পরিস্থিতি ‘জটিল’

এলএসডি, ডিএমটির মতো মাদক কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশ থেকে আনা হচ্ছে
ফাইল ছবি

শুধু ইয়াবা নয়, এখন নতুন নতুন মাদকের ছড়াছড়ি দেশে। ইয়াবার সহজলভ্যতার কারণে প্রচলিত মাদকের মধ্যে শুধু ফেনসিডিলের ব্যবহার কিছুটা কমেছে। খোদ মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, পরিস্থিতি ‘জটিল’।

‘চল যাই যুদ্ধে মাদকের বিরুদ্ধে’ স্লোগান নিয়ে ২০১৮ সালের ৪ মে মাদকবিরোধী ওই অভিযান শুরু হয়েছিল। এতে শুধু কক্সবাজারে ২৯৯ জন নিহত হন। আত্মসমর্পণের সুযোগ পান ১২৩ জন ‘মাদক কারবারি’। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ছাড়াও অভিযানে যুক্ত ছিল পুলিশ, র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব) ও বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)।

কিন্তু মাদক নির্মূলে এই ‘সর্বাত্মক’ অভিযানের সাড়ে তিন বছরের মাথায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের গত ২৬ জুন প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, বৈচিত্র্যপূর্ণ মাদকের অনুপ্রবেশ মাদক পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে।

অভিযানের শুরুর দিকে মাদকের দাম বেড়ে যাওয়া ও সরবরাহে ঘাটতির কথা জানা যায়। তবে মাস কয়েক পর আবারও সুলভে পাওয়া যেতে থাকে মাদক। পরিসংখ্যান বলছে, উপর্যুপরি অভিযানের পর ইয়াবার প্রকোপ কমেনি। সেই সঙ্গে ক্রিস্টাল মেথ বা আইস (মিথাইল অ্যাম্ফেটামিন), এলএসডি (লাইসার্জিক অ্যাসিড ডাইথ্যালামাইড), ডিওবি (ডাইমেথক্সিব্রোমো অ্যাম্ফেটামিন), খাট (ক্যাথিনোন ও ক্যাথিন), ম্যাজিক মাশরুম ও ‘ক্র্যাটম প্ল্যান্টের’ মতো মাদকের অনুপ্রবেশ ঘটেছে নানা পথে।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. আজিজুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘মাদক কারবারিরা বিভিন্ন কৌশল ও পদ্ধতি অনুসরণ করে দেশে নতুন নতুন মাদক নিয়ে আসছে। তবে আমরাও তৎপর আছি। খবর পাওয়ামাত্রই ধরা হচ্ছে। নতুন মাদকের বাজার বড় হবে না, ইনশা আল্লাহ।’

অভিযানের অর্জন নিয়ে প্রশাসনেই কানাঘুষা

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সর্বাত্মক যুদ্ধে মাদক কারবারিদের কাছে ধরাশায়ী হওয়ার কথা আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকার না করলেও অভিযান যে ফলপ্রসূ হয়নি, তা নিয়ে বাহিনীগুলোর ভেতর আলোচনা আছে। এর মধ্যেই র‍্যাব কৌশল পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

মাদকের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক যুদ্ধ কি এখনো চলছে, আর চললে এর প্রভাব কী—এমন প্রশ্নে র‍্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক খন্দকার আল মঈন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের যুদ্ধ চলমান, তবে আমরা এখন সামাজিক যুদ্ধের দিকে যাচ্ছি।’

সামাজিক যুদ্ধটা কেমন, তা জানতে চাইলে খন্দকার আল মঈন বলেন, পর্যটন করপোরেশন ও যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে র‍্যাব মাদকের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ জায়গায় বিভিন্ন প্রশিক্ষণ কর্মসূচি চালুর কথা ভাবছে।

পুলিশ সদর দপ্তরের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) হায়দার আলী খান বলেন, সর্বাত্মক যুদ্ধ এখনো চলছে। মাদক কেনাবেচা, পরিবহন, সংরক্ষণের যেকোনো প্রচেষ্টা মোকাবিলায় পুলিশ তৎপর আছে।

তৎপরতার কারণে প্রকোপ কমেছে কি না, এমন প্রশ্নে ডিআইজি হায়দার আলী খান বলেন, ‘মাদক উদ্ধার বা গ্রেপ্তার দিয়ে প্রকোপের কমা-বাড়া বোঝা যায় না। এ জন্য বড় গবেষণার প্রয়োজন। গবেষণা হলে এ ব্যাপারে বলা যাবে।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মানবাধিকারকর্মী নূর খান প্রথম আলোকে বলেন, নিয়ন্ত্রণের নামে অভিযান, ক্রসফায়ার ও নির্যাতন করে দেশকে মাদকমুক্ত করা যাবে না। রাজনৈতিক সদিচ্ছা সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন।

নতুন পথে নতুন মাদক

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. মানজুরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, সারা বিশ্বে যত মাদক পাওয়া যায়, তার সব কটিকে চারটি শ্রেণিভুক্ত করা হয়েছে। এগুলো হলো অপিয়ডস বা ঘুম-অবসাদ উৎপাদনকারী; স্টিমুল্যান্টস বা উত্তেজক, সিডেটিভ-হিপনোটিক ও ট্রাঙ্কুলাইজার এবং হ্যালুসিনেশনস বা মনোবৈকল্য-বিভ্রম সৃষ্টিকারী মাদক।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে গাঁজা বা ক্যানাবিসের ব্যবহার পুরোনো। আশির দশক পর্যন্ত সরকার–নির্ধারিত বিক্রয়কেন্দ্র থেকে গাঁজা বিক্রি হতো। ১৯৮৮ সালে গাঁজা নিষিদ্ধ হওয়ার পর মাদকের বাজার দখল করে নেয় অপিয়ডস বা ঘুম-অবসাদ উৎপাদনকারী মাদক হেরোইন। এই গোত্রভুক্ত অন্যান্য মাদক, যেমন পেথিডিন, কোডেইন (ফেনসিডিল) ও মরফিনের ব্যবহারও পুরোনো। এরপর বাজারে আসে স্টিমুল্যান্টস বা উত্তেজক মাদক ইয়াবা।

ডিওবিসহ গ্রেপ্তার তিনজন

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর, পুলিশ, র‍্যাব ও বিজিবি যেসব মাদক সাম্প্রতিক বছরগুলোয় উদ্ধার করেছে, তাতে দেখা যাচ্ছে, উত্তেজক মাদকের মধ্যে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে শক্তিশালী আইস বা ক্রিস্টাল মেথ ও এমডিএমএ (মেথাইলিন ডাই–অক্সি মেথা অ্যাম্ফেটামিন) নিয়মিত ঢুকছে বাংলাদেশে। এর বাইরে ধরা পড়েছে হ্যালুসিনেশনস বা মনোবৈকল্য-বিভ্রম সৃষ্টিকারী মাদক এলএসডি, ম্যাজিক মাশরুম, ডিএমটি (এনএন ডাইমিথাইলট্রিপটামিন) ও ডিওবি।

মিয়ানমার সীমান্ত দিয়ে ইয়াবা ও আইস এবং ভারত সীমান্ত দিয়ে ফেনসিডিল ঢুকছে বহু বছর ধরে। তবে নতুন নতুন এই মাদক ইউরোপের বিভিন্ন দেশ ও কানাডা থেকে পার্সেল হিসেবে আসে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা লাগেজে কিংবা ডার্কওয়েবে বিটকয়েনে এগুলো কেনেন।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২১ সালে আইস বা ক্রিস্টাল মেথ উদ্ধার করা হয়েছে ৩৬ দশমিক ৭৯৪ কেজি, এলএসডি দশমিক শূন্য শূন্য ৩ কেজি এবং ডিওবি ১০০ পাতা। চলতি বছরের জুন পর্যন্ত আইস বা ক্রিস্টাল মেথ উদ্ধার করা হয়েছে ৭৪ দশমিক ৫৯৯ কেজি, এলএসডি দশমিক শূন্য শূন্য ২ কেজি এবং ক্র্যাটম প্ল্যান্ট ১৫টি। ২০১৮ সাল থেকে বাংলাদেশে ৫১৫৬ দশমিক শূন্য ৩ কেজি খাট উদ্ধার হয়েছে। এর বাইরে গত বছরের জুলাই মাসে হাতিরঝিল থেকে ম্যাজিক মাশরুম ও আগস্টে ডিএমটি উদ্ধার হয়।

স্টিমুল্যান্টস বা উত্তেজক গোত্রের মাদক আইস বা ক্রিস্টাল মেথ প্রথম উদ্ধার করা হয় ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে। জিগাতলার একটি বাসা থেকে সে সময় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর আইস ও এমডিএমএ তৈরির কাঁচামাল উদ্ধার করেছিল। ওই ঘটনায় মালয়েশিয়ার নটিংহ্যাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তড়িৎকৌশলে স্নাতক হাসিব মুহাম্মদ মুয়াম্মার রশিদকে গ্রেপ্তার করা হয়। এর পর থেকে নিয়মিত বিরতিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আইস বা ক্রিস্টাল মেথ উদ্ধার করে আসছে।

অন্যদিকে, ঢাকায় প্রথম এলএসডি উদ্ধার করা হয় ২০১৯ সালের ১৫ জুলাই মহাখালী ডিওএইচএসের একটি বাসা থেকে। এলএসডির ২৫টি স্ট্রিপ ও তরল এলএসডি উদ্ধারের ঘটনায় গ্রেপ্তার দুই বিশ্ববিদ্যালয়ছাত্র জানান, তেলের বোতলে ভরে কানাডা থেকে তাঁরা তরল এলএসডি ও ডাকটিকিটের মতো দেখতে এলএসডি স্ট্রিপ নিয়ে এসেছিলেন। কেনাবেচা চলছিল অনলাইনে।

বেশ কিছু দিন বিরতির পর ২০২১ সালে আবারও আলোচনায় আসে এলএসডি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হাফিজুর রহমানের অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনা তদন্তে ডিবি জানতে পারে, এলএসডির ঘোরে হাফিজুর নিজের গলায় নিজে ডাব কাটার দা চালিয়েছেন। ডিবি আরও জানায়, এলএসডি কেনাবেচায় ঢাকায় অন্তত ১৫টি দল সক্রিয়।

ডিওবি কেনাবেচার দায়ে খুলনার দুই তরুণ আসিফ আহমেদ, অর্ণব কুমার শর্মা গ্রেপ্তার হন গত বছর। ডার্ক ওয়েবে যোগাযোগের মাধ্যমে আসিফ আহমেদ পোল্যান্ড থেকে ২০০ ব্লট ডিওবি এনেছিলেন। ৯০টি ব্লট বিক্রির পর তাঁরা ধরা পড়েন।

অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, পেশায় গ্রাফিক ডিজাইনার আসিফ বিটকয়েনে লেনদেন করতেন। বিটকয়েন দিয়েই ডিওবি কিনেছিলেন। আন্তর্জাতিক কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে তিনি ডিওবি হাতে পান এবং দেশীয় কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে মাদকসেবীদের কাছে পৌঁছে দিচ্ছিলেন।

ঢাকার হাতিরঝিল থেকে ম্যাজিক মাশরুম উদ্ধারের পর র‍্যাব জানায়, এ মাদকও ক্রমে জনপ্রিয় হয়ে উঠছিল।

ঢাকার হাতিরঝিল এলাকা থেকে ‘ম্যাজিক মাশরুম’সহ দুজনকে গ্রেপ্তার করেছিল র‍্যাব

একাধারে ঘুম-অবসাদ তৈরি করে এবং মতিভ্রম ঘটায়—এমন মাদকের গাছ ‘ক্র্যাটম প্ল্যান্ট’ উদ্ধার করা হয় মাস কয়েক আগে ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা থেকে। অপিয়ড শ্রেণিভুক্ত মাদকের নেশা কাটাতে ক্র্যাটম প্ল্যান্টের ব্যবহার হয়ে থাকলেও গবেষণায় প্রমাণিত হয়, এটি নিজেই আসক্তি তৈরি করে। ২০১৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফডিএ) ক্র্যাটম প্ল্যান্ট থেকে তৈরি পণ্য ব্যবহার নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছিল।

বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা ভূমি কর্মকর্তা শাহরিয়ার রহমান প্রথম আলোকে বলেন, শামিম ইসলাম নামের মালয়েশিয়াফেরত এক ব্যক্তি নিজের উঠানে ক্র্যাটম প্ল্যান্টের চাষ করছিলেন। আশপাশের লোকজনকে কবিরাজি ওষুধ হিসেবেও খাওয়াচ্ছিলেন। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কাছ থেকে খবর পেয়ে তাঁরা শামিমের বাড়ি যান এবং তাঁকে গ্রেপ্তার করেন।

ইয়াবা, হেরোইন, পেথিডিনের ব্যবহার বেড়েছে

উদ্ধার হওয়া মাদকের সংখ্যা ও নিরাময়কেন্দ্রে যাওয়া মাদকসেবীদের পর্যালোচনা করে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর কোন ধরনের মাদকের ব্যবহার বেশি, তা নির্ধারণ করে থাকে। সে হিসাবে এখনো ইয়াবার বাজার বড়।

২০২০ ও ২১ সালে ইয়াবা উদ্ধারের পরিমাণ ছিল যথাক্রমে ৩ কোটি ৬৩ লাখ ৮১ হাজার ১৭ ও ৫ কোটি ৩০ লাখ ৭৩ হাজার ৬৬৫টি। এক বছরের ব্যবধানে উদ্ধার বেড়েছে ৪৫ দশমিক ৮৮ শতাংশ। মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রেও ইয়াবাসেবীদের চিকিৎসা নেওয়ার হার আগের বছরের তুলনায় গত বছর প্রায় ৯ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে।

বেড়েছে হেরোইনের ব্যবহারও। গত বছর হেরোইন উদ্ধার করা হয়েছে ৪৪১ দশমিক ২২১ কেজি। আগের বছরের তুলনায় উদ্ধারের হার ১০৯ দশমিক ৬৭ শতাংশ বেশি।
এদিকে পুলিশ সদর দপ্তরের হিসাবে পেথিডিন উদ্ধারের সংখ্যাও বেড়েছে। ২০১৮ সালে পেথিডিন উদ্ধার হয়েছিল আড়াই হাজার অ্যাম্পুল। পরবর্তী বছরগুলোয় এ সংখ্যা ক্রমে বেড়েছে। ২০২০ সালে উদ্ধার করা হয় প্রায় সাড়ে ৪৫ হাজার আর ২০২১ সালে উদ্ধার করা হয় প্রায় ৫৪ হাজার অ্যাম্পুল পেথিডিন। চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে এ সংখ্যা হয়েছে ৪১ হাজার।

ইউনাইটেড ন্যাশনস অফিস অন ড্রাগস অ্যান্ড ক্রাইম (ইউএনওডিসি) বলেছে, বাজারে যত মাদক ঢোকে, তার মাত্র ১০ শতাংশ উদ্ধার করা হয়।

ঘুমের ওষুধ নেশা হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে

এই গোত্রের অন্তত ১০টি ওষুধ মাদক হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের হিসাবে দেশে ডায়াজিপাম, ফেনোবারবিটাল ও নাইট্রাজিপাম অপব্যবহারের হার সবচেয়ে বেশি। তারা বলছে, ঘুমের ওষুধ সেবনকারীদের অল্পসংখ্যকই মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রে চিকিৎসা নিয়ে থাকেন। অধিদপ্তরের পর্যবেক্ষণ হলো নারী, মানসিক চাপে থাকা ব্যক্তি অথবা মনোরোগে ভোগা ব্যক্তিরা এ ধরনের ওষুধ বেশি সেবন করে থাকেন।

কেন্দ্রীয় ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মুখপাত্র মো. আইয়ূব হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ব্যবস্থাপত্র ছাড়া এ ধরনের ওষুধ বিক্রি নিষেধ। তবে সব জায়গায় এই নিয়ম মানা হচ্ছে না। বাংলাদেশের শিক্ষিত-অশিক্ষিত সব ধরনের মানুষই ফার্মেসি থেকে নিজেদের মনমতো ওষুধ কেনেন।

পরামর্শপত্র ছাড়া ওষুধের কেনাবেচা বন্ধে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর কী করছে—এমন প্রশ্নে মো. আইয়ূব হোসেন বলেন, তাঁরা জনসচেতনতা বৃদ্ধির চেষ্টা করছেন।

জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক হেলাল উদ্দিন আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ঘুমের ওষুধে নির্ভরশীল হয়ে পড়া মানুষের আচরণগত পরিবর্তন হয়। তাঁদের কখনো কখনো খিঁচুনিও হতে পারে। অনেক ক্ষেত্রে ঘুমের ওষুধ সেবনকারী অন্য মাদকে ঝুঁকে পড়েন। এ ধরনের রোগী প্রচুর।

হেলাল উদ্দিন আহমেদ আরও বলেন, ‘উত্তেজক বা অবসন্নতা সৃষ্টি করে—এমন মাদক হোক, যেকোনো ধরনের মাদক সেবনে ব্যক্তিত্ব বদলে যায়। কিডনি, হৃদ্‌যন্ত্র তো ধ্বংস হয়ই, মানুষ আর মানুষ থাকে না, দানব হয়ে যায়।’

মানবাধিকারকর্মী নূর খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা শুরুতেই বলেছিলাম, নিয়ন্ত্রণের নামে অভিযান, ক্রসফায়ার ও নির্যাতন করে দেশকে মাদকমুক্ত করা যাবে না। এখন তো সরকারকেই স্বীকার করতে হচ্ছে যে মাদকে দেশ সয়লাব হয়ে গেছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘সমস্যাটা জনগণের; জনগণকে বাইরে রেখে মাদকবিরোধী অভিযান কখনোই সফল হতে পারে না। আর রাজনৈতিক সদিচ্ছা সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। লুটেরা অর্থনীতির দেশে সদিচ্ছা কতটুকু, সেটাও প্রশ্ন।’