ঢাকা অভিমুখী কক্সবাজার এক্সপ্রেস ফেনী স্টেশনে দাঁড়ানো। বুধবার সন্ধ্যা ৬টা ৪৮ মিনিটে ছবিটি তোলা
ঢাকা অভিমুখী কক্সবাজার এক্সপ্রেস ফেনী স্টেশনে দাঁড়ানো। বুধবার সন্ধ্যা ৬টা ৪৮ মিনিটে ছবিটি তোলা

স্টেশনে স্টেশনে দাঁড়াচ্ছে ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটের ট্রেন, যাত্রীরা বিড়ম্বনায়

ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে আসার জন্য মহানগর প্রভাতী ট্রেনের টিকিট কিনেছিলেন প্রকৌশলী দেলোয়ার মজুমদার। ঢাকার কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে ট্রেনটি ছাড়ার কথা ছিল আজ বুধবার সকাল ৭টা ৪৫ মিনিটে। কিন্তু ১ ঘণ্টা ১৫ মিনিট দেরিতে ছেড়েছে ট্রেনটি। বেলা দেড়টায় চট্টগ্রাম স্টেশনে পৌঁছানোর কথা থাকলেও সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় ট্রেনটি কুমিল্লার নাঙ্গলকোট স্টেশনে দাঁড়িয়েছিল।

শুধু মহানগর প্রভাতী নয়, আজ ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটের বিভিন্ন স্টেশনে দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়েছিল ঢাকাগামী কক্সবাজার এক্সপ্রেস, মহানগর এক্সপ্রেস ও মহানগর গোধূলীও। আর জামালপুর থেকে চট্টগ্রামগামী ময়মনসিংহ এক্সপ্রেস সন্ধ্যায় দাঁড়িয়েছিল কুমিল্লা স্টেশনে।

পবিত্র রমজান মাসে এভাবে একের পর এক স্টেশনে যাত্রাবিরতি দেওয়ায় ভোগান্তিতে পড়েছেন যাত্রীরা। ট্রেনে পর্যাপ্ত খাবার না থাকায় শিশু-কিশোরদেরও কষ্ট হয়েছে। নির্দিষ্ট সময়ে গন্তব্যে পৌঁছাতে না পারায় ইফতার করতে বেগ পোহাতে হয়েছে রোজাদারদের। কোনো রকম ইফতার সারেন তাঁরা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মহানগর প্রভাতী কুমিল্লা স্টেশনে দাঁড়িয়েছিল আধা ঘণ্টা। লাকসাম স্টেশনে বসিয়ে রাখা হয়েছিল বেলা ২টা থেকে বিকেল ৪টা ৪৫ মিনিট পর্যন্ত। এরপর নাঙ্গলকোটে পৌঁছায় বিকেল পাঁচটায়। সন্ধ্যা সাতটায়ও সেখানকার স্টেশনে দাঁড়িয়েছিল ট্রেনটি।

মহানগর প্রভাতীর যাত্রী ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশের (আইইবি) চট্টগ্রাম কেন্দ্রের সাবেক চেয়ারম্যান দেলোয়ার মজুমদার মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, উদ্ধারকাজের জন্য ট্রেন চলাচলে দেরি হতে পারে। কিন্তু একটি স্টেশনেও এ ধরনের কোনো ঘোষণা দেওয়া হয়নি। এটা তো আগে জানাতে হবে। যাত্রীরা যাতে এ বিষয়ে অবগত থাকেন। তাঁরা সেভাবে প্রস্তুতি নিয়ে ট্রেনে উঠতেন। কিন্তু একের পর এক স্টেশনে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ট্রেন দাঁড় করিয়ে রাখা হচ্ছে। কেন রাখা হচ্ছে, কী জন্য দেরি হচ্ছে—এ বিষয়ে কেউ কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি।

মহানগর প্রভাতীর আরেক যাত্রী বলেন, সন্ধ্যায় ইফতারের সময় আরেক দুর্ভোগে পড়তে হয়েছে। আশপাশে ভালো মানের কোনো খাবারের দোকান ছিল না। শেষ পর্যন্ত যা পেয়েছেন, তা দিয়ে ইফতার করতে হয়েছে। ট্রেন দেরি করবে, তা আগেই জানাতে পারত। তখন যাত্রীরা বিকল্প পথে যাতায়াত করতেন। এভাবে মূল স্টেশন থেকে এনে মাঝপথে দাঁড়িয়ে রাখার কোনো দরকার ছিল না।

গত রোববার দুপুরে কুমিল্লার নাঙ্গলকোট উপজেলায় চট্টগ্রাম থেকে জামালপুরগামী বিজয় এক্সপ্রেস ট্রেনের ৯টি বগি লাইনচ্যুত হয়। এতে অন্তত আধা কিলোমিটার রেললাইন দুমড়েমুচড়ে যায়।

দুর্ঘটনার পরপরই চট্টগ্রামের সঙ্গে সারা দেশের ট্রেন যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। পরে চট্টগ্রাম স্টেশন থেকে চলাচল শুরু হলেও ট্রেন ছেড়েছিল নির্ধারিত সময়ের অনেক দেরিতে। দুর্ঘটনার পরদিন সোমবার চট্টগ্রাম স্টেশন থেকে নির্ধারিত সময়ে ট্রেন চলাচল শুরু হয়। কিন্তু মাঝপথে বারবার যাত্রাবিরতি দেওয়া হয় বলে যাত্রীরা অভিযোগ করেন। এখনো দুর্ঘটনাকবলিত লাইনটি পুরোপুরি চলাচলের উপযোগী করা যায়নি। উদ্ধারকারী ট্রেন দিয়ে লাইন ও লাইনের পাশ থেকে লাইনচ্যুত বগিগুলো পর্যায়ক্রমে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে।

গত রোববার কুমিল্লার নাঙ্গলকোটে চট্টগ্রাম থেকে আসা জামালপুরগামী ‘বিজয় এক্সপ্রেস’ ট্রেনের ৯টি বগি লাইনচ্যুত হয়

রেলওয়ের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা জানান, দুটি লেনের মধ্যে একটি যাতে ট্রেন চলাচলের উপযোগী হয়, সেদিকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এ জন্য প্রথম দিনেই উদ্ধারকারী ট্রেন দিয়ে একটি লেন চলাচলের উপযোগী করা হয়। অন্য লেন এখনো ট্রেন চলাচলের উপযোগী করা যায়নি। বগিগুলো উদ্ধার করে ট্রেন চলাচলের উপযোগী করা হচ্ছে। এ জন্য উদ্ধারকাজের সময় অন্য লেনটিও বন্ধ রাখতে হয়। তাই ট্রেন চলাচলে বিঘ্ন ঘটছে।

চট্টগ্রাম রেলস্টেশনের তথ্যানুযায়ী, বুধবার প্রায় সব ট্রেন সময় মেনে স্টেশন ছেড়েছে। তবে ঢাকাগামী মহানগর গোধূলী ১৫ মিনিট ও মহানগর এক্সপ্রেস ৩০ মিনিট দেরিতে ছেড়েছে। গতকাল মঙ্গলবার ছয়টি ট্রেন নির্ধারিত সময়ের চেয়ে দেরিতে ছেড়েছিল। আর দুর্ঘটনার দিন রোববার ও পরদিন সোমবার সব মিলিয়ে অন্তত ২৬টি যাত্রাবাহী ট্রেন দেরিতে ছেড়েছে।

জানতে চাইলে বিভাগীয় রেলওয়ে ব্যবস্থাপক (চট্টগ্রাম) মো. সাইফুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘যাত্রীবাহী ট্রেন সচল রাখা এবং দুর্ঘটনাকবলিত বগিগুলো দ্রুত উদ্ধার করা—এই দুটি বিষয় সামনে রেখে কাজ করতে হচ্ছে। লাইনচ্যুত বগিগুলো উদ্ধার করতে গেলে কিছু সময়ের জন্য ট্রেন চলাচল বন্ধ রাখতে হয়। আবার মাঝে মাঝে উদ্ধারকাজ থামিয়ে যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল করার সুযোগ দিতে হয়। এ জন্য এখন গন্তব্যে পৌঁছাতে সময় বেশি লাগছে। যাত্রীদের এতে দুর্ভোগ হচ্ছে। তবে উদ্ধারকাজ তো শেষ করতে হবে। বুধবার রাতের মধ্যে দুটি লাইন পুরোপুরি সচল হয়ে যাবে।