হাওরে সড়ক বানিয়ে পায়ে কুড়াল মেরেছি: পরিকল্পনামন্ত্রী

পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান
ফাইল ছবি

হাওরের মাঝখানে সড়ক নির্মাণ করা ঠিক হয়নি বলে মনে করেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। তিনি বলেছেন, ‘এখন টের পাচ্ছি, হাওরে সড়ক নির্মাণ করে নিজেদের পায়ে কুড়াল মেরেছি। হাওরে সড়ক বানিয়ে উপকারের চেয়ে অপকারই হয়েছে।’

শনিবার রাজধানীর প্রেসক্লাবে এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান এসব কথা বলেন। ‘পরিবেশ দূষণ ও প্রতিকার’ শিরোনামে সেমিনারটি আয়োজন করে বাংলাদেশ সেন্টার ফর হলিস্টিক স্টাডিজ।

বিশেষ অতিথি ছিলেন সংসদ সদস্য নাহিম রাজ্জাক। সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ভারতের কেন্দ্রীয় দূষণ বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান এস পি গৌতম। বক্তব্য দেন বাংলাদেশ সেন্টার ফর হলিস্টিক স্টাডিজের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্থ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স অনুষদের ডিন জিল্লুর রহমান, সাবেক পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের সচিব মিহির কান্তি মজুমদার, সেন্টার ফর পার্টিসিপেটরি রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের প্রধান নির্বাহী মো. শামসুদ্দোহা ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের সাবেক প্রধান প্রকৌশলী অখিল কুমার বিশ্বাস।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ‘হাওরে যাঁরা বসবাস করেন, তাঁদের হক আছে শহরে যাওয়ার জন্য। সরকারের আর্থিক অবস্থাও ভালো ছিল। তখন আমরা হাওরে চমৎকার সড়ক নির্মাণ করেছি। কিন্তু এখন টের পাচ্ছি, ওই সড়ক বানিয়ে নিজেদের পায়ে কুড়াল মেরেছি। এটা আরও ক্ষতি হবে।’

হাওরের বুক চিরে পিচঢালা পথ

প্রধানমন্ত্রী হাওরে বাঁধ ও সড়ক নির্মাণ না করতে নির্দেশ দিয়েছেন উল্লেখ করে এম এ মান্নান বলেন, হাওরাঞ্চলে কোনো উন্নয়ন প্রকল্প তৈরি করা হলে, সেটি ভালো করে যাচাই-বাছাই করতে বলেছেন তিনি। হাওরে সড়ক নির্মাণ-সংক্রান্ত আর কোনো প্রকল্প নেওয়া হবে না। কারণ, হাওরে সড়ক নির্মাণ করে মঙ্গলের চেয়ে অমঙ্গল হয়েছে। তবে কী কী অমঙ্গল হয়েছে, সে বিষয়ে সেমিনারে কিছু বলেননি তিনি।

পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, সরকারের কাজের মধ্যে দ্বৈতকরণ হচ্ছে। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মধ্যে কাজে সমন্বয়হীনতা দেখা যাচ্ছে। গভীরভাবে অনেক কিছু দেখা হয় না। সব চাহিদা পূরণ না করেই বিভিন্ন মন্ত্রণালয় তাদের প্রকল্প পরিকল্পনা কমিশনে অনুমোদনের জন্য পাঠিয়ে দেয়। কর্মকর্তাদের গুরুত্ব দিয়ে কাজ করার ওপর গুরুত্ব দেন তিনি।

সড়কের কারণে হাওরে কী ধরনের ক্ষতি হচ্ছে—এ বিষয়ে জানতে শনিবার রাতে কথা হয় পরিকল্পনামন্ত্রীর সঙ্গে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, সড়কের কারণে পানির চলাচলের পথ রুদ্ধ হচ্ছে। বর্ষার সময়ে পানি উপচে বাড়িঘরে উঠছে। হাওরের জীববৈচিত্র্য নষ্ট হচ্ছে। হাওরের নিজস্ব প্রজাতির মাছ, গাছ—হিজল, কড়চ, পানকৌড়িসহ বিভিন্ন প্রাণী-বৃক্ষ ধ্বংস হচ্ছে। হাওরকে হাওর হিসেবেই থাকতে দেওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেন তিনি।

উল্লেখ্য, ২০২০ সালে কিশোরগঞ্জে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দীর্ঘ ইটনা-মিঠামইন ও অষ্টগ্রাম সড়ক চালু করে সরকার।