আগুন লাগার পর ধোঁয়ায় ঢেকে যায় পুরো ভবন
আগুন লাগার পর ধোঁয়ায় ঢেকে যায় পুরো ভবন

বেইলি রোডে ভবনে আগুন: এত মৃত্যুর কারণ কী, যা বলছেন চিকিৎসকেরা

রাজধানীর বেইলি রোডে ভবনে আগুনে ৪৬ জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী সামন্ত লাল সেন। হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, মৃত ব্যক্তিদের বেশির ভাগের শরীরে পোড়া দাগ নেই। কারও কারও পোড়া দাগ থাকলেও তা মৃত্যুঝুঁকির মতো মারাত্মক নয়।

তাহলে এত মৃত্যুর কারণ কী? চিকিৎসকেরা বলছেন, মৃত্যুর কারণ ‘কার্বন মনোক্সাইড পয়জনিং’, যাকে সহজ ভাষায় বিষাক্ত কালো ধোঁয়া বলা যায়।

শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক ও ইউনিটপ্রধান (অরেঞ্জ) প্রবীর চন্দ্র দাস আজ শুক্রবার দুপুর সোয়া ১২টার দিকে প্রথম আলোকে বলেন, যে কয়জন মারা গেছেন, তাঁদের সবার মৃত্যুর কারণ পরীক্ষা করা সম্ভব হয়নি। তবে বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে ১০ জনকে আহত ভেবে আনা হয়েছিল।

তাঁদের মৃত্যুর কারণ পরীক্ষা করে দেখা গেছে তা কার্বন মনোক্সাইড পয়জনিং।
প্রবীর চন্দ্র দাস আরও বলেন, আহত ব্যক্তিরা আধা ঘণ্টা থেকে ৪৫ মিনিট বদ্ধ ঘরে কালো ধোঁয়ার মধ্যে আটকে ছিলেন।

বৃহস্পতিবার রাত পৌনে ১০টার দিকে বেইলি রোডের ছয়তলা ভবনটিতে আগুন লাগে। ফায়ার সার্ভিসের ১৩টি ইউনিটের চেষ্টায় রাত ১১টা ৫০ মিনিটের দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে।

আগুনে ভেঙেচুরে গেছে ভবনের সবকিছু

আগুন নেভানোর পর হতাহত ব্যক্তিদের উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে নেওয়া হয়। রাতেই জানানো হয়, মারা গেছেন ৪৫ জন।

রাত দেড়টার দিকে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাইন উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, আহত ব্যক্তিদের মধ্যে আগুনে পোড়ার ক্ষতচিহ্ন কম। তাঁরা মূলত কালো ধোঁয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন।  

স্বাস্থ্যমন্ত্রী সামন্ত লাল সেন আজ সকালে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে গিয়ে সাংবাদিকদের বলেন, মারা গেছেন মোট ৪৬ জন। আহত রয়েছেন ১২ জন। তাঁদের কেউ শঙ্কামুক্ত নন।

স্বাস্থ্যমন্ত্রীও কার্বন মনোক্সাইড পয়জনিংয়ের কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘এটা বদ্ধ ঘর থেকে বের হতে পারে না, তখন ওই ধোঁয়া শ্বাসনালিতে চলে যায়। (বেইলি রোডের আগুনের ঘটনায় ভুক্তভোগী) প্রত্যেকেরই তা হয়েছে। যাঁদের বেশি হয়েছে, তাঁরা মারা গেছেন। যাঁরা বেঁচে আছেন, তাঁরা কেউ শঙ্কামুক্ত নন।’

বেইলি রোডে আগুনের ঘটনায় জীবিত উদ্ধার হওয়া ও ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, ছয়তলা ভবনটির নিচতলায় আগুন লাগার পর তা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। ওপরের তলা থেকে ৫০ জনের মতো মানুষ ছাদে আশ্রয় নেন। অনেকে ভবনের বিভিন্ন তলায় ছিলেন। সেখানে প্রচণ্ড কালো ধোঁয়ার কারণে তাঁদের শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছিল।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ও বায়ুদূষণ গবেষক আবদুস সালাম প্রথম আলোকে বলেন, কোথাও আগুন লাগার পর অক্সিজেনের অভাব তৈরি হলে কার্বন মনোক্সাইড তৈরি হয়। এটার কারণে মানুষের মৃত্যু হতে পারে, অক্সিজেনের অভাবেও মৃত্যু হতে পারে। তিনি আরও বলেন, আগুন লাগলে মানুষকে সেখান থেকে দ্রুত বের করে আনার ব্যবস্থা থাকতে হবে। বাংলাদেশে সেখানে ব্যাপক ঘাটতি রয়েছে।

ফায়ার সার্ভিস জানিয়েছে, বেইলি রোডের যে ভবনে আগুন লেগেছে, সেটির নিচতলায় দুটি ইলেকট্রনিক সরঞ্জাম বিক্রির দোকান ও একটি জুসবার (ফলের রস বিক্রির দোকান) ছিল। দ্বিতীয় তলায় কাচ্চি ভাই নামের একটি রেস্তোরাঁ, তৃতীয় তলায় ইলিয়ন নামের একটি পোশাকের ব্র্যান্ডের দোকান, চতুর্থ তলায় খানাস ও ফুকো নামের দুটি রেস্তোরাঁ, পঞ্চম তলায় পিৎজা ইন নামের একটি রেস্তোরাঁ, ষষ্ঠ তলায় জেস্টি ও স্ট্রিট ওভেন নামের দুটি রেস্তোরাঁ এবং ছাদের একাংশে অ্যামব্রোসিয়া নামের একটি রেস্তোরাঁ ছিল।  

বেইলি রোডে পুড়ে যাওয়া সাততলা ভবন। আজ শুক্রবার সকালের ছবি

বেইলি রোডের ভবনটিতে কোনো অগ্নিনিরাপত্তাব্যবস্থা ছিল না বলে আজ দুপুরে জানান ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাইন উদ্দিন। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ঝুঁকিপূর্ণ জানিয়ে ভবন কর্তৃপক্ষকে তিনবার চিঠি দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক আবদুস সালাম বলেন, নোটিশ দেওয়ার পরও ব্যবস্থা না নেওয়ার কারণে কটি ভবন সিলগালা করে দেওয়া হয়েছে, সেটা নিয়ে প্রশ্ন তোলা উচিত।