অন্তর্বর্তী সরকারের আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল
অন্তর্বর্তী সরকারের আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল

মতামত প্রকাশে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে করা মামলা রহিত হবে

অন্তর্বর্তী সরকারের আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেছেন, ‘যাঁরা সাংবাদিক, মুক্ত মনের মানুষ, ভিন্নমতের মানুষ, তাঁদের বক্তব্যের জন্য, তাঁদের যেকোনো ধরনের মতামত প্রকাশের জন্য যেসব মামলা করা হয়েছিল, সেগুলো একসঙ্গে রহিত হয়ে যাবে।’

শুক্রবার রাজধানীর ঢাকা ক্লাবে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ) আয়োজিত ‘বেস্ট রিপোর্টিং অ্যাওয়ার্ড-২০২৪’ প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় আসিফ নজরুল এ কথা বলেন।

আসিফ নজরুল বলেন, ‘আমরা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন প্রত্যাহার করছি। এটি অনেক আগে আমরা ঘোষণা দিয়েছিলাম, অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনা করেছিলাম। আইনটি যখন আমরা বাতিল করব, হয়রানিমূলক যতগুলো মামলা আছে, সঙ্গে সঙ্গে রহিত হয়ে যাবে। তবে কম্পিউটার অফেন্স বা কম্পিউটার হ্যাকিং–সম্পর্কিত মামলাগুলোর বিচার অব্যাহত থাকবে।’

আইন উপদেষ্টা বলেন, ‘আমাদের এখানে তো মেয়েদের ওপর নির্যাতন বেশি হয়। কোনো ছেলে–মেয়ের ঘনিষ্ঠতা থাকাকালে ছবি দিয়ে হয়তো ব্ল্যাকমেল করার চেষ্টা করা হয়, এমন দু–এক ধরনের অপরাধের বিচার অব্যাহত থাকবে।’

আসিফ নজরুল আরও বলেছেন, ‘আমরা প্রচণ্ডভাবে সাংবাদিকবান্ধব থাকার চেষ্টা করছি। আমাদের সরকারের পক্ষ থেকে কোনো সাংবাদিকের বিরুদ্ধে কোনো হয়রানিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। সরকার বা পুলিশ কোনো সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মামলা করেনি। সাধারণ জনগণ মামলা করেছে।’

মামলার বিষয়ে আইন উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘যেই মানুষটা ফ্যাসিস্ট স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা সরকারের পুলিশ বাহিনী বা গুন্ডা বাহিনীর হাতে তাঁর সন্তানকে হারিয়েছেন, ভাইকে হারিয়েছেন। তারপর তিনি যখন পর্দা বা স্ক্রিনে দেখতেন যে কোনো একজন সাংবাদিক বলছেন, যাদের দমন করা হচ্ছে তারা রাজাকার, পাকিস্তানপন্থী। আমরা সম্পূর্ণরূপে এটি সমর্থন করি। আরও শক্তভাবে দমন করা হোক। সেই মানুষের যদি মনে হয়, আমার সন্তান বা ভাইয়ের মৃত্যুর জন্য সাংবাদিকের এই প্রভোকেশন (প্ররোচনা) দায়ী; তাহলে সেই মানুষকে মামলা করা থেকে আপনি কোনোভাবেই বিরত রাখতে পারবেন না। তবে সবকিছু যেন আইন অনুযায়ী হয়, এ জন্য আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করব।’

আসিফ নজরুল বলেন, ‘সবারই মনে রাখা উচিত, আমাদের  পেশাগত পরিচয়ের বাইরে যেন কোনো কিছু না হয়ে যায়।’ কক্সবাজারের টেকনাফের সাবেক সংসদ সদস্যকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, ‘আপনারা কেউ বদিকে রাজনীতিক বলেন, বলেন না তো? তাঁকে ইয়াবা ব্যবসায়ী বলেন। তিনি যতই রাজনীতি করুন।’

সত্যিকারের পেশাজীবী সাংবাদিকদের নেতৃত্বে আনার পরামর্শ দিয়ে আইন উপদেষ্টা বলেন, ‘একজন সাংবাদিক, তিনি যতই সাংবাদিকতা করুন, তিনি যদি গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, অবৈধ  নির্বাচন, বাংলাদেশকে লুট করা, বাংলাদেশকে প্রতিবেশী রাষ্ট্রের পদাবনত করে রাখাকে অব্যাহতভাবে প্রকাশ্যে সমর্থন করেন; একটি ফ্যাসিস্ট সরকারকে যদি প্রকাশ্যে সমর্থন করেন; তাঁকে কি আপনারা সাংবাদিক বলবেন? না অন্য কিছু বলবেন, চিন্তা করে দেখবেন।’ তিনি আরও বলেন, বহু সাংবাদিক আছেন, যাঁরা ফ্যাসিস্ট সরকারের পদলেহী হননি। তাঁরা সত্য ও ন্যায়ের পথে ছিলেন।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, গণতন্ত্র ও পরিবেশ সুরক্ষায় নিরপেক্ষ ও নির্ভীক সাংবাদিকতা অপরিহার্য।  নির্ভরযোগ্য সাংবাদিকতার পরিবেশ বজায় রাখতে বর্তমান সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। গণমাধ্যম কমিশন গঠন করা হয়েছে, যাতে সাংবাদিকেরা নিরপেক্ষভাবে কাজ করতে পারেন এবং জনগণ উপকৃত হন।

‘ডিআরইউ-দেশ টিভি বেস্ট রিপোর্টিং অ্যাওয়ার্ড-২০২৪’ অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন দেশ টেলিভিশন লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আরিফ হাসান, জুরিবোর্ডের প্রধান ও ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাবেক সভাপতি এম শফিকুল করিম। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ডিআরইউর সভাপতি সৈয়দ শুকুর আলী শুভ। স্বাগত বক্তব্য দেন ডিআরইউর সাধারণ সম্পাদক মহি উদ্দিন।