ছাত্র অধিকার পরিষদ থেকে পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন সংগঠনটির ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার ২১ নেতা। কারণ হিসেবে তাঁরা বলছেন, ছাত্র অধিকারের কেন্দ্রীয় নেতারা নুরুল হকের নেতৃত্বাধীন গণ অধিকার পরিষদে গিয়ে দলীয় লেজুড়বৃত্তি করছেন। এতে স্বতন্ত্র ছাত্রসংগঠন হিসেবে ছাত্র অধিকার পরিষদের অবস্থান ক্ষুণ্ন হচ্ছে।
আজ রোববার বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে একযোগে পদত্যাগের ঘোষণা দেন ছাত্র অধিকার পরিষদের ২১ নেতা। সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটির ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি আসিফ মাহমুদ, সাধারণ সম্পাদক আহনাফ সাঈদ খানসহ বেশ কয়েকজন নেতা উপস্থিত ছিলেন। এ সময় লিখিত বক্তব্যে ২১ নেতার সই ছিল।
সম্প্রতি গণ অধিকার পরিষদের দুই পক্ষের (রেজা কিবরিয়া ও নুরুল হক) দ্বন্দ্বে দলে অস্বস্তি তৈরি হয়। এমন প্রেক্ষাপটে ছাত্র অধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি বিন ইয়ামিন ও সাধারণ সম্পাদক আরিফুল নুরুল হকের পক্ষ নেন। একপর্যায়ে ১ জুলাই বিন ইয়ামিন ও আরিফুল গণ অধিকার পরিষদের (নুরুল হক-রাশেদ খান অংশ) সদস্যপদ গ্রহণ করেন। এর আগে ২১ জুন এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিন ইয়ামিন ও আরিফুল গণ অধিকার পরিষদে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে দলের নুরুল হক নেতৃত্বাধীন অংশের নেতৃত্বে রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় অংশ নেওয়ার ঘোষণা দেন।
এমন প্রেক্ষাপটে আজ সংবাদ সম্মেলন ডাকেন ছাত্র অধিকারের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার নেতারা। সেখানে লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান সংগঠনের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি আসিফ মাহমুদ। এতে বলা হয়, ছাত্র অধিকার পরিষদ কোটা সংস্কার আন্দোলনের মাধ্যমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গড়ে ওঠা একটি ছাত্রসংগঠন। কোনো প্রকার দলীয় লেজুড়বৃত্তি না করে শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ে সোচ্চার থাকাই ছিল এর অন্যতম লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য। ১০ জুলাই সংগঠনের প্রতিষ্ঠার ঘোষণাপত্র ও গঠনতন্ত্র লঙ্ঘন করে ছাত্র অধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি বিন ইয়ামিন মোল্লা ও সাধারণ সম্পাদক আরিফুল ইসলাম কর্তৃক গণ অধিকার পরিষদের লেজুড়বৃত্তি করার অভিযোগ তোলে সংগঠনের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা।
লিখিত বক্তব্যের পর সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে আসিফ মাহমুদ বলেন, ‘আমরা ছাত্রলীগ ও ছাত্রদলের বাইরে একটা লেজুড়বৃত্তিহীন ছাত্রসংগঠন প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলাম, যা কোনো রাজনৈতিক দলের দাসত্ব করবে না৷ ছাত্র অধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক গণ অধিকার পরিষদের পদ নেওয়া এবং গণ অধিকারের লেজুড়বৃত্তি করার প্রাতিষ্ঠানিক ঘোষণার মাধ্যমে ছাত্রসমাজের সঙ্গে প্রতারণা করেছেন। এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ করার আগে প্রায় ১০ দিন আলোচনা করেছি, কিন্তু কোনো সমাধান পাইনি৷ ছাত্র অধিকারের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক পদ ছেড়ে নতুন কাউন্সিল দিতে রাজি নন। শিক্ষার্থীদের প্রতি আমাদের যে প্রতিশ্রুতি ছিল, তা ছাত্র অধিকার পরিষদে থেকে আর রক্ষা করা সম্ভব নয়৷ তাই আমরা পদত্যাগ করছি।’
সংবাদ সম্মেলনে আরও বক্তব্য দেন ছাত্র অধিকারের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক আহনাফ সাঈদ খান ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নুসরাত তাবাসসুম।
এদিকে এ সংবাদ সম্মেলন থেকে তোলা অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে ছাত্র অধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক আরিফুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘২০১৯ সালে ছাত্র অধিকার পরিষদের খসড়া গঠনতন্ত্র প্রণীত হয়েছে। অর্থাৎ বর্তমান গঠনতন্ত্রটি একটি খসড়া গঠনতন্ত্র। এটিকে গাইডলাইন ধরেই আমরা সংগঠন পরিচালনা করতাম। ২০১৯ সালের রাজনৈতিক বাস্তবতায় আমরা আন্দোলনকেন্দ্রিক একটি সংগঠন ছিলাম। ২০২০ সালে রাজনৈতিক ছাত্রসংগঠন হিসেবে আমাদের আত্মপ্রকাশ ঘটে। আমাদের সংগঠনে একটি রাজনৈতিক প্রক্রিয়া এখনো চলমান। আগামী কাউন্সিলে গঠনতন্ত্র চূড়ান্ত হবে।’
লেজুড়বৃত্তির অভিযোগের বিষয়ে আরিফুল বলেন, ‘আমরা দলীয় লেজুড়বৃত্তির জায়গা থেকে গণ অধিকার পরিষদের পদ নিইনি। বরং গণ অধিকারের প্রথম কাউন্সিলে দলের উদ্যোক্তা হিসেবে আমাদের দুজনকে (তিনি ও বিন ইয়ামিন) সম্মানসূচক ভোটাধিকার দেওয়া হয়েছিল। আমাদের এই সদস্যপদ কোনো দাপ্তরিক বা সাংগঠনিক কাজের জন্য নয়৷ এ ক্ষেত্রে গঠনতন্ত্রে কোনো বাধা নেই।’
সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন থেকে ২০১৮ সালে গঠিত হয়েছিল সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ। পরে ২০১৯ সালের মার্চে অনুষ্ঠিত ডাকসু নির্বাচনে এই সংগঠনের প্যানেল থেকে প্রার্থী হয়ে ভিপি নির্বাচিত হয়েছিলেন নুরুল হক। তাঁর আরেক সঙ্গী আখতার হোসেন হয়েছিলেন ডাকসুর সমাজসেবা সম্পাদক। ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে এই সংগঠনের নাম পরিবর্তন করে ছাত্র অধিকার পরিষদ করা হয়।