শুধু পাঠ্যপুস্তক পড়ে দিন কাটালে চলবে না। গল্পের বই পড়তে হবে। ক্রিকেট খেলতে হবে। ছবি আঁকতে হবে। চারপাশে যা কিছু আনন্দের, উপভোগের—সবকিছুই করতে হবে। বিজ্ঞান ক্লাব করতে হবে। কিশোর আলো ক্লাব করতে হবে। তবেই বড় হওয়া যাবে। বৃহস্পতিবার কিশোর আলোর (কিআ) সম্পাদক আনিসুল হক চট্টগ্রামের খুদে শিক্ষার্থীদের এভাবেই উৎসাহ জোগান।
কিশোর আলোর নবম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত এ আনন্দ অনুষ্ঠানে প্রথম আলোর সহযোগী সম্পাদক, কথাসাহিত্যিক আনিসুল হক চট্টগ্রামের বিভিন্ন বিদ্যালয়ের শতাধিক শিক্ষার্থীকে স্বপ্নের গল্প শোনান। শোনান এগিয়ে যাওয়ার গল্পও।
চট্টগ্রাম নগরের জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে ‘স্বপ্নের গল্প’ শিরোনামে আনন্দ আয়োজনের শুরুটা হয় বেলা সাড়ে তিনটায়। একাডেমির আর্ট গ্যালারিতে প্রথমে ‘আমার স্বপ্ন’ বিষয়ে চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতার আসর বসে। এতে চট্টগ্রামের বিভিন্ন বিদ্যালয়ের শতাধিক শিক্ষার্থী অংশ নেয়। তারা রং-তুলিতে তাদের স্বপ্নের প্রকাশ ঘটায়।
প্রতিযোগিতা শেষে শুরু হয় মূল আয়োজন। কিশোর আলো সম্পাদক আনিসুল হক ও প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক বিশ্বজিৎ চৌধুরীর কথা শুনতে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকেরা হাজির হন একাডেমির মিলনায়তনে। তাঁরা মঞ্চে ওঠার আগেই কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায় মিলনায়তন। একপর্যায়ে আনিসুল হক খুদে শিক্ষার্থীদের মঞ্চের সামনের মেঝেতে বসার জায়গা করে দেন। এরপর পুরো অনুষ্ঠানটাই প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে ওই শিক্ষার্থীদের উচ্ছ্বাস আর উল্লাসে।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন বিশ্বজিৎ চৌধুরী। তিনি বলেন, কিশোর আলোতে গল্প, কবিতা, ছড়া, কমিকস সবই আছে। এসব লেখা আকৃষ্ট করে, মন কেড়ে নেয়।
সমাপনী বক্তব্যে আনিসুল হক শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন, ‘তোমরা লেখার চেষ্টা করো। পত্রিকা পড়ো। কিশোর আলো পড়ো। পত্রপত্রিকা পড়া ছাড়া বড় হওয়া যায় না।
পাশাপাশি পরীক্ষার ফলটাও ভালো করো। তবে শুধু ফল দিয়ে মানবিক মানুষ হওয়া যাবে না।’ তিনি বলেন, ‘তোমরা নেতা হও। গানের দলের নেতা হও। ছবি আঁকায় নেতা হও। পড়াশোনাও করো। সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডেও অংশ নাও।’
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আত্মত্যাগের প্রসঙ্গ টেনে সাহিত্যিক আনিসুল হক বলেন, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি কে—তা নিয়ে বিবিসি বাংলা একবার জরিপ করেছিল। জরিপে দেখা যায় বঙ্গবন্ধু সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি। বঙ্গবন্ধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর কর্মচারীদের অধিকার আদায়ে আন্দোলন করেছিলেন।
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাঁকে বহিষ্কার করে। বঙ্গবন্ধু ক্লাসের প্রথম ছিলেন না। কিন্তু মুক্তির আন্দোলন করেছিলেন। এ জন্য বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছিল।
আয়োজনে আরও বক্তব্য দেন কার্টুনিস্ট নাইমুর রহমান। গান শোনান সংগীতশিল্পী তানভীর ইভান ও তিশা দেওয়ান। জাদু পরিবেশন করেন ফয়সাল হাওলাদার। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন চট্টগ্রাম কিশোর আলো বুক ক্লাবের সদস্য সারাফাত নুর চৌধুরী ও নাজিফা তাজনুর।
রং-তুলিতে স্বপ্ন আঁকা
একটা ছোট মেয়ে। তার দুপাশে থরে থরে সাজানো শত শত বই। আর মেয়েটি দৌড়ে যাচ্ছে বইয়ের দিকে। রং-তুলিতে এই দৃশ্যটি এঁকেছে চট্টগ্রাম নগরের রেলওয়ে পাবলিক স্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্রী নুরে জান্নাত। এই চিত্রের জন্য জান্নাত একটি বিভাগে প্রথম পুরস্কার জিতে নেয়।
প্রতিযোগিতায় মোট তিনটি বিভাগে শিক্ষার্থীরা অংশ নেয়। আরেক শিক্ষার্থী সাবিহা তাবাসসুমের রং-পেনসিলে উঠে আসে কিশোর আলো পড়ার গল্প। পাঁচ বন্ধু মিলে কিশোর আলো পড়ছে—এমন দৃশ্য ধরা পড়ে তার চিত্রকর্মে। এ ছাড়া শিক্ষার্থীদের কেউ বাড়িঘর, কেউ পাহাড় আর কেউ সমুদ্র এঁকে প্রশংসা কুড়ায়।
চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতার বিচারক ছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের শিক্ষক সুব্রত দাশ ও সাদাতউদ্দিন আহমেদ। অনুষ্ঠানে চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতায় তিনটি বিভাগে ৯ শিক্ষার্থীকে পুরস্কৃত করা হয়।
প্রাণবন্ত আড্ডা
কিশোর আলো নিয়ে শিক্ষার্থীদের মনে ছিল নানা প্রশ্ন। কিশোর আলো সম্পাদক আনিসুল হক, সহকারী সম্পাদক পাভেল মহিতুল আলম ও আদনান মুকিতকে পেয়ে শিক্ষার্থীরা একের পর এক প্রশ্ন ছুড়ে দেয়। আর তিনজনই মজায় মজায় এসব প্রশ্নের উত্তর দেন। এক শিক্ষার্থী জিজ্ঞেস করে, কিশোর আলো কেন এত রোগা হয়ে যাচ্ছে।
জবাবে আনিসুল হক বলেন, ‘কিশোর আলো নিয়ে তোমাদের আগ্রহ আছে। তোমরা পড়তে থাকো। আবার বড় হয়ে যাবে।’
অনুশা মজুমদার নামের এক শিক্ষার্থী কিশোর আলোতে পাঠানো চিঠির উত্তর কে দেন, তা জানতে চায়। আনিসুল হক জানান, এসব চিঠির উত্তর দেন আদনান মুকিত। অহনা সরকার নামের আরেক শিক্ষার্থী জানতে চায়, শুরুতে কিশোর আলো বের করার সময় কোনো ভয় ছিল কি না। উত্তরে আনিসুল হক বলেন, অভিভাবকেরা কিশোর আলো কিনে দেন। এটি বেশ আনন্দের বিষয়। মানুষ হতে চাইলে বই পড়তে হবে। কিশোর আলোতে গল্প, উপন্যাস সবই আছে। এটিও পড়তে হবে।
উপহার হিসেবে শিক্ষার্থীদের দেওয়া হয় কিশোর আলোর নতুন সংখ্যা।