বিশ্ব শ্বেতী রোগ দিবস উপলক্ষে ইনসেপ্টা ফার্মাসিউটিক্যালস আয়োজিত গোলটেবিল বৈঠকে আলোচকেরা। ঢাকা, ২৬ জুন
বিশ্ব শ্বেতী রোগ দিবস উপলক্ষে ইনসেপ্টা ফার্মাসিউটিক্যালস আয়োজিত গোলটেবিল বৈঠকে আলোচকেরা। ঢাকা, ২৬ জুন

শ্বেতী রোগে আতঙ্ক নয়, প্রয়োজন সচেতনতা ও যথাসময়ে চিকিৎসা

শ্বেতী রোগ নিয়ে আতঙ্কের শেষ নেই। এটি ছোঁয়াচে ও অভিশপ্ত রোগ, এ রোগ হলে আর কখনো ভালো হয় না—এমন অনেক কুসংস্কার আর ভ্রান্তি আছে। কিন্তু একটু সচেতন হলে বা যথাসময়ে চিকিৎসা নিলে শ্বেতী রোগ ভালো হয়, এটাও অনেকে জানেন না।

২৫ জুন ছিল ‘বিশ্ব শ্বেতী রোগ দিবস’। বর্তমানে সারা বিশ্বে প্রায় ১০ কোটি মানুষের বেশি এই রোগে আক্রান্ত। প্রয়াত পপ তারকা মাইকেল জ্যাকসনও এই রোগে আক্রান্ত ছিলেন। তাই মাইকেল জ্যাকসনের মৃত্যুদিবস ২৫ জুন প্রতিবছর বিশ্বজুড়ে পালিত হয় ‘ওয়ার্ল্ড ভিটিলিগো ডে’ বা বিশ্ব শ্বেতী রোগ দিবস।

‘বিশ্ব শ্বেতী রোগ দিবস ২০২৪’ উপলক্ষে ২৬ জুন রাজধানীতে চ্যানেল আই অডিটরিয়ামে ইনসেপ্টা ফার্মাসিউটিক্যালস আয়োজন করে বিশেষ গোলটেবিল আলোচনার। আলোচনায় উঠে আসে এই রোগ নিয়ে নানা ভ্রান্ত ধারণা, আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা এবং জীবনযাপনের প্রণালির কথা।

আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চর্ম ও যৌনব্যাধি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক রাশেদ মো. খান, শহীদ মনসুর আলী মেডিকেল কলেজের চর্ম ও যৌন রোগ বিভাগের সাবেক বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক মেজর (অব.) মো. শহীদুল্লাহ, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজের চর্ম ও যৌন রোগ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান মো. আকরাম হোসেন এবং এনাম মেডিকেল কলেজের চর্ম ও যৌন রোগ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ফাতেমা তুজ জোহরা। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন জাতীয় বক্ষব্যাধি ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের রেসপিরেটরি মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক জিয়াউল করিম।

আলোচনার শুরুতে শ্বেতী রোগ কী, কেন হয়, এ নিয়ে কথা বলেন অধ্যাপক রাশেদ মো. খান। তিনি জানান, শ্বেতী রোগ ত্বকের একটি রোগ। ইংরেজিতে একে বলা হয় ভিটিলিগো। তিনি বলেন, ‘আমাদের ত্বকের মধ্যে মেলানোসাইট কোষে থাকে মেলানিন, যা ত্বকের স্বাভাবিক রঙের ভারসাম্য রক্ষা করে। মেলানিনের কার্যকলাপে বাধা সৃষ্টি হলে বা ভারসাম্য নষ্ট হলে দেখা দেয় এই রোগ। শ্বেতী বা ধবল বংশগত কারণে হতে পারে। তবে তা খুব কম পরিমাণে। ৬ শতাংশ হয়ে থাকে বংশগত কারণে। বাকিদের ক্ষেত্রে শ্বেতী সাদা দাগ ছড়াতে থাকে নিজস্ব কারণে, যার মূলে রয়েছে মেলানিনের কারসাজি।’

শ্বেতী রোগ নিয়ে সমাজে আছে নানা ধরনের কুসংস্কার। এ বিষয়ে মো. শহীদুল্লাহ বলেন, শ্বেতী আক্রান্ত রোগীকে দেখলে আঁতকে ওঠার কিছু নেই। এটা মোটেও ছোঁয়াচে রোগ নয়। তাই আঁতকে ওঠার বা নেতিবাচকভাবে দেখার কিছু নেই। শ্বেতী রোগীরা বেশির ভাগই মানসিক অবসাদে ভোগেন। অন্যরাও তাঁদের এড়িয়ে চলেন। কিন্তু এটি ছোঁয়াচে বা অভিশপ্ত কোনো রোগ নয়, কুসংস্কার এড়িয়ে যথাযথ চিকিৎসা নিলে ভালো থাকা যায়।

‘শ্বেতী রোগীরা যতটা না নিজের শরীর নিয়ে অস্বস্তিতে থাকেন, তার চেয়ে বেশি অবসাদে ভোগেন সামাজিক চাপের জন্য। সবাই তাদের বাঁকা চোখে দেখেন। এ কারণে মানসিকভাবে বিষণ্ন থাকেন তাঁরা। পরিবার ও সমাজ তাঁদের মানসিক সহায়তা দিলে অবসাদগ্রস্ততা কাটিয়ে উঠতে পারবেন।’ বলেন মো. আকরাম হোসেন।

ফাতেমা তুজ জোহরা বলেন, ‘শ্বেতী রোগীর ক্ষেত্রে আমরা দেখি সাধারণত মুখমণ্ডল, কনুই, বুকের ত্বক প্রথমে আক্রান্ত হতে শুরু করে। কখনো কখনো শ্বেতী চোখের পাশ দিয়ে, নাকের দুই পাশে বা ঠোঁটের কোণ বা ওপরের ত্বকেও শুরু হয়। ৫০ শতাংশ শ্বেতী ধরা পড়ে বয়স বছর দশেক হওয়ার পর। জিনগত শ্বেতী ছাড়াও অনেক সময় নারীরা বিভিন্ন রং ফর্সাকারী ক্রিম ব্যবহার করে। এটা খুব ভয়ংকর। এর কারণে শ্বেতীর সঙ্গে সঙ্গে দেখা দেয় ক্যানসার হওয়ার ঝুঁকিও।’

আলোচনায় শ্বেতী রোগীদের সুস্থ জীবনযাপনের জন্য গুরুত্বারোপ করা হয় স্বাস্থ্যকর জীবনধারা বজায় রাখাতে। সক্রিয় থাকতে হবে, প্রচুর পরিমাণে পানি পান করতে হবে। সেই সঙ্গে পর্যাপ্ত ঘুম ও সুষম খাবার গ্রহণ করতে বলা হয়।

এই রোগের চিকিৎসা নিয়ে রাশেদ মো. খান বলেন, ‘ছোট আকৃতির ও সীমিত শ্বেতী মলম বা ওষুধে সেরে যেতে পারে। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী মলম লাগানো বা ওষুধ সেবনের পাশাপাশি সকালবেলার রোদ লাগাতে হবে শ্বেতী আক্রান্ত স্থানে। বড় আকারের শ্বেতী হলে মলম আর ওষুধে কাজ হতে প্রায় দুই বছর লাগতে পারে। ওষুধে কাজ না হলে অস্ত্রোপচার। যত অল্প বয়সে শ্বেতীর চিকিৎসা শুরু করা যায় তত ভালো।’

বর্তমানে এই রোগের চিকিৎসাসামগ্রী সহজলভ্য করতে কাজ করে যাচ্ছে দেশের চিকিৎসাব্যবস্থা আর ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানগুলো। ইনসেপ্টা ফার্মাসিউটিক্যালসের ডিজিএম মোস্তফা কামাল পাশা জানান, ‘প্রযুক্তির উন্নয়নের জন্য উন্নত বিশ্বের ওষুধপত্রের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমরা আমাদের ওষুধ তৈরি করতে পারছি। শ্বেতী রোগের ওষুধ যেন সহজলভ্য হয়, সেই লক্ষ্য কাজ করে যাচ্ছে ইনসেপ্টা ফার্মাসিউটিক্যালস।’