বিদ্যুৎ
বিদ্যুৎ

গরমে লোডশেডিংয়ে ভুগছে গ্রামের মানুষ

ঈদের ছুটির সময় বিদ্যুৎ নিয়ে স্বস্তিতে ছিল সবাই। ওই সময় দেশের অধিকাংশ প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় বিদ্যুৎ চাহিদা ছিল কম। তবে ১৪ এপ্রিল বৈশাখের প্রথম দিন থেকে দেশে তাপমাত্রা বাড়তে শুরু করে। বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান ও শিল্পকারখানা চালু হয়েছে। এতে বিদ্যুৎ চাহিদা প্রতিদিন বাড়ছে। কিন্তু চাহিদামতো বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যাচ্ছে না। এতে গরমের মধ্যে লোডশেডিংয়ে ভুগছে গ্রামের মানুষ।

বিদ্যুৎ বিভাগ, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) ও পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ (পিজিসিবি) সূত্র বলছে, দেশে এখন বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা প্রায় ২৬ হাজার মেগাওয়াট। গড়ে উৎপাদন করা হচ্ছে ১৩ হাজার থেকে ১৫ হাজার মেগাওয়াট পর্যন্ত। চাহিদা আছে সাড়ে ১৩ হাজার থেকে ১৬ হাজার মেগাওয়াট পর্যন্ত। গতকাল সোমবারও দিনের বেলায় প্রায় দেড় হাজার মেগাওয়াট লোডশেডিং করতে হয়েছে।

তবে রাজধানীতে বিদ্যুৎ সরবরাহে কোনো ঘাটতি নেই বলে জানিয়েছে ঢাকার দুই বিদ্যুৎ বিতরণ সংস্থা ডিপিডিসি ও ডেসকো। তবে কারিগরি কারণে কিছু কিছু এলাকায় বিদ্যুৎবিভ্রাট হচ্ছে। এতে দিনে ৩০ মিনিট পর্যন্ত বিদ্যুৎ না পাওয়ার অভিযোগ আছে গ্রাহকদের। ঢাকার বাইরে বিদ্যুৎ সরবরাহ করে পিডিবি, ওজোপাডিকো, নেসকো ও আরইবি। এর মধ্যে দেশের অধিকাংশ গ্রামাঞ্চলে বিদ্যুৎ সরবরাহ করে আরইবি। লোডশেডিংয়ে ভুগছে মূলত এ সংস্থার গ্রাহকেরা। মোট বিদ্যুৎ গ্রাহকদের ৫৫ শতাংশই এ সংস্থার অধীনে।

আরইবির দায়িত্বশীল সূত্র বলছে, গত শনিবার ঘণ্টায় তাদের সর্বোচ্চ লোডশেডিং ছিল ৬৯০ মেগাওয়াট। রোববার এটি বেড়ে হয় ৮২৪ মেগাওয়াট। আর গতকাল এটি হয় প্রায় ১ হাজার ৩০০ মেগাওয়াট। দিনের বেলাতে গতকাল তাদের চাহিদা ছিল ৮ হাজার ৮০০ মেগাওয়াট। এ সময় সরবরাহ পেয়েছে সাড়ে ৭ হাজার মেগাওয়াট। ঘাটতি মেটাতে বিভিন্ন এলাকায় লোডশেডিং করতে হয়েছে। সবচেয়ে বেশি লোডশেডিং হচ্ছে ময়মনসিংহ অঞ্চলে। এরপর রংপুর, কুমিল্লা, রাজশাহী অঞ্চল ছাড়াও ঢাকার আশপাশের জেলাগুলোতে লোডশেডিং করতে হচ্ছে।

পিডিবির কর্মকর্তারা বলছেন, গ্যাস সরবরাহ বাড়ানোর পর বিদ্যুৎ উৎপাদন বেড়েছে। কয়লা থেকেও সর্বোচ্চ ক্ষমতায় উৎপাদন করা হচ্ছে। তবে বিদ্যুৎকেন্দ্রের বকেয়া বিলের জটিলতায় তেলচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে পুরোদমে উৎপাদন করা যাচ্ছে না। এতে সরবরাহের কিছু ঘাটতি থেকে যাচ্ছে।

ময়মনসিংহে শহরের চেয়ে গ্রাম এলাকায় লোডশেডিং বেশি হচ্ছে। ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলার পুম্বাইল গ্রামের বাসিন্দা লুৎফুর রহমান বলেন, প্রচণ্ড গরমে বিদ্যুতের ঘন ঘন লোডশেডিংয়ের কারণে ভোগান্তি আরও বেড়েছে। দিনে ও রাতে বারবার বিদ্যুৎ চলে যায়।

ময়মনসিংহ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি ৩–এর মহাব্যবস্থাপক মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ বলেন, সোমবার দিনের বেলাতে প্রতি ঘণ্টায় ২৪ শতাংশ থেকে সর্বোচ্চ ৪৩ শতাংশ লোডশেডিং হয়েছে। চাহিদার চেয়ে সরবরাহ কম থাকলে লোডশেডিং হবেই। সরবরাহ বাড়ানোর জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বলা হয়েছে।

রংপুর শহরে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এলাকাভেদে ২ থেকে ৩ ঘণ্টা লোডশেডিং হলেও পল্লী বিদ্যুতের আওতাধীন গ্রাম পর্যায়ে লোডশেডিং হচ্ছে ৮ ঘণ্টার বেশি। দিনের বেলা কিছুটা কম হলেও রাতে বেশি সময় ধরে বিদ্যুৎ মিলছে না। জেলার গঙ্গাচড়া উপজেলার নবনিদাস গ্রামের আশরাফুল আলম বলেন, রাতের বেলা এক ঘণ্টা থাকলে দুই ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকে না। তবে দিনের বেলা কিছুটা বিদ্যুৎ পাওয়া যায়।

রংপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২-এর উপমহাব্যবস্থাপক খোরশেদ আলম বলেন, সরবরাহে ঘাটতি থাকার কারণে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ৮ ঘণ্টা লোডশেডিং করতে হচ্ছে।

ভোক্তা অধিকার সংগঠন কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জ্বালানি উপদেষ্টা এম শামসুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, সক্ষমতা বাড়িয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যাচ্ছে না। এখন বসিয়ে বসিয়ে বিদ্যুৎকেন্দ্রের ভাড়া দিচ্ছে সরকার। আর সরবরাহ ঘাটতি পুরোপুরি গ্রামে না চাপিয়ে শহরেও ভাগ করে দেওয়া উচিত। এতে গরমে গ্রামের মানুষের ভোগান্তি কিছুটা কমবে।

[তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন নিজস্ব প্রতিবেদক, রংপুর ও প্রতিনিধি, ময়মনসিংহ]