তাপপ্রবাহের কারণে বাংলাদেশ এবং এশিয়ার নারীরা সবচেয়ে বেশি বিপদে আছেন। পুরুষদের তুলনায় নারীদের শীতল স্থানে কষ্ট লাঘব করার সুযোগ ৬০ শতাংশ কম। ফলে শারীরিক সমস্যার বিপদ তো বটেই, নানা ধরনের মানসিক সমস্যাও তৈরি হচ্ছে নারীদের।
এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের (এডিবি) এক গবেষণায় এসব তথ্য উঠে এসেছে। আজ রোববার রাজধানীর একটি হোটেলে ওই গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়। একই সঙ্গে জাতিসংঘ শিশু তহবিল (ইউনিসেফ), ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন সংস্থা থেকে তাপপ্রবাহের প্রভাব নিয়ে করা চলমান গবেষণা এবং পর্যবেক্ষণ তুলে ধরা হয়। সেখানেও তাপপ্রবাহের কারণে নারীদের সমস্যা বেশি হওয়ার বিষয়টি উঠে আসে।
এডিবির সামাজিক উন্নয়ন বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিশেষজ্ঞ জোনাবিল উডস। গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে যেসব পরিস্থিতির সৃষ্টি হচ্ছে, তার মধ্যে সবচেয়ে বিপজ্জনক হচ্ছে তাপপ্রবাহ। এশিয়ায় বছরে ৪ লাখ ৮৯ হাজার মানুষ মারা যায় অতি উষ্ণতার কারণে। এর মধ্যে ৪৫ শতাংশ মানুষের মৃত্যু হয় এশিয়া মহাদেশে। তাপপ্রবাহের সময়ে বিদ্যুতের চাহিদা প্রায় দ্বিগুণ হয়। এতে বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে লোডশেডিং বাড়ছে।
গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, গরম আবহাওয়া মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য বিপজ্জনক হয়ে উঠছে। মেজাজ খিটখিটে হওয়া এবং মানসিক রোগে (সিজোফ্রেনিয়া) আক্রান্ত হওয়া মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। মানুষ আগ্রাসী মনোভাবাপন্ন হয়ে উঠেছে। এ অঞ্চলের অধিবাসীদের ৫ দশমিক ৩ শতাংশ কর্মসময় নষ্ট হচ্ছে। এটা শুধু শারীরিক সমস্যা তৈরি করছে না। শিশুদের চিন্তা ও বুদ্ধিবৃত্তিক ক্ষমতা কমিয়ে দিচ্ছে।
গবেষণায় বলা হয়, বৈশ্বিক গড়ের তুলনায় এশিয়ায় তাপমাত্রা দ্বিগুণ বাড়ছে। এই গরম থেকে রক্ষা পেতে এখানকার অধিবাসীরা শীতল জায়গায় আশ্রয় নেওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু পুরুষদের তুলনায় নারীদের শীতল জায়গায় আশ্রয় নেওয়ার সুযোগ ৬০ শতাংশ কম। গৃহস্থ পরিবারে নারীদের দিনের বড় সময় রান্নাঘরে কাটাতে হয়। ওই সময়ে তাঁরা অন্য কক্ষগুলোর উষ্ণতার তুলনায় আরও বেশি উষ্ণতার মধ্যে থাকেন।
গবেষণাটিতে বলা হয়, দক্ষিণ এশিয়ার শহর এলাকায় নারী শ্রমিকদের এক–চতুর্থাংশ হচ্ছেন গৃহকর্মী। আর মোট গৃহকর্মীদের ৬ শতাংশ হচ্ছেন পুরুষ, বাকিরা নারী। গরমের কারণে গৃহকর্মীরা নানা ধরনের শারীরিক ও মানসিক সমস্যায় পড়েন। তাপপ্রবাহের সময়ে এ অঞ্চলে ৬ শতাংশ শিশু অপরিণত অবস্থায় এবং ১৬ শতাংশ শিশু কম ওজন নিয়ে জন্ম নেয়। স্বাভাবিক অবস্থায় এ ধরনের শিশু জন্মানোর চেয়ে এই হার বাড়তি।
অনুষ্ঠানে ঢাকা সিটি করপোরেশন উত্তরের চিফ হিট অফিসার বুশরা আফরিন নিজের কাজ সম্পর্কে তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ঢাকা শহরের সবুজ এলাকা এখন মাত্র ৫ দশমিক ৯ শতাংশ ও জলাভূমি ২ থেকে ৩ শতাংশ। আর শহরের ৮৮ শতাংশ এলাকা এমন উপকরণ দিয়ে তৈরি, যা দ্রুত উত্তপ্ত হয় ও তাপ ধরে রাখে। ফলে সবাইকে নিয়ে একসঙ্গে নিয়ে এই শহরের তাপ নিয়ন্ত্রণে কাজ করতে হবে।