পরিবেশবান্ধব আবাসনের খোঁজে

একটা সময় শুধু গ্রামাঞ্চলেই নয়, শহরগুলোতেও গাছপালার সবুজ আমাদের ঘিরে রাখত। বাড়ির উঠানে থাকত ফুলের বাগান। পেছন দিকটায় থাকত ফল কিংবা সবজির আবাদ। এখন এ রকম দৃশ্য খুব কমই দেখা যায়। তাই এক টুকরা সবুজ প্রকৃতির আশায় ছুটতে হয় দূর থেকে দূরের কোনো গ্রামে। ইট, পাথর আর কংক্রিটের দেয়ালে ঠাসা রাজধানী শহরে সবুজের দেখা মেলে কমই। বারান্দায় দাঁড়ালে বা জানালায় চোখ রাখলে এক টুকরা আকাশ দেখাও অনেকের জন্য কষ্টকর। তাই বাধ্য হয়ে অনেকেই ফ্ল্যাট কেনার ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যসম্মত ও পরিবেশবান্ধব বিষয়টিতে গুরুত্ব দেন।

পরিবেশবান্ধব আবাসনের ধারণা

মোগল আমলে ঢাকা ছিল বাগান-শহর, পরিবেশ ছিল নির্মল। বসত-বিন্যাসও ছিল অনন্য, ছাদ-সামাজিকতা ছিল মহল্লাবাসীর অনন্য এক সংস্কৃতি। ভাষা আন্দোলনের সময় থেকে বিভিন্ন দেশের স্থপতিরা এসে নানা জায়গায় কাজ করেন। স্বাধীনতাযুদ্ধের পরপর স্থাপত্যাচার্য মাজহারুল ইসলামের অনুরোধে জগদ্বিখ্যাত স্থপতি লুই কানের ঢাকায় আসার কারণে বসতভিটায় আসে ভিন্নতা। বর্তমানে বসত নির্মাণে চিন্তাধারার পরিবর্তন এসেছে, চাহিদার অনেক প্রকার তৈরি হয়েছে। কম সময়ে এখন সমাধান খোঁজেন মানুষ। তাঁরা ‘ওয়ান-স্টপ সল্যুশনে’ বিশ্বাসী। পাশাপাশি টেকসই অন্তর্নিহিত বিষয়গুলো আজকের আবাসনের চলতি ধারা। তবে উন্মুক্ত অন্দর হলে আবাসন হবে আলো-বাতাসে পূর্ণ। স্টুডিও অ্যাপার্টমেন্টও আজকের দিনের কনসেপ্ট; সঙ্গে যুক্ত হয়েছে পরিবেশবান্ধব আবাসনের ধারণা। সেই ধারাবাহিকতায় আবাসিক ভবনের চলতি ধারায় গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বারান্দা ও টেরাস। নিজ বসতে কিছু জায়গা কম রেখে হলেও প্রকৃতির সান্নিধ্যে যেতে চান মানুষ। সেই সঙ্গে বাড়ির সামনে খানিকটা খোলামেলা পরিবেশ ও গাছপালা দেখতে চান তাঁরা।

পরিবেশবান্ধব আবাসনের বৈশিষ্ট্য ও সুবিধা

পরিবেশবান্ধব আবাসন ও আধুনিক নগরায়ণের পাশাপাশি গুণগত মান বজায় রেখে প্রায় প্রতিটি আবাসন প্রতিষ্ঠান অ্যাপার্টমেন্ট নির্মাণে সচেষ্ট রয়েছে। প্রশ্ন হতে পারে, আবাসন কীভাবে পরিবেশবান্ধব হয়?

এ প্রসঙ্গে কথা হয় দেশের শীর্ষস্থানীয় আবাসন প্রতিষ্ঠান আনোয়ার ল্যান্ডমার্কের বিক্রয় ও বিপণন বিভাগের মহাব্যবস্থাপক এ জেড এম তানভীর আহাদের সঙ্গে। তিনি বলেন, প্রথমত বাড়ির পরিবেশ স্বাস্থ্যসম্মত করতে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ নকশায় সেটব্যাকের বিষয়টি বাধ্যতামূলক করেছে। ফলে ভবন নির্মাণের পর আলো-বাতাসের পর্যাপ্ত উৎস রাখা সম্ভব হয়। এ ছাড়া এ বিষয়ে রাজউকের নির্দেশিত গাইডলাইন মেনে আবাসন নির্মাণ করলে আবাসনের পরিবেশবান্ধব বিষয়টি নিশ্চিত হয়। দ্বিতীয়ত, বাড়ির নকশাকারক ঠিক করার ক্ষেত্রে যাঁর পরিবেশবান্ধব ধারণা আছে তাঁকেই নিতে হবে, যিনি বাড়ির বাইরে ও ভেতরের সবুজায়নের মধ্যে সঠিক ভারসাম্য রাখতে পারবেন। তৃতীয়ত, আবাসনে ব্যবহৃত নির্মাণসামগ্রী হতে হবে পরিবেশবান্ধব। এ তিনটি বিষয় মেনে চললে কাঙ্ক্ষিত আবাসন হবে পরিবেশবান্ধব।

কী কী সুবিধা পাওয়া যায় পরিবেশবান্ধব আবাসনে? উত্তরে এ জেড এম তানভীর আহাদ বলেন, এর সুবিধা ব্যাপক। এতে গ্রাহকের বাড়ি বা ফ্ল্যাট হবে টেকসই আর জীবনযাপন হবে প্রকৃতির মায়ায়। যেমন দিনের বেলা প্রাকৃতিক আলো দিয়ে যদি সহজেই চাহিদা পূরণ করা যায়, তাহলে বৈদ্যুতিক বাতির ব্যবহার কমবে। ফলে বিদ্যুৎ খরচ সাশ্রয় হবে। আরেকটি বিষয় হলো, ভবনে বৃষ্টির পানি সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও ব্যবহার সুবিধা নিশ্চিতকরণ। এ বিষয়টি নিশ্চিত হলে ওয়াসার ওপর নির্ভরতা কমবে। পানির খরচও সাশ্রয় হবে। পাশাপাশি নির্মাণের শুরুতে বাতাস চলাচলের জন্য জায়গাটা সেভাবে নির্বাচন করতে হবে। এ ছাড়া প্রাকৃতিক সম্পদের সুন্দর ব্যবহারের ফলে স্থাপনায় বসবাসকারীর স্বাস্থ্য ভালো থাকে, স্বাস্থ্য সুরক্ষা খরচ ও ঝুঁকি কমে। পাশাপাশি এ ধরনের আবাসন বিক্রির সময় বিক্রেতার আত্মবিশ্বাসও বেড়ে যায়।

জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে আমাদের যে লড়াই চলছে, তাতে কেবল দৃষ্টিনন্দন স্থাপত্যচর্চা করলেই হবে না। পাশাপাশি পরিবেশবান্ধব ও দৃষ্টিনন্দন স্থাপত্যচর্চা ও নির্মাণের বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখতে হবে। এ লক্ষ্যেই কাজ করে যাচ্ছে বাংলাদেশের বিভিন্ন আবাসন নির্মাণ প্রতিষ্ঠান।