জ্বালানির দাম বাড়ায় পেট্রলপাম্পে যানবাহনের দীর্ঘ লাইন

জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর ঘোষণার পর শুক্রবার রাতে রাজধানীর পরীবাগে পেট্রলপাম্পে তেল নিতে ভিড় করেন গাড়িচালকেরা
ছবি: সেলিম জাহিদ

জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার খবরে ঢাকার পেট্রলপাম্পগুলোতে সব ধরনের যানবাহনের দীর্ঘ সারি দেখা গেছে। জ্বালানি নিতে ভিড় করা এসব গাড়ির মধ্যে মোটরসাইকেল ও প্রাইভেট কারের সংখ্যাই বেশি। এদিকে দাম বাড়ার খবর শোনার পর কোনো কোনো পেট্রলপাম্প বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

শুক্রবার রাত ১০টার দিকে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর কথা জানানো হয়। ডিজেল ও কেরোসিনের দাম লিটারে ৩৪ টাকা বাড়িয়ে ১১৪ টাকা, পেট্রলের দাম ৪৪ টাকা বাড়িয়ে ১৩০ টাকা এবং অকটেনের দাম ৪৬ টাকা বাড়িয়ে ১৩৫ টাকা করা হয়। শুক্রবার রাত ১২টার পর থেকেই নতুন এই দাম কার্যকর হয়েছে।

জ্বালানি তেলের দাম এক লাফে এতটা বাড়ানোর খবরে বহু মানুষ মোটরসাইকেল–প্রাইভেট কার নিয়ে পেট্রলপাম্পের দিকে ছুটতে থাকেন। এতে অনেক পেট্রলপাম্পের সামনে গাড়ির দীর্ঘ লাইন রাস্তার মাঝখানে চলে যায়। এতে যান চলাচল ব্যাহত হয়ে অনেক জায়গায় যানজট তৈরি হয়।

প্রথম আলোর এই প্রতিবেদক রাত ১১টার দিকে মোটরসাইকেলে করে কারওয়ান বাজার থেকে সাতরাস্তা হয়ে মহাখালী রেলগেটের উদ্দেশে রওনা দিয়ে গন্তব্যে পৌঁছতে ৪৫ মিনিট সময় লেগেছে। সাধারণত শুক্রবারে এই সময়ে এ পথ যেতে ১০ মিনিটের মতো সময় লাগে। যাওয়ার পথে তিনি যতগুলো পেট্রলপাম্প খোলা দেখেছেন, সব কটিতেই যানবাহনের লম্বা সারি দেখতে পেয়েছেন। সেখানে মোটরসাইকেল, প্রাইভেট কারের পাশাপাশি বাস ও ট্রাকও দেখা গেছে। এ সময় তিনি দুটি পেট্রলপাম্প বন্ধ পেয়েছেন। একটি পেট্রলপাম্পে একজন নিরাপত্তাকর্মী ছাড়া কেউ ছিলেন না। অন্যটিতে নিরাপত্তাকর্মীও পাওয়া যায়নি।

এদিকে রাত পৌনে ১২টার দিকে মহাখালীর শিকদার ফিলিং স্টেশনে গিয়ে সেটি বন্ধ পাওয়া যায়। সেখানকার একজন নিরাপত্তাকর্মী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, রাত ১০টা থেকে পেট্রলপাম্পটি বন্ধ রাখা হয়েছে। তবে দাম বাড়ার ঘোষণায় বন্ধ করা হয়েছে কি না, তিনি সেটা বলতে পারছেন না।

জ্বালানি নিতে পেট্রলপাম্পের সামনে গাড়িচালকদের ভিড়। শুক্রবার রাতে রাজধানী পরীবাগে

তেজগাঁওয়ের গুলশান লিংক রোডের আইডিয়াল ফিলিং স্টেশনটিও বন্ধ পাওয়া গেছে। পাম্পের প্রবেশপথ দুটিতে লোহার শিকল দিয়ে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করা হয়েছে। সেখানেই কথা হয় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আকিব হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, তেলের দাম বাড়ার ঘোষণার পর মোটরসাইকেল নিয়ে দুটি পাম্পে গিয়েছেন। দুটোই বন্ধ পেয়েছেন।

যানজটে দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় মো. রফিক নামের এক উবার–চালকের সঙ্গে এই প্রতিবেদকের কথা হয়। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, রাত ১১টার দিকে একজন যাত্রীকে মগবাজারে নামিয়ে দেওয়ার পর তিনি জানতে পারেন জ্বালানি তেলের দাম বাড়িয়েছে সরকার। তারপর তিনি মহাখালীতে যাচ্ছেন তেল নিতে। তবে যানজটের কারণে তিনি আধা ঘণ্টায়ও মহাখালীতে পৌঁছাতে পারেননি।

প্রাইভেট কার নিয়ে তেল নিতে পরীবাগে পেট্রলপাম্পে এসেছেন শামীম চৌধুরী নামের এক রেস্তোরাঁ ব্যবসায়ী। তিনি সাড়ে ৯ লিটার তেল নিয়েছেন। তিনি বলেন, গাড়িতে ভালোই তেল ছিল। কিন্তু রাতেই দাম বাড়ছে বলে লাইনে দাঁড়িয়ে তেল নিয়েছেন।

রাত ১১টার দিকে এই পেট্রলপাম্পে গিয়ে মোটরসাইকেল ও প্রাইভেট কারের দীর্ঘ সারি দেখা যায়। প্রথম আলোর বিভিন্ন জেলার প্রতিনিধিরাও জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার ঘোষণার পর পেট্রলপাম্পগুলোতে যানবাহনের ব্যাপক ভিড় তৈরি হওয়ার কথা জানিয়েছেন।