বেসিস কার্যালয়ে ‘বাংলাদেশে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য আইসিটির গুরুত্ব’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনার আয়োজন করা হয়
বেসিস কার্যালয়ে ‘বাংলাদেশে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য আইসিটির গুরুত্ব’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনার আয়োজন করা হয়

গোলটেবিল আলোচনা

ব্যাংক খাতে অটোমেশনে নতুন নিয়ম প্রয়োজন

দেশে সব খাতের উন্নয়নে তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি (আইসিটি) খাতের ভূমিকা রয়েছে। কিন্তু আইসিটির অন্যতম বড় বাজার ব্যাংক খাতের বেশির ভাগ ব্যাংক অটোমেশনে (স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থা) ভারতীয় কোম্পানির ওপর নির্ভর করে। দেশের আইসিটি খাতের উন্নয়নে সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংককে এ ক্ষেত্রে কিছু নিয়ম করে দিতে হবে।

মঙ্গলবার বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস) এবং পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট (পিআরআই) আয়োজিত গোলটেবিল আলোচনায় বক্তারা এ কথাগুলো বলেন। রাজধানীর কারওয়ান বাজারে বেসিস কার্যালয়ে যৌথভাবে ‘বাংলাদেশে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য আইসিটির গুরুত্ব’ শীর্ষক এ গোলটেবিল আলোচনার আয়োজন করা হয়।

গোলটেবিলে পিআরআইয়ের নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন। দেশের আইসিটি খাতের বর্তমান পরিস্থিতি, পরিসংখ্যানসহ এ খাতের অবদানের বিষয়গুলো তিনি তুলে ধরেন।

দেশে আইসিটি সেবার চাহিদা প্রসঙ্গে আহসান এইচ মনসুর বলেন, স্বাস্থ্য খাতের অটোমেশনে আইসিটির প্রচুর চাহিদা থাকার কথা। কিন্তু এর ধারেকাছেও কিছু হয়নি। আইসিটি খাতের একটি বড় বাজার হতে পারে স্বাস্থ্যসেবা। এই খাতে সরকারি–বেসরকারি অংশীদারত্বে কাজ করতে হবে। কৃষি খাতেও আইসিটি খাতের অনেক কিছু করার আছে।

পিআরআইয়ের নির্বাহী পরিচালক আরও বলেন, ‘ব্যাংকগুলোর সবার অটোমেশন প্রয়োজন। কিন্তু আমি দেখেছি, এদের বেশির ভাগই ভারতীয় কোম্পানির ওপর নির্ভর করছে। এটা দুর্ভাগ্যজনকও। ব্যাংক একটি বড় বাজার আইসিটির জন্য। একটি অটোমেশনের জন্য কোটি টাকার ওপর প্রয়োজন হয়। ব্যাংক খাত একাই হাজার হাজার কোটি টাকার বাজার হয়ে উঠতে পারে।’

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতি অনুরোধ জানিয়ে আহসান এইচ মনসুর বলেন, ব্যাংকগুলোর জন্য বাধ্যতামূলক করতে হবে, অটোমেশন–প্রক্রিয়া বা আইসিটিভিত্তিক সেবা-সংক্রান্ত চুক্তির ক্ষেত্রে বিদেশি কোম্পানি এলে অবশ্যই যেন দেশীয় কোনো কোম্পানিকে রাখে। যৌথভাবে কাজ করতে হবে। এতে দেশের বাজার বড় হবে এবং দক্ষতাও বাড়বে। এখানে সম্ভাবনা অনেক।

আইসিটি খাতে দক্ষ মানবসম্পদ বড় বিষয় উল্লেখ করে আহসান এইচ মনসুর বলেছেন, ভারতীয়রা বিশ্বের বিভিন্ন প্রযুক্তি কোম্পানিকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। কিন্তু বাংলাদেশ সেখানে ভালো করছে না। বছরে অন্তত এক হাজার গ্র্যাজুয়েট লাগবে এ খাতে এবং অবশ্যই তা মানসম্পন্ন হতে হবে।

পিআরআইয়ের নির্বাহী পরিচালক আরও বলেন, ‘দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আইসিটি ল্যাব আছে, কারিকুলাম আছে; কিন্তু শিক্ষকেরা কতটা সেসব বিষয়ে প্রশিক্ষিত, সে প্রশ্ন রয়েছে। এমনও খবর আছে যে ল্যাব তালাবদ্ধ থাকে। ফ্রিল্যান্সিংয়ে আমরা সংখ্যায় ভালো করছি, কিন্তু কাজের দিক থেকে অন্যদের চেয়ে তা মানসম্মত নয়।’

রাজস্ব বোর্ডের অটোমেশন–প্রক্রিয়ার প্রসঙ্গ টেনে এসএমএসি অ্যাডভাইজারি সার্ভিসেস লিমিটেডের পরিচালক স্নেহাশীষ বড়ুয়া বলেন, করপোরেট কর অনলাইনে দেওয়া যায় না, আয়কর দিতে গেলেও সেখানে সমস্যা। একটি সিস্টেমের সঙ্গে আরেকটি সিস্টেমের কোনো সমন্বয় নেই। তাঁর প্রশ্ন, ‘আর্থিক খাতকে যদি ইন্টার-অপারেবিলিটি (এক ব্যবস্থা থেকে অন্য ব্যবস্থায় তথ্য আদান-প্রদান বা লেনদেন) করতে না পারি, তাহলে স্বপ্ন দেখব কীভাবে?’

স্নেহাশীষ বড়ুয়া আরও বলেন, যেসব বিদেশি কোম্পানিকে দিয়ে কাজ হচ্ছে, তারা দেশের অনেক সংবেদশীল তথ্য জেনে যাচ্ছে।

বেসিস সভাপতি রাসেল টি আহমেদ বলেন, সব খাতের পেছনে আইসিটির ভূমিকা রয়েছে। এ খাতকে বিশেষ খাত হিসেবে বিবেচনা করতে হবে। ব্যাংকে আর্থিক সুবিধা পাওয়ার সুযোগসহ আয়কর ছাড়ের প্রসঙ্গও তুলে ধরেন তিনি।

বেসিসের সহসভাপতি (প্রশাসন) সৈয়দ মোহাম্মাদ কামালের সঞ্চালনায় গোলটেবিলে আরও বক্তব্য দেন বাংলাদেশ ব্যাংকের পেমেন্ট সিস্টেমস ডিপার্টমেন্টের অতিরিক্ত পরিচালক মোহাম্মদ নাজিম উদ্দীন, বেসিসের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি এম রাশিদুল হাসান। এতে উপস্থিত ছিলেন বেসিসের সহসভাপতি (অর্থ) ইকবাল আহমেদ ফখরুল হাসান, বেসিসের পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান, এম আসিফ রহমান, মুহম্মদ রিসালাত সিদ্দীক, মীর শাহরুখ ইসলাম, বিপ্লব ঘোষ রাহুল প্রমুখ।