চবিতে ছাত্রীকে যৌন নিপীড়ন: আরেকজন গ্রেপ্তার

সাইফুল আলম
ছবি: সংগৃহীত

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীকে যৌন নিপীড়নের অভিযোগে করা মামলায় আরেকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁর নাম সাইফুল আলম। আজ শনিবার বিকেলে নগরের বহদ্দারহাট এলাকা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করে র‍্যাব। এ নিয়ে এ ঘটনায় পাঁচজন গ্রেপ্তার হয়েছেন।

গতকাল শুক্রবার দিবাগত রাতে জেলার রাউজান ও হাটহাজারীতে অভিযান চালিয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
র‍্যাব–৭ হাটহাজারী কোম্পানি কমান্ডার মাহফুজুর রহমান আজ বিকেলে প্রথম আলোকে বলেন, গোপন তথ্যের ভিত্তিতে সাইফুলকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তার অন্য চারজন হলেন মোহাম্মদ আজিম (২৩), নুরুল আবছার বাবু (২২), নূর হোসেন শাওন (২২) ও মাসুদ রানা (২২)।

র‌্যাব আজ সকালে প্রাথমিকভাবে চারজন আটক হওয়ার কথা জানিয়েছিল। সেখানে মেহেদি হাসান ওরফে হৃদয় নামের একজনের কথা বলা হয়। এখন র‍্যাবের জ্যেষ্ঠ সহকারী পরিচালক ও মিডিয়া কর্মকর্তা মো. নুরুল আবছার প্রথম আলোকে বলেন, হৃদয়ের বিষয়ে তদন্ত চলছে। তদন্ত শেষ করে তাঁর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

র‍্যাব সূত্র জানায়, ঘটনার মূল হোতা মোহাম্মদ আজিম। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। নুরুল আবছারও বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। আর বাকি তিনজনই হাটহাজারী সরকারি কলেজের বিভিন্ন বর্ষের ছাত্র।

সাংবাদিকেরা গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের রাজনৈতিক পরিচয় জানতে চাইলে র‌্যাব-৭–এর অধিনায়ক লে. কর্নেল এম এ ইউসুফ বলেন, তাঁরা নিজেরা ছাত্রলীগের সঙ্গে যুক্ত বলে দাবি করেছেন। তবে তাঁদের কোনো পদ-পদবি নেই। আজিম নিজেকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সভাপতির অনুসারী ও অন্যরা অপর পক্ষের বলে দাবি করেছেন। যেহেতু তাঁদের কোনো পদ-পদবি নেই, তাঁদের আমরা কোনো দলের কর্মী বলতে পারি না।
১৭ জুলাই (রোববার) রাত সাড়ে নয়টায় ক্যাম্পাসে পাঁচ তরুণের হাতে এক ছাত্রী যৌন নিপীড়ন ও মারধরের শিকার হন। বিশ্ববিদ্যালয়ের বোটানিক্যাল গার্ডেন এলাকায় পাঁচ তরুণ ওই ছাত্রীকে বেঁধে বিবস্ত্র করে মুঠোফোনে ভিডিও ধারণ করেন। এ সময় তাঁর সঙ্গে থাকা এক বন্ধু প্রতিবাদ করলে তাঁকেও মারধর করা হয়। এ ঘটনায় গত মঙ্গলবার প্রক্টরের কাছে অভিযোগ দেন ওই ছাত্রী। এর এক দিন পর বুধবার মামলা করেন হাটহাজারী থানায়।

এর আগে যৌন নিপীড়নের ঘটনায় গত মঙ্গলবার চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের সভাপতি রেজাউল হককে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয় কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল তিনি ঘটনার শিকার ছাত্রীকে প্রক্টরের কাছে লিখিত অভিযোগ দিতে বাধা দেন। এ জন্য ঘটনার দুই দিন পর ওই ছাত্রী অভিযোগ দেন প্রক্টরের কাছে। অবশ্য রেজাউল হকের দাবি, তিনি ছাত্রীকে অভিযোগ দিতে বাধা দেননি।

ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর বুধবার থেকেই উত্তাল হয়ে পড়ে ক্যাম্পাস। রাতেই ছাত্রীরা হল থেকে বের হয়ে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান নেন। ওই দিন রাত একটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার এস এম মনিরুল হাসান ঘটনাস্থলে গিয়ে চার কার্যদিবসের মধ্যে জড়িত ব্যক্তিদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনার ঘোষণা দেন। অন্যথায় প্রক্টরিয়াল বডি পদত্যাগ করবে বলে জানান তিনি। এদিকে ছাত্রীকে যৌন নিপীড়নের ঘটনায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অভিযুক্ত ব্যক্তিদের আগামীকাল রোববারের মধ্যে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করা হবে বলে জানিয়েছেন উপাচার্য শিরীণ আখতার। আজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩৪তম বার্ষিক সিনেট সভায় উপাচার্য এ ঘোষণা দেন।