শরীরে ডেঙ্গু নিয়েই ছেলের চিকিৎসায় হাসপাতালে ছুটছেন বাবা

ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে আগ্রাবাদ মা ও শিশু জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি ১০ বছর বয়সী ছেলে দাকিক দাইয়ান। পাশে বসে আছেন বাবা দিদারুল আলম। তাঁরও ডেঙ্গু হয়েছে
ছবি: সৌরভ দাশ

চট্টগ্রামের বাসিন্দা দিদারুল আলমের জ্বর। গতকাল শুক্রবার পরীক্ষায় ডেঙ্গু ধরা পড়েছে তাঁর। চিকিৎসক বলেছেন বিশ্রাম নিতে। তবে সে ফুরসত হয়নি। কারণ, ১০ বছর বয়সী ছেলে দাকিক দাইয়ানও ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি। তাকে নিয়ে ছোটাছুটি করতে হচ্ছে দিদারুলকে।

দিদারুল জানালেন, তাঁর খারাপ সময় শেষই হচ্ছে না। মাসখানেক আগে পাঁচ বছর বয়সী মেয়ে দুলিকা আক্তারেরও ডেঙ্গু হয়েছিল। এখন ছেলে চট্টগ্রাম নগরের আগ্রাবাদ মা ও শিশু জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি। আজ শনিবার দুপুরেও সে বমি করেছে। এ নিয়ে চিন্তার শেষ নেই তাঁদের।

মা ও শিশু জেনারেল হাসপাতালের সাধারণ ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা যায়, দাকিক দাইয়ানের পাশে বসে আছেন বাবা দিদারুল ও মা শারমিন আকতার। চলছে সেবাশুশ্রূষা। সেখানে এসেছে ছোট বোন দুলিকাও। ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে একই ওয়ার্ডে ভর্তি ছিল সে।

দিদারুলেরও জ্বর তিন–চার দিন ধরে। তবে ছেলে হাসপাতালে ভর্তি থাকায় নিজের জ্বর নিয়ে অতটা ভাবেননি তিনি। দিদারুল বলেন, ‘বৃহস্পতিবার ছেলেকে হাসপাতালে ভর্তি করেছি। আজ ছয় দিন ধরে জ্বর। ডেঙ্গুর কারণে ছেলের সারা গায়ে র‍্যাশ উঠেছে। বমি করছে। কিছু খেতে পারছে না। এ জন্য চিন্তায় আছি।’

নিজের অসুস্থতার কথা তুলে দিদারুল বলেন, ‘সারা গায়ে ব্যথা। খুব যন্ত্রণাদায়ক এই জ্বর। ছেলেটাও কষ্ট পাচ্ছে এসব উপসর্গে। আমাকে চিকিৎসক ভর্তি হতে বলেননি। বাসায় পুরোপুরি বিশ্রামে থাকতে বলেছেন। আমি বেশ দুর্বল। কিন্তু ছেলে হাসপাতালে। এই অবস্থায় কীভাবে পুরোপুরি বিশ্রাম নেব বুঝতে পারছি না। হাসপাতালে আসা–যাওয়ার মধ্যে থাকতে হচ্ছে। ছেলের সঙ্গে তার মা থাকে।’  

দিদারুল আলম বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। স্ত্রী ও দুই সন্তানকে নিয়ে থাকেন নগরের আগ্রাবাদের রঙ্গিপাড়া এলাকায়। মেয়ের অসুখের সময় অন্তত ১০ হাজার টাকা খরচ হয়েছিল তাঁর। এখন আবার খরচের ধাক্কা। তাঁর স্ত্রী শারমিন আকতার বলেন, ‘একের পর এক অসুখ। কী যে হবে! মেয়ে ও ছেলের পর এখন তাদের বাবারও ডেঙ্গু ধরা পড়েছে। কীভাবে সামলাব বুঝতে পারছি না।’  

আজ বিকেলের দিকে আবার জ্বর আসে দিদারুলের। অসুস্থ শরীর নিয়ে বাসায় চলে যান তিনি। হাসপাতালে ছেলের পাশে রয়ে যান শুধু স্ত্রী। মেয়ে দুলিকা বাসায়। রান্নাবান্না ও মেয়ের দেখাশোনার জন্য বাসায় শ্বশুর–শাশুড়িকে এনে রেখেছেন দিদারুল। তিনি বলেন, এই দুঃখের দিন কবে শেষ হবে, সে অপেক্ষায় রয়েছেন তিনি।

চট্টগ্রামের মা ও শিশু জেনারেল হাসপাতালে আজ ৮৮ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি ছিলেন। এর মধ্যে ৩৭ জনই শিশু। এদিকে সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রামে ৯৬ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন। চলতি বছরে এখন পর্যন্ত চট্টগ্রামে ডেঙ্গু হয়েছে ৬ হাজার ৭৭০ জনের। এর মধ্যে মারা গেছেন ৫৯ জন।