পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে নয়াপল্টনে সাংবাদিকের ওপর পুলিশি হামলার প্রতিবাদে ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের বিক্ষোভ সমাবেশ। জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে। ৮ ডিসেম্বর
পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে নয়াপল্টনে সাংবাদিকের ওপর পুলিশি হামলার প্রতিবাদে ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের বিক্ষোভ সমাবেশ। জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে। ৮ ডিসেম্বর

সাংবাদিক, পেশাজীবী কেউই পুলিশের হাত থেকে রেহাই পাচ্ছেন না

আগামী জাতীয় নির্বাচন যত এগিয়ে আসছে, সরকারের মধ্যে অস্থিরতা ততই বাড়তে শুরু করেছে। সাংবাদিক পেশাজীবীরা কেউই এই পুলিশের হাত থেকে রেহাই পাচ্ছে না। পুলিশের বাড়াবাড়ি চূড়ান্ত পর্যায়ে চলে গেছে। দেশে গণতন্ত্র, মানবাধিকার বলতে কিছু নেই। সাংবাদিক নির্যাতনে অতীতের সব রেকর্ড ভঙ্গ করেছে এই সরকার।

গতকাল বুধবার পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে নয়াপল্টনে সাংবাদিকদের ওপর পুলিশি হামলার প্রতিবাদে আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) একাংশ। সেখানেই তাঁরা এসব অভিযোগ করেন।

মানববন্ধনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি রুহুল আমিন গাজী বলেন, ‘এই ডিসেম্বর মাসে হানাদার পতন করেছিলাম। এই ডিসেম্বর মাসেই স্বৈরাচারী এরশাদকে পতন করেছিলাম। এই ডি‌সেম্বরেই পেশাজীবী পরিষদ এবং সাধারণ জনগণকে নিয়ে এই স্বৈরাচারী সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।’

রুহুল আমিন গাজী বলেন, ‘গতকাল বুধবার পুলিশ কমিশনার যেভাবে কথা বলেছেন, ইতিপূর্বে কোনো পুলিশকে এভাবে কথা বলতে দেখিনি। পুলিশ কমিশনারের বক্তব্য শুনলে মনে হয় সরকারি অফিসার নন, আওয়ামী লীগের কোনো ক্যাডার বক্তব্য রাখছেন।’ তিনি বলেন, সাংবাদিক পেশাজীবীরা কেউই এই পুলিশের হাত থেকে রেহাই পাচ্ছেন না। পুলিশের বাড়াবাড়ি চূড়ান্ত পর্যায়ে চলে গেছে।

সমাবেশে জাতীয় প্রেসক্লা‌বের সা‌বেক সভাপ‌তি শওকত মাহমুদ বলেন, এই সরকার সাংবাদিকদের শত্রু। এখন আন্দোলনের চূড়ান্ত সময় এসেছে। বুধবার বিএনপির ওপর পুলিশ যে নির্যাতন চালিয়েছে, এটা কোনো সভ্য দেশে হতে পারে না। সরকারের পতন ছাড়া সাংবাদিকদের মুক্তি নেই।

‌সমাবেশে সংহতি জানিয়ে বিএন‌পির ভাইস চেয়ারম্যান এ জেড এম জাহিদ হোসেন বলেন, ‘সাংবাদিকেরা গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলনে পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে আহত হয়েছেন। পুলিশের নারকীয় তাণ্ডব উপেক্ষা করে দায়িত্ব পালনকালে যাঁরা অসুস্থ হয়েছেন, দোয়া করি তাঁরা অচিরেই সুস্থ হয়ে উঠবেন।’

বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নেন সভাপ‌তি এম আবদুল্লাহ অভিযোগ করে বলেন, স্বৈরাচারী আওয়ামী লীগ সরকার গণমাধ্যমের ওপর হামলা করে ক্ষমতা স্থায়ী করার চেষ্টা করছে। গত ১৪ বছরে ৫০ জন সাংবাদিক হত্যা করেছে। সরকার সাংবাদিক নির্যাতনের মধ্য দিয়ে ক্ষমতাকে চিরস্থায়ী করার চেষ্টা করছে। এই সরকার এখন মরণ কামড় দিচ্ছে। বুধবার সংবাদকর্মীরা মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে রক্ষা করেছেন। সাংবাদিকদের ওপর হাত দিয়ে কেউ টিকে থাকতে পারেনি।

ডিইউজের সভাপ‌তি কাদের গনি চৌধুরী বলেন, ‘এই সরকার ক্ষমতা হারানোর ভয়ে ক্রমেই বেসামাল হয়ে পড়েছে। তারা ভাবছে পুলিশ ও দলীয় অস্ত্রধারীদের লেলিয়ে দিয়ে খুন করে, জেলে পুরে, জুলুম-নিপীড়ন চালিয়ে এবং সভা-সমাবেশে পণ্ড করে ক্ষমতায় আঁকড়ে থাকবে। আমরা ফ্যাসিস্ট সরকারকে হুঁশিয়ার করে জানিয়ে দিতে চাই, খুন করে, রক্ত ঝরিয়ে বেশি দিন ক্ষমতায় টিকে থাকা যায় না। দেশের জনগণ আজ দুঃশাসনের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ। তারা দুঃশাসনের অবসান চায়।’

সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি কামাল উদ্দিন সবুজ, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মো. শহিদুল ইসলাম, জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক  সৈয়দ আবদাল আহমদ, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি মোরসালিন নোমানী, সাবেক সভাপতি রফিকুল ইসলাম আজাদ,  ইলিয়াস হোসেন, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সহসভাপতি শাহিন হাসনাত, বাছির জামাল, রাশিদুল হক প্রমুখ।