ভুটান থেকে ভারতের ভূমি ব্যবহার করে বিদ্যুৎ আমদানিতে সহযোগিতা চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মা আজ বৃহস্পতিবার সকালে গণভবনে সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে এলে প্রধানমন্ত্রী এই সহযোগিতা প্রত্যাশা করেন।
বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রীর স্পিচ রাইটার মো. নজরুল ইসলাম সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী প্রত্যাশিত বিদ্যুৎ সহজে আমদানি করতে ভারত পক্ষের সহায়তা চেয়েছেন।’
নজরুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশ ভুটান থেকে বিদ্যুৎ আমদানি করবে। ২৫ মার্চ ভুটানের রাজা জিগমে খেসার নামগিয়েলের ঢাকা সফরের সময় এ বিষয়ে একটি চুক্তি সই হবে।
সৌজন্য সাক্ষাতে শেখ হাসিনা বাংলাদেশ থেকে পাট ও পাটজাত পণ্য আমদানির জন্য অ্যান্টিডাম্পিং ব্যবস্থা প্রত্যাহারের জন্য ভারত সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। এ ছাড়া তিনি হাইকমিশনারকে বলেন, ভারত সৈয়দপুর রেলওয়ে ওয়ার্কশপটি আধুনিকায়ন করতে পারে।
বৈঠকে ভারতের আসন্ন নির্বাচন প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ধারাবাহিক গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাতেই বাংলাদেশের অভূতপূর্ব উন্নয়ন সম্ভব করেছে।
শেখ হাসিনা উল্লেখ করেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের পর ১৯৯৬ সালের আগে নির্বাচনে জয়লাভের সিদ্ধান্ত এবং কোন দল ক্ষমতায় থাকবে বা আসবে, তা নির্দিষ্ট মহল দ্বারা নির্ধারিত হতো।
সে কারণে আওয়ামী লীগ ১৯৯১ সালে জনসমর্থন পেলেও জয়ী হতে পারেনি উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘কিন্তু ১৯৯৬ সালে নির্দিষ্ট মহল গণমানুষের ইচ্ছার কাছে মাথা নত করে। ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ প্রথমবারের মতো সে দুষ্টচক্র ভাঙে।’
এ সময় প্রণয় ভার্মা উল্লেখ করেন, গত বছর ভারতীয় ঋণ ব্যবস্থার (এলওসি) আওতায় বাংলাদেশে মোট চারটি প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়েছে। ‘আরও দুটি প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য পাইপলাইনে রয়েছে’ বলে জানান তিনি।
ভারতীয় হাইকমিশনার রুপি-টাকা দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যিক লেনদেন, ডিজিটাল পেমেন্ট নেটওয়ার্ক এবং বঙ্গবন্ধু বায়োপিকের মতো দুই দেশের কিছু যুগান্তকারী উদ্যোগের কথা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ভারত সমন্বিত অর্থনৈতিক অংশীদারত্বের (সিইপিএ) জন্য আলোচনা এগিয়ে নিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
২০২৬ সালে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের পর এই সিইপিএ সহায়ক হবে বলে উল্লেখ করেন ভারতীয় হাইকমিশনার। তিনি বলেন, এলওসিকে প্রকল্পভিত্তিক করার জন্য একটি নতুন কাঠামো তৈরি করতে নতুন চিন্তাভাবনা ও আলোচনা চলছে।
বৈঠকে বাংলাদেশ, ভুটান ও নেপালের মধ্যে হাইপাওয়ার গ্রিড লাইন স্থাপনের বিষয়ে আলোচনা হয়। প্রণয় ভার্মা বলেন, ভারত থেকে ডিজেল আমদানির জন্য সৈয়দপুর থেকে নাটোর পর্যন্ত ডিজেল পাইপলাইন সম্প্রসারণের উদ্যোগ রয়েছে।
ভারতীয় হাইকমিশনার আরও বলেন, বিশ্ব বিখ্যাত কিছু প্রতিরক্ষা শিল্প ভারতে তাদের কারখানা স্থানান্তর করছে। বাংলাদেশ ভারতের যৌথ উদ্যোগে এখানে একটি প্রতিরক্ষা কারখানা স্থাপন করতে পারে।
শেখ হাসিনাকে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর শুভেচ্ছা জানিয়ে সে দেশের জাতীয় নির্বাচনের পর প্রধানমন্ত্রীকে ভারত সফরের আমন্ত্রণ জানান এবং তিনি আমন্ত্রণ গ্রহণ করেন।
হাইকমিশনার প্রধানমন্ত্রীকে জানান, তারা রংপুরে একটি অফিস স্থাপনে আগ্রহী। জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রস্তাবটি যাচাই-বাছাই করে সরকার বিবেচনা করবে।
প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া এ সময় উপস্থিত ছিলেন।