রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সংবাদ সম্মেলন
রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সংবাদ সম্মেলন

এক বছরে ১০৪৫টি সাম্প্রদায়িক সহিংসতা-নিপীড়নের ঘটনায় ৪৫ জন খুন: ঐক্য পরিষদ

সারা দেশে গত এক বছরে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা-নির্যাতন-নিপীড়নের ঘটনা ঘটেছে ১ হাজার ৪৫টি। এসব ঘটনায় ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ৪৫ জন হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন।

গত বছর বাংলাদেশের ধর্মীয়-জাতিগত সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর সংঘটিত সহিংসতা-নির্যাতন-নিপীড়নের প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। আজ সোমবার রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে এ-সংক্রান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ। ২০২৩ সালের জুলাই থেকে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত গণমাধ্যমে আসা তথ্যের ভিত্তি প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে প্রতিবেদনটি তুলে ধরেন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাণা দাশগুপ্ত।

প্রতিবেদনে বলা হয়, গত এক বছরে হত্যার ঘটনা ঘটেছে ৪৫টি। মরদেহ উদ্ধার (হত্যাকাণ্ড বলে প্রতীয়মান) হয়েছে ৭ জনের। হত্যার চেষ্টা হয়েছে ১০ জনকে। হত্যার হুমকি দেওয়া হয়েছে ৩৬ জনকে। হামলা/শারীরিক নির্যাতন/জখম হয়েছে ৪৭৯ জন। চাঁদা দাবি করা হয়েছে ১১ জনের কাছে। বসতঘর/ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা/ভাঙচুর/লুটপাট/অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে ১০২টি। বসতবাড়ি/জমিজমা দখলের ঘটনা ঘটেছে ৪৭টি। বসতবাড়ি/জমিজমা দখলের/উচ্ছেদের তৎপরতা ও হুমকির ঘটনা ঘটেছে ৪৫টি। দেশত্যাগের হুমকি/বাধ্য করার চেষ্টার ঘটনা ঘটেছে ১১টি। দেবোত্তর/মন্দির/গির্জার সম্পত্তি দখল ও দখলের চেষ্টার ঘটনা হয়েছে ১৫টি। শ্মশানভূমি দখল/দখলের চেষ্টার ঘটনা ঘটেছে ৭টি। মন্দিরে হামলা/ভাঙচুর/লুটপাট/অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে ১৪টি। প্রতিমা ভাঙচুর হয়েছে ৪০টি। দলবদ্ধ ধর্ষণ/ধর্ষণ/ধর্ষণচেষ্টার ঘটনা ঘটেছে ২৫টি। অপহরণ/নিখোঁজ ও জোরপূর্বক ধর্মান্তরকরণের ঘটনা ঘটেছে ১২টি। ধর্ম অবমাননার কল্পিত অভিযোগে আটক হয়েছেন ৮ জন। সর্বশেষ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে ৩২টি। স্থানীয় সরকার নির্বাচনে সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে ৫টি। এ ছাড়া অন্যান্য ঘটনা ঘটেছে ১৪টি। মোট ঘটনা ১ হাজার ৪৫টি।

সংবাদ সম্মেলনে এসব ঘটনাকে ‘আংশিকমাত্র’ বলে উল্লেখ করেন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাণা দাশগুপ্ত। তিনি বলেন, বিগত বছরগুলোর সাম্প্রদায়িক সহিংসতার তুলনামূলক পর্যালোচনায় দেখা যায়, সহিংসতার ঘটনার খুব বেশি হেরফের আজও হয়নি। ১৯৭০ সালের নির্বাচনের সময় সংখ্যালঘু ছিল প্রায় ১৯ শতাংশ। এখন তা ৮ দশমিক ৬ শতাংশে নেমে এসেছে। স্বাধীনভাবে ধর্মচর্চার পরিবেশ একেবারেই সংকুচিত করা হয়েছে। পুলিশি প্রহরায় ধর্মীয় অনুষ্ঠান-উৎসবের আয়োজন করা হচ্ছে।

সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চলাকালে সন্ত্রাসীদের কাউকে জনগণ আটক করলে পুলিশ-প্রশাসন তাকে ‘পাগল’ বানিয়ে মূলত সাম্প্রদায়িক অপশক্তিকেই উৎসাহিত করে।

সংখ্যালঘুদের ওপর সহিংসতার ৭০ থেকে ৭৫ শতাংশ ভূমিকেন্দ্রিক বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। এতে বলা হয়, ভূমি জবরদখলের বদ মতলবে ভূমিখেকো সন্ত্রাসীরা প্রায় বেশির ভাগ সময় নানা রাজনৈতিক দলের প্রভাবপুষ্ট হয়ে সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে সাম্প্রদায়িক সহিংস আক্রমণ পরিচালনা করছে। সরকারি সংস্থাও জমি জবরদখলের ঘৃণ্য কাজে জড়িত।

রাণা দাশগুপ্ত বলেন, সাম্প্রদায়িক ও মৌলবাদী অপশক্তি রাষ্ট্র, সরকার, প্রশাসন, রাজনীতি, সমাজসহ সর্বক্ষেত্রে নিজেদের প্রভাব বিস্তার করছে। তারা সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে অধিকতর নিরাপত্তাহীন ও আস্থাহীন করে তুলছে। তাঁদের দেশত্যাগে কৌশলে বাধ্য করা হচ্ছে। সংখ্যালঘু নির্যাতন রোধে জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশন গঠন, সংখ্যালঘু বিশেষ সুরক্ষা আইন প্রণয়নসহ আওয়ামী লীগের ইশতেহারে থাকা নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের দাবি জানানা তিনি।

বগুড়ার রথযাত্রায় পূণ্যার্থীদের মৃত্যুর প্রসঙ্গে রাণা দাশগুপ্ত বলেন, ‘এ ঘটনায় আমরা মর্মাহত।’ তিনি এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করেন।

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন পরিষদের অন্যতম সভাপতি নিমচন্দ্র ভৌমিক ও নির্মল রোজারিও, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজল দেবনাথ ও ভিক্ষু সুনন্দপ্রিয়, তথ্য যোগাযোগ ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক শুভ্র দেব কর। সংবাদ সম্মেলন সঞ্চালনা করেন পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক দিপংকর ঘোষ।