মাপে জ্বালানি তেল কম দেওয়ায় ক্ষুব্ধ হয়ে রাজধানীর কল্যাণপুরে একটি ফিলিং স্টেশনের সামনে গতকাল সোমবার সাত ঘণ্টা অবস্থান করে প্রতিবাদ জানিয়েছেন বেসরকারি ব্যাংকের কর্মকর্তা শেখ ইসতিয়াক আহমেদ। আজ মঙ্গলবার সকালে রাজধানীর কারওয়ানে বাজারে জাতীয় ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তরে এসে এ বিষয়ে অভিযোগ দিয়েছেন তিনি। কীভাবে বুঝলেন মাপে তেল কম দেওয়া হয়েছে, হঠাৎ কী মনে করে প্রতিবাদ শুরু করলেন—এসব বিষয়ে ইসতিয়াক আহমেদ কথা বলেছেন প্রথম আলোর সঙ্গে।
প্রথম আলো: হঠাৎ কী মনে করে প্রতিবাদে দাঁড়ালেন?
ইসতিয়াক আহমেদ: আমি কম কথা বলার মানুষ। তখন হঠাৎ করে মনে হয়েছে, প্রতিবাদ করতে হবে। মানুষের বিবেক কখন জেগে ওঠে, বলা যায় না। আমার মধ্যে একটি চিন্তা ছিল, আজ আমি দাঁড়ালে কাল আরেকজন দাঁড়াবেন। এর মাধ্যমে কিছু মানুষ জানল, এভাবেও প্রতিবাদ করা যায়।
প্রথম আলো: ঢাকায় আপনি কত দিন ধরে মোটরসাইকেল চালান। এ অনিয়ম শুধু ওই ফিলিং স্টেশনে নাকি অন্যগুলোতেও পেয়েছেন?
ইসতিয়াক আহমেদ: ঢাকায় আমার মোটরসাইকেল চালানোর অভিজ্ঞতা তিন বছরের। বিভিন্ন ফিলিং স্টেশনে এ রকম অনিয়ম হয়। মাপে জ্বালানি কম দেয়। পেট্রলের সঙ্গে কেরোসিন মেশায়। এতে বাইকের শব্দ পাল্টে যায়। তবে অস্বাভাবিক তেল কম দেওয়ার ঘটনা এটাই প্রথম। ছোট ছোট অনিয়ম হয়তো দেখেও এড়িয়ে চলি। কিন্তু ৫০০ টাকা নিয়ে যদি ৩০০ টাকার তেল দেওয়া হয়, সেটা মানা যায় না। আমি অন্যদের সঙ্গে কথা বলে জেনেছি, ওই ফিলিং স্টেশনে এ রকম দুর্নীতি সব সময় ঘটে। এটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়।
প্রথম আলো: প্রতিবাদ কর্মসূচির পর আপনার পরিবার, বন্ধুবান্ধব, সহকর্মীরা কী বলছেন?
ইসতিয়াক আহমেদ: আমার মা-বাবা গ্রামে থাকেন। ঘটনার পর তাঁরা ফোন করে জেনেছেন। তাঁরাও বলেছেন, এটা অন্যায়। এটার প্রতিবাদ হওয়া উচিত এবং তা সব জায়গা থেকে হওয়া উচিত। আমরা অপরাধগুলোকে প্রশ্রয় দিয়ে এমন একটা ব্যবস্থা গড়ে তুলেছি। আর আমি এখন বড় হয়েছি। মুক্তিযুদ্ধের সময় তো যুবকেরাও যুদ্ধে গিয়েছিলেন। ভালোকে ভালো বলতে হবে। নাগরিক হিসেবে আমি আমার দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন করেছি। আমার বন্ধুবান্ধব ও সহকর্মীরাও ফোন করে সাহস জুগিয়েছেন।
প্রথম আলো: এ সমস্যা সমাধান হওয়ার সম্ভাবনা আছে?
ইসতিয়াক আহমেদ: জাতীয় ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তরের মহাপরিচালকসহ অন্য কর্মকর্তারা বিষয়টি জেনেছেন। আমি আশাবাদী তাঁরা ব্যবস্থা নেবেন। এর মাধ্যমে যদি ১০ জন মোটরসাইকেলচালকও উপকৃত হন, তাহলে আমার প্রতিবাদ সফল হবে। আমার সঙ্গে যে ঘটনা ঘটেছে, সেটার জন্য আমি যেমন প্রতিবাদ করেছি, তেমনি একটি ব্যবস্থার বিরুদ্ধেও কথা বলেছি। আরেকটি বিষয়, এই প্রতিবাদ করাও আমার অধিকার। আমরা বিভিন্ন সময় নানা রকম হয়রানির শিকার হই। তাই আমাদের জানতে হবে, নিজেদের অধিকারকে কীভাবে আদায় করতে হয়। এ ছাড়া এখন থেকে মোটরসাইকেলে জ্বালানি নেওয়ার সময় অনেকেই সতর্ক হবেন।
প্রথম আলো: ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তরের কার্যক্রমে আপনি সন্তুষ্ট?
ইসতিয়াক আহমেদ: আমি গতকাল সোমবার সকালে যখন প্রতিবাদ শুরু করি, তখন থেকে ভোক্তা অধিকার কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করি। কিন্তু তাঁদের হটলাইন নম্বরগুলো দিয়ে যোগাযোগ করতে পারিনি। আমি ঘটনাস্থল থেকে আসতে চাইছিলাম না। কারণ, সেখান থেকে চলে এলে প্রমাণ নষ্ট হয়ে যেতে পারে। পরে বিকেল পাঁচটার দিকে ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তর আমার সঙ্গে যোগাযোগ করে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছিল। ভোক্তা অধিকার কর্তৃপক্ষ ফিলিং স্টেশনের মালিকপক্ষের সঙ্গেও কথা বলেছিল। তারা ঘটনা স্বীকার করেছিল। এরপর আমি কর্মসূচি স্থগিত করি।
তবে আমি মনে করি, গণমাধ্যম আমার বিষয়টি তুলে ধরেছে, তাই ভোক্তা অধিকার আমাকে গুরুত্ব দিয়েছে। এ ক্ষেত্রে মিডিয়া যেভাবে আমার পাশে দাঁড়িয়েছে, সেটা আমাকে অনেক সহযোগিতা করেছে। আমি চাই, যেসব মানুষের অভিযোগগুলো মিডিয়ায় আসে না, তাঁদের বিষয়েও ভোক্তা অধিকার একইভাবে গুরুত্ব দেবে।
প্রথম আলো: মাপে তেল কম দেওয়া ঠেকাতে আপনার কোনো পরামর্শ আছে?
ইসতিয়াক আহমেদ: এক লিটার পানি কিনলে আমরা বুঝতে পারি, পরিমাপে ঠিক আছে কি না। কিন্তু জ্বালানি তেল কেনার ক্ষেত্রে আমাদের বোঝার উপায় নেই। তেল কী পরিমাণে দিচ্ছে, সেটা যদি দৃশ্যমান করা যেত, তাহলে অনিয়ম অনেকাংশে কমে যেত।