ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আহত ব্যক্তিদের দেখতে জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানে (পঙ্গু হাসপাতাল) গেলেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের রোহিঙ্গা সমস্যা ও অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত বিষয়াবলি-সংক্রান্ত বিশেষ প্রতিনিধি খলিলুর রহমান। আজ বুধবার দায়িত্ব গ্রহণের পর কিছু নিয়মতান্ত্রিক কাজ শেষে তিনি পঙ্গু হাসপাতালে আহত ব্যক্তিদের দেখতে যান।
এর আগে গতকাল মঙ্গলবার অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার রোহিঙ্গা সমস্যা ও অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত বিষয়াবলি-সংক্রান্ত বিশেষ প্রতিনিধি হিসেবে খলিলুর রহমানকে নিয়োগ দেওয়া হয়। খলিলুর রহমান বিকেলে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আন্দোলনের সময় আমি ছিলাম না। এই ছেলেরা (আহতরা) আন্দোলনের মুখচ্ছবি। তাঁদের দেখতে যাওয়া আমার একটা নৈতিক দায়িত্বও বটে। সেখানে হাসপাতালের পরিচালক আহতদের সঙ্গে আমার পরিচয় করিয়ে দিলেন। আমি আলাপ করলাম, তাঁরা কী ভাবছেন সেটি জানার চেষ্টা করলাম। তাঁদের অধিকাংশই বলেন, তাঁরা যে চিকিৎসা পাচ্ছেন, সেটি নিয়ে সন্তুষ্ট। হাসপাতালে দায়িত্ব পালনকারীদের ব্যবহার নিয়েও তাঁরা সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন।’
আহত ব্যক্তিরা দুটি দুশ্চিন্তার কথা জানিয়েছেন উল্লেখ করে খলিলুর রহমান বলেন, একটি হলো এখন হাসপাতালে আহত অবস্থায় চিকিৎসাধীন আছেন, কোনো কাজ করতে পারছেন না। তাঁদের কোনো আয় নেই। পরিবারকে ধার-দেনা করতে হয়েছে। এখন পাওনাদারেরা এসে ধরনা দিচ্ছে, টাকা ফেরত পেতে তাগাদা দিচ্ছেন। তাঁদের কোনো ধরনের সাহায্য করা যায় কি না। দ্বিতীয়টি হলো অনেকেই আছেন যাঁরা একটু বেশি আহত হয়েছেন এবং সুস্থ হতে অনেক সময় লাগবে। তাঁরা ভাবছেন, তাঁদের ভবিষ্যতের কর্মসংস্থান কেমন হবে? তাঁরা কি সত্যি কাজ করতে পারবেন কি না? চিকিৎসা শেষে তাঁদের কর্মসংস্থান করা এবং পুনর্বাসনের বিষয়ে সরকার যেন কিছু করে।
আহত ব্যক্তিদের মধ্যে যে উদ্দীপনা রয়েছে, সেটি দেখে উৎসাহবোধ করেছেন উল্লেখ করে খলিলুর রহমান বলেন, ‘একটা কথা বললেন একজন। সেটি হলো আজকে যদি রাষ্ট্র আমাদের ভার নিতে না পারে, তাহলে ভবিষ্যতে যদি এ ধরনের একটা অবস্থার উদ্ভব হয়, ফ্যাসিবাদের উদ্ভব হয়, কেউ কি আর প্রতিবাদ-প্রতিরোধ করতে যাবে?’
এই আহত ব্যক্তিদের প্রত্যাশা অনুযায়ী কাজ করাটা অনেক বড় কাজ হবে বলে মনে করেন খলিলুর রহমান। তিনি বলেন, ‘আমরা এখন যদি নতুন দিকে যেতে চাই, যারা আমাদের জন্য এতটা করেছেন, অথচ সেই নতুন দিনের পুরো স্বাদটা তাঁরা পাবেন না, সেটি হতে পারে না। তাঁদের তো আমরা ফেলে দিতে পারি না। আমি এতে খুব উৎসাহবোধ করেছি।’
‘রোহিঙ্গাদের নিরাপদে প্রত্যাবাসন প্রধান লক্ষ্য’
পঙ্গু হাসপাতালে আহত ব্যক্তিদের সঙ্গে সাক্ষাতের পর প্রধান উপদেষ্টার রোহিঙ্গা সমস্যা ও অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত বিষয়াবলি-সংক্রান্ত বিশেষ প্রতিনিধি খলিলুর রহমান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে যান। তিনি পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেনের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। খলিলুর রহমান বলেন, পররাষ্ট্র দপ্তর ছাড়া রোহিঙ্গা–সংক্রান্ত বিষয়ে কাজ করা দুষ্কর। এই কাজে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা শতভাগ সাহায্য করবেন, পাশে থাকবেন।
রোহিঙ্গা–সংক্রান্ত বিষয়ে নিজের লক্ষ্যের কথাও জানিয়েছেন খলিলুর রহমান। তিনি বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য একটাই। সেটি হচ্ছে, রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সব অধিকারসহ তাঁদের দেশে প্রত্যাবাসন করা। সুতরাং সব কাজ হবে এই লক্ষ্যকে সামনে রেখে।’
রোহিঙ্গা ইস্যুকে সারা বিশ্বের নজরে আনার চেষ্টা করবেন জানিয়ে খলিলুর রহমান বলেন, জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে রোহিঙ্গাদের ওপর একটি আন্তর্জাতিক কনফারেন্স করার বিষয়ে আলোচনা চলছে। সেই কনফারেন্সের প্রস্তাবটি গৃহীত হলে রোহিঙ্গা ইস্যু সামনে নিয়ে আসার ক্ষেত্রে বড় সুযোগ তৈরি হবে।