জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ট্রেনের ছাদে উঠে গন্তব্যের পথে যাত্রীরা। কমলাপুর, ঢাকা, ৯ এপ্রিল
জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ট্রেনের ছাদে উঠে গন্তব্যের পথে যাত্রীরা। কমলাপুর, ঢাকা, ৯ এপ্রিল

ট্রেনে ঈদযাত্রায় চাপ ছিল দুই দিন

ট্রেনে এবারের আট দিনের ঈদযাত্রায় চাপ ছিল মূলত দুই দিন। গত সোম ও গতকাল মঙ্গলবার যাত্রীরা ঝুঁকি নিয়ে যাত্রা করেন। যাত্রার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ভোগান্তি পোহাতে হয় তাঁদের। অন্য ছয় দিন অবশ্য ট্রেনে ঈদযাত্রা স্বাভাবিক ছিল।

রেলওয়ে সূত্র জানায়, ৩ এপ্রিল শুরু হয় ট্রেনে ঈদযাত্রা। শুরুর দিকে এই যাত্রা ছিল ভোগান্তিহীন। এই অবস্থা অব্যাহত ছিল। তবে গত সোমবার তৈরি পোশাক কারখানাগুলো ছুটির পর বিকেল থেকে সড়ক, নৌপথের পাশাপাশি রেলপথেও চাপ শুরু হয়। ওই দিন রাতে চাপ সামাল দিতে হিমশিম খায় রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। দেখা যায়, সোমবার দিন-রাতে ভেতরে জায়গা না পেয়ে উত্তরাঞ্চলের কিছু ট্রেনের ছাদে করে ঝুঁকি নিয়ে রওনা দেন যাত্রীরা।

একই অবস্থা অব্যাহত থাকে গতকাল মঙ্গলবারও। ভেতরে জায়গা না পেয়ে মঙ্গলবারও ছাদে চেপে ঢাকা ছাড়েন উত্তরাঞ্চলের যাত্রীরা। মঙ্গলবার সকালে একতা এক্সপ্রেস ট্রেনের ছাদে ওঠেন দুই বোন নাসরিন আক্তার ও নাসিমা আক্তার। তাঁদের গন্তব্য ছিল দিনাজপুরের পার্বতীপুর। যাত্রা শুরুর আগে একতা এক্সপ্রেস ট্রেনের ছাদ থেকে তাঁরা প্রথম আলোকে জানিয়েছিলেন, ভেতরে জায়গা না পেয়ে নিরুপায় হয়ে ছাদে উঠেছেন।

উত্তরাঞ্চল ছাড়াও ময়মনসিংহসহ আরও কিছু অঞ্চলের মানুষদের ছাদে চেপে যেতে দেখা গেছে।

যাত্রীদের ট্রেনের ছাদে ঝুঁকিপূর্ণ ঈদযাত্রাকে ‘বাস্তবতার কাছে হার’ উল্লেখ করে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন ম্যানেজার মোহাম্মদ মাসুদ সারওয়ার বলেছেন, ‘আমরা বারবার বলেছি ছাদে না ওঠার জন্য। তারপরও তাঁরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ছাদে উঠেছেন।’

ট্রেনযাত্রায় এবার বড় ধরনের শিডিউল বিপর্যয় ছিল না। তবে প্রায় প্রতিদিনই কয়েকটি ট্রেন কিছুটা দেরিতে স্টেশন ছেড়ে গেছে। মঙ্গলবার রাতে কুড়িগ্রাম এক্সপ্রেস ট্রেন ৩ ঘণ্টার বেশি সময় দেরিতে ছাড়ে। ওই ট্রেনের যাত্রী ফারুক সরকার প্রথম আলোকে বলেন, রাত ৮টা ৪৫ মিনিটে ট্রেন ছাড়ার কথা ছিল। কিন্তু ট্রেন ছাড়ে রাত ১২টার পর।

ঈদযাত্রার শেষ দিন আজ বুধবার ট্রেনে যাত্রীরা ভোগান্তিহীনভাবে বাড়ি ফিরেছেন। আজ সকালে কমলাপুর রেলস্টেশনে গিয়ে দেখা যায়, মানুষের চাপ নেই। প্রায় সব যাত্রী আসনে বসে যাচ্ছেন। কিছু কিছু আসন ফাঁকাও যাচ্ছে।

সামগ্রিক ঈদযাত্রা সম্পর্কে আজ কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন ম্যানেজার মোহাম্মদ মাসুদ সারওয়ার বলেছেন, এবারের ঈদযাত্রার মূল লক্ষ্য ছিল যাত্রীদের নির্বিঘ্নে ও নিরাপদে গন্তব্যে পৌঁছানো। সবাই মোটামুটি সুন্দরভাবে নিজ নিজ গন্তব্যে পৌঁছাতে পেরেছেন।

তবে যাত্রী ও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সোম ও মঙ্গলবার ট্রেনযাত্রা ঝুঁকিপূর্ণ ও ভোগান্তির ছিল। এই দুই দিন ঝুঁকিপূর্ণ ও ভোগান্তির জন্য ‘দুর্বল’ পরিকল্পনাকে দায়ী করছেন বিশেষজ্ঞরা।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক মো. হাদিউজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, ‘এখানে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ অসহায়, নিরুপায়। এই চাপ সামলানোর সক্ষমতা তাদের নেই।’