রাশিয়ার বিরুদ্ধে জাতিসংঘের প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দিয়েছে বাংলাদেশ

অবৈধভাবে ইউক্রেনের চারটি অঞ্চলের অন্তর্ভুক্তিকরণ এবং অবিলম্বে তা ইউক্রেনের কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার দাবিতে রাশিয়ার বিরুদ্ধে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে আনা এক প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দিয়েছে বাংলাদেশ। জাতিসংঘের সনদ, জাতিসংঘ চার্টার, একটি রাষ্ট্রের ভৌগোলিক অখণ্ডতা ও সার্বভৌমত্বসহ অন্যান্য মৌলিক নীতির পরিপ্রেক্ষিতে আজ বৃহস্পতিবারের ওই ভোটাভুটিতে বাংলাদেশ রাশিয়ার বিরুদ্ধে আনা নিন্দা প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দেয়।

নিউইয়র্কে জাতিসংঘের ১১তম জরুরি বিশেষ অধিবেশনে প্রস্তাবের পক্ষে ১৪৩টি দেশ ভোট দেয়। প্রস্তাবের বিপক্ষে পাঁচটি দেশ এবং ভোট দেওয়া থেকে বিরত থাকে ৩৫টি দেশ। জাতিসংঘের সর্বশেষ প্রস্তাবটি বিপুল ভোটে গৃহীত হওয়ার মধ্য দিয়ে সাত মাস ধরে চলমান যুদ্ধে প্রতিবেশীর ইউক্রেনের ভূখণ্ড দখলে রাশিয়ার অপপ্রয়াসের বিরুদ্ধে বৈশ্বিক বিরোধিতার জোরালো বার্তা প্রতিফলিত হয়েছে।

গত ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর থেকে এ নিয়ে জাতিসংঘে তিনটি প্রস্তাব গৃহীত হলো। এ ছাড়া জেনেভায় জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদে রাশিয়ার সদস্যপদ স্থগিত করার বিষয়ে একটি প্রস্তাব উত্থাপিত হয়েছে।

জাতিসংঘের চারটি প্রস্তাবের মধ্যে মানবিক সহায়তাবিষয়ক দ্বিতীয় রেজল্যুশনে বাংলাদেশ পক্ষে ভোট দিয়েছিল। কিন্তু প্রথম প্রস্তাব এবং মানবাধিকার পরিষদে ভোট দেওয়া থেকে বিরত থাকে বাংলাদেশ। গতকালের প্রস্তাবে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা ভোটদানে বিরত থাকে। বাংলাদেশসহ এ অঞ্চলের বাকি পাঁচটি দেশ প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দেয়।

ইউক্রেনের চারটি অঞ্চল দোনেৎস্ক, খেরসন, লুহানস্ক ও জাপোরিঝঝিয়াকে রাশিয়ার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য মস্কো গণভোটের আয়োজন করে। পরে ইউক্রেনের ওই চারটি অঞ্চলকে রাশিয়া অন্তর্ভুক্ত করে নেয়। রাশিয়ার এই সিদ্ধান্তের পর জাতিসংঘে ৭ অক্টোবর প্রস্তাবটি উত্থাপন করা হয়। ৫০টির বেশি দেশ প্রস্তাবে সমর্থন জানায়। ১০ অক্টোবর আলোচনা শুরু হয় এবং আলোচনার শুরুতে রাশিয়া প্রস্তাবটি গোপন ব্যালটের মাধ্যমে ভোটাভুটি করার প্রস্তাব করলে সেটির বিপক্ষে ১০৭টি ভোট পড়ে এবং প্রস্তাবটি বাতিল হয়ে যায়।

বাংলাদেশ সময় বৃহস্পতিবার (১৩ অক্টোবর) রাত দুইটার দিকে ‘ইউক্রেনের আঞ্চলিক অখণ্ডতা: জাতিসংঘ সনদের মূল নীতির সুরক্ষা’ শীর্ষক প্রস্তাবের বিষয়ে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। জাতিসংঘে গতকালের প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দেওয়ার বিষয়ে যুক্তি তুলে ধরে জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি মোহাম্মাদ আবদুল মুহিত বলেন, ‘যেকোনো দেশের ভৌগোলিক অখণ্ডতা ও সার্বভৌমত্ব এবং শান্তিপূর্ণ উপায়ে দ্বন্দ্ব নিরসন করতে জাতিসংঘ সনদে যা বলা হয়েছে, তা কোনো ব্যত্যয় ছাড়াই সব সময় মেনে চলতে হবে—এটি বাংলাদেশ দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে।’

মোহাম্মাদ আবদুল মুহিত বলেন, বাংলাদেশ মনে করে, যেকোনো দেশের আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত ভৌগোলিক অখণ্ডতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতি শ্রদ্ধা রাখা উচিত। ইউক্রেনের ভূখণ্ডের ক্ষেত্রে বিশ্ব যে অবস্থান নিয়েছে, সেই প্রেক্ষাপটে বলতে চাই যে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় প্যালেস্টাইন এবং অন্যান্য আরব ভূখণ্ড দখলের ক্ষেত্রে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে একই অবস্থান নেবে।

ইউক্রেনে চলমান সংকটের বিষয়ে বাংলাদেশ উদ্বিগ্ন উল্লেখ করে আবদুল মুহিত বলেন, যুদ্ধ, নিষেধাজ্ঞা, পাল্টানিষেধাজ্ঞা—কোনো দেশের জন্যই ভালো নয়। বাংলাদেশ মনে করে, দ্বন্দ্ব নিরসনের সবচেয়ে ভালো উপায় হচ্ছে সংলাপ ও কূটনীতি এবং এর মাধ্যমে যেকোনো ধরনের দ্বন্দ্ব নিরসন করতে হবে।

ইউক্রেনের ভৌগোলিক অখণ্ডতার প্রতি পূর্ণ সমর্থন করার পাশাপাশি প্রস্তাবে অত্যন্ত জোরালো ভাষায় গণভোট আয়োজনের জন্য রাশিয়ার নিন্দা জানানো হয়। একই সঙ্গে ওই গণভোটকে বেআইনি ঘোষণা করা হয়। এ ছাড়া সব দেশ, সংস্থা এবং জাতিসংঘের বিশেষায়িত সংস্থাগুলোকে ইউক্রেনের দখল করা জায়গার স্বীকৃতি না দেওয়ার জন্য আহ্বান জানানো হয়েছে।

রাশিয়াকে তার সব সিদ্ধান্ত বাতিল করা এবং ইউক্রেন থেকে মিলিটারি সরিয়ে নেওয়ার জন্য দাবি জানিয়ে প্রস্তাবে বলা হয়, ‘ওই সব সিদ্ধান্ত রাশিয়ার ভৌগোলিক অখণ্ডতা ও সার্বভৌমত্বের পরিপন্থী এবং জাতিসংঘ সনদের সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ।’

জানতে চাইলে সাবেক পররাষ্ট্রসচিব এবং দিল্লি ইউনিভার্সিটির বঙ্গবন্ধু চেয়ার মো. শহীদুল হক আজ বৃহস্পতিবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘বাংলাদেশ জাতিসংঘ সনদে জোরালোভাবে বিশ্বাস করে। জাতিসংঘ সনদে ঘোষিত ভৌগোলিক অখণ্ডতা, সার্বভৌমত্ব এবং কারও বিষয়ে নাক না গলানো—এগুলো আমাদের মৌলিক নীতি।

আমাদের মৌলিক নীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হওয়ায় আমরা এর পক্ষে ভোট দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। ওই নীতির কোনো ধরনের ব্যত্যয় হলে আমরা এর প্রতিবাদ করে থাকি।’