নোয়াখালীর সোনাইমুড়ী উপজেলার ওয়াছেকপুর গ্রামে নতুন গ্যাসকূপের (বেগমগঞ্জ-৪) আনুষ্ঠানিক খননকাজের উদ্বোধন করেছে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন অ্যান্ড প্রোডাকশন কোম্পানি লিমিটেড (বাপেক্স)। আজ সোমবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে কূপটির খননকাজ শুরু করা হয়। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বাপেক্সের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে গত মার্চ মাসে জেলার কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার সিরাজপুর ইউনিয়নের শাহাজাদপুর-সুন্দলপুর গ্যাসক্ষেত্রের আওতাধীন ৩ নম্বর কূপের (চর কাঁকড়া) খনন শেষে গ্যাসের সন্ধান পাওয়া যায়। ওই কূপটি থেকে গ্যাস উত্তোলনের প্রয়োজনীয় পরীক্ষা কার্যক্রম এরই মধ্যে শেষ হয়েছে। শিগগিরই ওই কূপটি থেকে জাতীয় গ্রিডে গ্যাস সরবরাহ শুরু করা হবে। কর্মকর্তারা আশা করছেন ওই কূপ থেকেও প্রতিদিন গড়ে ১০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা সম্ভব হবে।
বাপেক্স সূত্রে জানা গেছে, বেগমগঞ্জ-৪ (ওয়েস্ট) মূল্যায়ন কাম উন্নয়ন কূপ খনন প্রকল্পের আওতায় এই কূপটি খনন করা হচ্ছে। বাপেক্সের প্রকৌশলী ও শ্রমিকসহ দুই শতাধিক ব্যক্তি এই খননকাজের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন। এর আগে ২২ এপ্রিল কূপ খননের স্থানে ড্রিলিং রিগ স্থাপন করা হয়েছে। ১২০ দিন চলবে এই খননকাজ।
নতুন কূপের খনন উদ্বোধন উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বাপেক্সের মহাব্যবস্থাপক (খনন) প্রকৌশলী গাজী মোহাম্মদ মাহবুবুল হক, মহাব্যবস্থাপক (প্রকৌশল) প্রকৌশলী মোহাম্মদ শাহজাহান ও মহাব্যবস্থাপক (ভূতাত্ত্বিক বিভাগ) শামসিয়া মুকতাদিরসহ বাপেক্সের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
কূপটির ড্রিলিং ইনচার্জ মো. আসাদুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, আনুষ্ঠানিকভাবে কূপ খননের জন্য আগেই ‘ড্রিলিং রিগ’ স্থাপন করা হয়েছে। আজ আনুষ্ঠানিকভাবে খননকাজের উদ্বোধন করা হয়। প্রাথমিকভাবে কূপটি মাটির নিচে ৩ হাজার ২০০ মিটার পর্যন্ত খননের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। কূপটির চারটি জোনে প্রাকৃতিক গ্যাস মিলতে পারে বলে আশা করা যাচ্ছে। খনন শেষে প্রতিটি জোন থেকে প্রতিদিন গড়ে ১০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উত্তোলনের আশা করা হচ্ছে। উত্তোলন করা গ্যাস জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করা হবে।
বাপেক্স কর্মকর্তারা জানান, দেশের অর্থনীতি ও শিল্পায়নকে আরও গতিশীল করতে বাড়তি গ্যাস প্রয়োজন। এ লক্ষ্যে মানুষের চাহিদা পূরণে দেশীয় জ্বালানি অনুসন্ধান ও উৎপাদনকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছে সরকার। যার অংশ হিসেবে ২০২৫ সালের মধ্যে সরকারের পক্ষ থেকে ৪৬টি নতুন অনুসন্ধান, উন্নয়ন ও ওয়ার্কওভার কূপ খনন করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে ১৯৭৬ সালে প্রথম গ্যাসের সন্ধানে প্রথম কূপ খনন করা হয়। এরপর ১৯৭৮ সালে দ্বিতীয় আরেকটি কূপ খনন করা হয়। দুটি কূপের কোনোটিতে কাঙ্ক্ষিত পরিমাণ গ্যাস পাওয়া যায়নি। পরে ২০১৩ সালে তৃতীয় আরেকটি কূপের খনন শেষে সেখানে কাঙ্ক্ষিত গ্যাস পাওয়া যায়। পরে ওই কূপ থেকে গ্যাস উত্তোলন শুরু করা হয়। ওই কূপ থেকে বর্তমানে প্রতিদিন ৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করা হচ্ছে।