ফিরে দেখা

ক্ষমতা দখলের আগেই ‘ক্ষমতার স্বাদ’ নেন এরশাদ

  • জিয়া হত্যার পরপরই এরশাদ ক্ষমতা দখল করেননি সেনাবাহিনীর ভেতরে ও সাধারণ মানুষের বিরূপ প্রতিক্রিয়ার কথা ভেবে।

  • এরশাদ জানতেন, আওয়ামী লীগ প্রার্থী জয়ী হলে তিনি তাঁদের বাগে আনতে পারবেন না। কিন্তু বিচারপতি সাত্তার জয়ী হলে তাঁকে দিয়ে যা খুশি করাতে পারবেন।

হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ

বাংলাদেশের দ্বিতীয় সেনাশাসক লে. জে. হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ ক্ষমতায় এলেও প্রস্তুতি ছিল অনেক আগে থাকে। বাংলাদেশের অন্য সেনা অভ্যুত্থানগুলোর সঙ্গে এই অভ্যুত্থানের পার্থক্য হলো, তিনি এতে পুরো সেনাবাহিনীকে সঙ্গে নিতে পেরেছিলেন। অন্তত তিনি কারও বিরোধিতার সম্মুখীন হননি।

১৯৮১ সালের ৩০ মে চট্টগ্রামে ব্যর্থ সেনা অভ্যুত্থানে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান নিহত হওয়ার পর বিএনপি সরকার ছিল অনেকটা কিংকর্তব্যবিমূঢ়, দলের ভেতরে উপদলীয় কোন্দল ছিল প্রকট। চট্টগ্রাম বিএনপির বিরোধ মেটাতেই জিয়া ২৯ মে সেখানে গিয়েছিলেন।

জিয়া হত্যার পর এরশাদের মনোভাব জানা যায় অবসরপ্রাপ্ত মে. জে. মইনুল হোসেন চৌধুরীর লেখায়। সেনা সদর দপ্তরে তিনি এরশাদের কাছে জানতে চেয়েছিলেন, ‘এখন কী হবে।’ এরশাদ সরাসরি কিছু না বললেও সামরিক আইন জারিরই ইঙ্গিত দিলেন। ‘...বিএনপির অভ্যন্তরীণ কোন্দল ও কলহ চরম পর্যায়ে পৌঁছে। এই সুযোগে এরশাদের ক্ষমতা দখলের পথও সহজ হয়ে উঠেছিল। বিএনপির অনেক নেতা, মন্ত্রী ও কয়েকজন সচিব গোপনে এরশাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন।’ (এক জেনারেলের নীরব সাক্ষ্য)

১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ তুলনামূলক ক্ষমতাহীন রাষ্ট্রপতি বিচারপতি আবদুস সাত্তার বঙ্গভবন ত্যাগ করেন। এ দিন সরকারের নিয়ন্ত্রণ নিজের হাতে নেন তৎকালীন সেনাপ্রধান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ।

প্রস্তুতিপর্ব

জিয়া হত্যার পরপরই এরশাদ ক্ষমতা দখল করেননি সেনাবাহিনীর ভেতরে ও সাধারণ মানুষের বিরূপ প্রতিক্রিয়ার কথা ভেবে। তিনি অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি বিচারপতি আবদুস সাত্তারের প্রতি সমর্থন জানান। জিয়া-মঞ্জুর হত্যার ব্যাপারে এরশাদের প্রতি যে সন্দেহের তির ছিল, তা থেকেও তিনি নিজেকে রক্ষা করতে সচেষ্ট থাকেন। চট্টগ্রামের সেনা অভ্যুত্থানে প্রথমে জিয়া নিহত হন। এই হত্যার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণকারী জেনারেল মঞ্জুরকেও পরে চট্টগ্রাম সেনানিবাসে হত্যা করা হয়; ফলে জিয়া হত্যার সঙ্গে মঞ্জুরের সম্পৃক্ততা ছিল কি ছিল না, তা কখনো জানা যাবে না।

কয়েক মাস আগে থেকেই এরশাদ সেনাবাহিনীর সদস্যদের মধ্যে একটি কথা বেশ জোরেশোরে প্রচার করতে থাকেন যে মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে সৃষ্ট বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রথাগত বাহিনী নয়। রাষ্ট্রকে বহিঃশত্রুর হাত থেকে রক্ষার পাশাপাশি তাদের দেশ পরিচালনায় ভূমিকা রাখারও সুযোগ দিতে হবে। তিনি সামরিক জার্নালে ‘রোল অব মিলিটারি ইন ডেভেলপিং কান্ট্রি’ নামে একটি দীর্ঘ প্রবন্ধ লেখেন।

জিয়া হত্যার দায়ে যাঁরা বিচারের মুখোমুখি হলেন, তাঁরা প্রায় সবাই মুক্তিযোদ্ধা সেনা কর্মকর্তা। এর আগে যতগুলো বিদ্রোহ ও অভ্যুত্থান হয়েছে, সব কটির সঙ্গে মূলত মুক্তিযোদ্ধা সেনা কর্মকর্তারা জড়িত ছিলেন। এরশাদ এই সুযোগে সেনাবাহিনীর শীর্ষ নেতৃত্বে পাকিস্তান প্রত্যাগত কর্মকর্তাদের আনার ব্যবস্থা করেন; তিনি নিজেও একজন পাকিস্তান প্রত্যাগত কর্মকর্তা। অন্যদিকে বিএনপিতেও তখন মুক্তিযোদ্ধা ও অমুক্তিযোদ্ধা শিবির প্রকাশ্য দ্বন্দ্বে লিপ্ত ছিল।

প্রার্থী মনোনয়নে হস্তক্ষেপ

সেনাপ্রধান হয়েও এরশাদ রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে প্রার্থী মনোনয়নে ‘হস্তক্ষেপ’ করেন। বিএনপির একাংশ চাইছিল জিয়াউর রহমানের স্ত্রী খালেদা জিয়া প্রার্থী হোন। অপরাংশ অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি বিচারপতি সাত্তারের সমর্থক ছিল। এ প্রসঙ্গে জিয়ার এককালীন মন্ত্রী ও দ্বিতীয় জাতীয় সংসদের প্রভাবশালী সদস্য মওদুদ আহমদ লিখেছেন, ‘সাত্তারের প্রতি সেনাবাহিনীর সমর্থনের কারণে তাঁদের (সাত্তারের অনুসারীদের) পক্ষে ওই একগুঁয়ে মানসিকতা ও শক্তি প্রদর্শন সম্ভব হয়।’ (চলমান ইতিহাস, জীবনের কিছু সময়, কিছু কথা )

মন্ত্রিত্ব যাওয়ার পর মওদুদ আহমদ বিএনপির ‘বিদ্রোহী গ্রুপের’ নেতা হন। বিএনপির ৯০ জন সংসদ সদস্য তাঁর প্রতি আস্থাশীল ছিলেন বলে নিজের বইয়ে উল্লেখ করেছেন। মওদুদ যখন খালেদা জিয়ার মনোনয়নের পক্ষে প্রচার চালাচ্ছিলেন, তখন এরশাদ বঙ্গভবনে চারজনের একটি বৈঠকের ব্যবস্থা করেন; যাঁদের মধ্যে ছিলেন এরশাদ নিজে, অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি বিচারপতি সাত্তার, প্রধানমন্ত্রী শাহ আজিজুর রহমান ও মওদুদ আহমদ।

মওদুদ লিখেছেন, ‘নির্বাচনে সাত্তারের জয় সুনিশ্চিত করার বিষয়ে জেনারেল এরশাদ এবং তাঁর সহকর্মীরা উদ্বিগ্ন ছিলেন। এ ব্যাপারে কোনোরকম গোলযোগ বা বাধা বা জটিলতা সৃষ্টি হোক, তাঁরা সেটা চাননি। কোনোরকম ঝুঁকি নিতে তাঁরা রাজি ছিলেন না।...এরশাদ একদিকে যেমন সাত্তারের মনোনয়ন নিশ্চিত করতে চেয়েছেন, অন্যদিকে বিএনপির ভেতরকার দ্বন্দ্ব ও কলহ যেন চলতে থাকে, সেটাও চেয়েছেন।’ (চলমান ইতিহাস, জীবনের কিছু সময়, কিছু কথা)

১৯৮১ সালের ১৮ অক্টোবর সাপ্তাহিক হলি ডের সঙ্গে সাক্ষাৎকার দিয়ে এরশাদ আওয়ামী লীগ ও জেনারেল ওসমানীকে নাকচ করে দেন এবং বলেন, রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে বিএনপির কোনো বিকল্প নেই।

এরশাদ এসব কথা বলেছেন বিএনপির প্রতি কোনো দরদ থেকে নয়। তিনি জানেন, আওয়ামী লীগ প্রার্থী জয়ী হলে তিনি তাঁদের বাগে আনতে পারবেন না। কিন্তু বিচারপতি সাত্তার জয়ী হলে তাঁকে দিয়ে যা খুশি করাতে পারবেন। পরবর্তী ঘটনাপ্রবাহ সেদিকেই চালিত হয়।

সাংবিধানিক ভূমিকার দাবি

১৯৮১ সালের ১১ অক্টোবর লন্ডনের গার্ডিয়ানকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এরশাদ বলেছিলেন, দেশে ভবিষ্যতে যাতে সেনা অভ্যুত্থান ঘটতে না পারে, সে জন্য সামরিক বাহিনীকে সরাসরি দেশের প্রশাসনে জড়িত রাখতে হবে। সেনাবাহিনীর এই ভূমিকার প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে সংবিধানের প্রয়োজনীয় সংশোধনী আনারও প্রস্তাব দেন তিনি। ২০ নভেম্বর যেদিন বিচারপতি সাত্তার নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ নেন, সেদিনই এরশাদ বিবিসিকে সাক্ষাৎকার দিয়ে দেশ শাসনে সেনাবাহিনীর ভূমিকার কথা পুনরুল্লেখ করেন।

প্রকাশ্যে এসব ঘটনার বাইরে ক্ষমতার অন্দরমহলে নানা তৎপরতা চলছিল। বিএনপির নেতৃত্বের বিভক্ত গ্রুপগুলো একে অপরকে ঘায়েল করতে সেনাপ্রধানের সমর্থন চায়। সেনাপ্রধানও এক গ্রুপকে অন্য গ্রুপের বিরুদ্ধে ব্যবহার করেন।

সম্পাদকদের সঙ্গে বৈঠক

১৯৮১ সালের ২৮ নভেম্বর সেনাপ্রধান এরশাদ ঢাকার কয়েকটি পত্রিকা ও বার্তা সংস্থার সম্পাদককে তাঁর অফিসে আমন্ত্রণ জানান। সেখানে তিনি একটি লিখিত বিবৃতি পড়ে শোনান এবং তার কপি সম্পাদকদের হাতে দেন। পরদিন সংবাদ শিরোনাম করে: ‘ক্ষমতার ভাগ নয়, সেনাবাহিনী গণতন্ত্র নির্মাণে সাহায্য করতে চায়’। ইত্তেফাক-এর শিরোনাম ছিল: ‘গণতান্ত্রিক সরকার কাঠামোর মধ্যেও জাতি গঠনমূলক কাজে সেনাবাহিনীর ভূমিকা থাকিতে পারে’।

এরশাদের বিবৃতির মূল কথা ছিল: ‘নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে কীভাবে সেনাবাহিনী দেশ গঠনে তাহার ভূমিকা রাখিতে পারেন, সেই বিষয়টি সকলকেই খুঁজিয়া দেখিতে হইবে। নিজের কোনো ব্যক্তিগত উচ্চাভিলাষ পূরণের উদ্দেশ্য নয় বরং অতীতের অভিজ্ঞতা ও বাস্তবতার নিরিখেই তিনি এর প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করেন।...অনুগ্রহপূর্বক সশস্ত্র বাহিনীর উপর পূর্ণ আস্থা রাখুন।

তাহাদিগকে এই উপলব্ধি দিন যে তাহারাও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার অবিচ্ছেদ্য অংশ এবং এভাবে হঠকারিতা রোধে সৈনিকদের সহায়তা করিতে জনগণকে সুযোগ দিন। বিশ্বের অনেক দেশের সংবিধানেই এমন সাংবিধানিক মর্যাদা নিশ্চিত করা আছে। (ইত্তেফাক, ২৯ নভেম্বর, ১৯৮১)

গোয়েন্দা সংস্থাকে কাজে লাগানো

সেনাপ্রধান এরশাদ ও তাঁর সহযোগীরা বিএনপি সরকারকে জনসমক্ষে হেয় করতে গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে ব্যবহার করেন। বিভিন্ন পত্রিকায় অভিন্ন শিরোনামে খবর বের হয়: ‘১৬ মন্ত্রীর দুর্নীতির অভিযোগ তদন্ত চলছে এবং বিচারপতি সাত্তার এই নির্দেশ দিয়েছেন’।

মওদুদ লিখেছেন, বিচারপতি সাত্তারের মন্ত্রিসভা আগে থেকে দুই ভাগে বিভক্ত ছিল নীতিগত কারণে নয়, ব্যক্তিস্বার্থে। এদের মধ্যে একটি দল সামরিক নেতৃত্বের সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছে, যাতে সেনাবাহিনী ক্ষমতা দখল করলেও তাদের মন্ত্রিত্ব থাকে। এ সময় বঙ্গভবনে কী কী কথা হতো, তা-ও সেনাপ্রধানের কাছে চলে যেত।

জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদ

এরশাদের প্রস্তাব অনুযায়ী জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদ গঠিত হয়। বিচারপতি সাত্তার চেয়েছিলেন ১০ সদস্যের পরিষদে বেসামরিক প্রতিনিধিরা সংখ্যাগরিষ্ঠ থাকবেন। কিন্তু সেনাপ্রধান সে প্রস্তাব নাকচ করে দেন। এরপর ছয় সদস্যের কমিটি গঠন করা হয় রাষ্ট্রপতি, উপরাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও তিন বাহিনীর প্রধানদের নিয়ে।

এরই মধ্যে একটি ঘটনা সরকারকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলে। যুবমন্ত্রী আবুল কাশেমের বাড়ি থেকে খুনের মামলার আসামি ইমদাদুল হক ওরফে ইমদুকে গ্রেপ্তার করা হয়। এই ইমদু একসময় আওয়ামী লীগ করতেন, পরে জাসদ হয়ে বিএনপিতে যোগ দেন।

এরপর সরকারের ওপর সেনা নেতৃত্বের চাপ আরও বাড়তে থাকে। মওদুদের ভাষ্য অনুযায়ী, ইমদুর ঘটনার পরদিন কয়েকজন জ্যেষ্ঠ সেনা কর্মকর্তা বঙ্গভবনে যান এবং সাত্তারকে স্বেচ্ছায় ক্ষমতা ছাড়তে চাপ দেন। রাষ্ট্রপতি দুর্নীতিবাজ ও অদক্ষ মন্ত্রিসভা বাতিল করতে রাজি হলেও সেদিন ক্ষমতা ছাড়তে অস্বীকৃতি জানান।

মার্কিন রাষ্ট্রবিজ্ঞানীর চোখে

মার্কিন রাষ্ট্রবিজ্ঞানী লরেন্স জিরিং বাংলাদেশের রাজনীতি নিয়ে গবেষণা করেছেন। তিনি বাংলাদেশ: ফ্রম মুজিব টু এরশাদ, অ্যান ইন্টারপেরেটিভ স্টাডি বইয়ে লিখেছেন: বিচারপতি সাত্তার এরশাদের হস্তক্ষেপ ঠেকানোর চেষ্টা করেছেন। কিন্তু সমস্যা সমাধানে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে না পেরে ব্যর্থ হন। ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ ক্লান্ত ও তুলনামূলক ক্ষমতাহীন রাষ্ট্রপতি বঙ্গভবন ত্যাগ করেন এবং সরকারের নিয়ন্ত্রণ নিজের হাতে নেন এরশাদ।

অবশ্য এরশাদ তাঁর নিজের বই আমার কর্ম ও জীবন-এ ভিন্ন কথা বলেছেন। তাঁর দাবি, ‘দেশ যখন চরম বিপর্যয়ের মুখোমুখি, তখন দলীয় নেতাদের অন্যায় আচরণ সমর্থন না করে বিজ্ঞ রাষ্ট্রপতি বিচারপতি আবদুস সাত্তার আমাকে ডেকে পাঠালেন। দেশের সংকটময় মুহূর্তে সেনাবাহিনীর প্রধান হিসেবে আমাকে দেশ পরিচালনার দায়িত্ব নিতে নির্দেশ দিলেন।’

কূটনৈতিক যোগাযোগ

ক্ষমতারোহণের আগে থেকে এরশাদ প্রভাবশালী ‘বন্ধুরাষ্ট্র’ যথা যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, চীন ও ভারতের রাষ্ট্রদূতদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ করতেন। সংশ্লিষ্ট দেশের ঢাকায় কর্মরত রাষ্ট্রদূতদের ক্ষমতা দখলের পরিকল্পনার কথাও জানানো হয়েছিল।

রাজনৈতিক দলের মিশ্র প্রতিক্রিয়া

১৯৮১ সালের ২৮ নভেম্বর এরশাদের বিবৃতির পর রাজনৈতিক দলগুলো থেকে যেসব প্রতিক্রিয়া আসে, বেশির ভাগই এরশাদের প্রস্তাবের পক্ষে। একমাত্র আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাজেদা চৌধুরীর বিবৃতিতে রাজনৈতিক বিষয়ে সেনাপ্রধানের বক্তব্যে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়।

জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের সভাপতি এম এ জলিল ও সাধারণ সম্পাদক আ স ম রব সেনাপ্রধানের বক্তব্যের গুরুত্ব ও পরিধি বিবেচনা করে জাতীয় ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ এবং আলোচনার মাধ্যমে সমাধান খুঁজে বের করার আহ্বান জানিয়েছেন। ইউনাইটেড পিপলস পার্টির জাতীয় কমিটির সভায় বলা হয়, সেনাপ্রধানের বিবৃতিতে সেনাবাহিনীর কাঠামো ও ভূমিকা সম্পর্কে যে মতামত প্রতিফলিত হয়েছে, তা বিবেচনার দাবি রাখে। বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টিও বিষয়টি ধামাচাপা না দিয়ে খোলাখুলি আলোচনা ও এ বিষয়ে জনগণের রায় নেওয়ার আহ্বান জানায়।

সাম্যবাদী দলের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ তোয়াহা বলেন, এরশাদের বিবৃতিতে যে ধারণা প্রকাশ পেয়েছে, তা গভীরভাবে ভেবে দেখার মতো। এর জন্য জাতীয় দৃষ্টিভঙ্গির সামগ্রিক পরিবর্তনেরও তাগিদ দেন তিনি। বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জাকির খান চৌধুরী ও মহাসচিব মো. গিয়াসউদ্দিন এরশাদের প্রস্তাব বাস্তবায়নে অবিলম্বে এগিয়ে আসার জন্য রাষ্ট্রপতির কাছে আহ্বান জানান।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাজেদা চৌধুরী বলেন, দেশের বর্তমান রাষ্ট্রীয় ও প্রশাসনিক কাঠামোর মধ্যে সংবিধান বলবৎ থাকা অবস্থায় সেনাবাহিনী প্রধানের কাছ থেকে জাতীয়, মৌলিক, সাংবিধানিক, অর্থনৈতিক ও প্রশাসনিক বিষয়ে বক্তব্য আসার কথা নয়। নির্বাচনোত্তর জটিলতর অবস্থায় সেনাবাহিনী প্রধানের বক্তব্য ও সরকারের নীরবতা দেশবাসীর জন্য উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

বাংলাদেশে এর আগের অভ্যুত্থানগুলো ছিল রক্তাক্ত ও সেনাবাহিনীর বিভিন্ন গ্রুপ একে অপরের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধারণ করেছে। কিন্তু ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চের অভ্যুত্থান ছিল রক্তপাতহীন। এরশাদের ৯ বছরের শাসনে সেনাবাহিনীতে কোনো অভ্যুত্থানের ঘটনার কথা জানা যায় না। তিনি যাঁকেই প্রতিপক্ষ মনে করেছেন, তাঁকে সেনাবাহিনী থেকে বিদায় দিয়েছেন। তাঁর শাসনের প্রায় পুরোটা সময় ছিল ঝঞ্ঝাক্ষুব্ধ ও আন্দোলনমুখর। নব্বইয়ে গণ-অভ্যুত্থানের মুখেই এই সেনাশাসককে ক্ষমতা থেকে বিদায় নিতে হয়।