জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে ক্ষতিগ্রস্ত প্রবাসীদের জন্য কর্মসংস্থান এবং তাঁদের জন্য জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের মতো একটি ট্রাস্ট গঠনসহ ছয় দফা দাবি উঠেছে। পাশাপাশি ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত প্রবাসীদের একটি প্রতিনিধিদলকে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতের সুযোগ দেওয়ার দাবি জানানো হয়েছে।
শুক্রবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে এক সংবাদ সম্মেলনে ক্ষতিগ্রস্ত প্রবাসীরা এসব দাবি জানিয়েছেন। ‘সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ অন্যান্য প্রবাসীবৃন্দ’ ব্যানারে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে তিনজন বিদেশফেরত প্রবাসী লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন। এতে তাঁরা বলেন, জুলাই-আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানে স্বৈরাচারী আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে বিদেশে আন্দোলন গড়ে তোলেন প্রবাসীরা। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে সমর্থন দিয়ে বিক্ষোভ মিছিল করেন তাঁরা। কিছু দুষ্কৃতকারী এই যৌক্তিক আন্দোলনকে ভিন্ন খাতে নিয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ অন্যান্য দেশে আন্দোলনকারী প্রবাসীদের ঠিকানা, পাসপোর্ট নম্বর কনস্যুলার অফিসে জমা দেয়। আমিরাতের তৎকালীন কনস্যুলার জেনারেল বি এম জামাল সে দেশের আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কাছে তথ্য পাঠিয়ে দেয়। আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ত বা সমালোচনাকারীদের তালিকা প্রস্তুত করেন আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা। তাঁদের এই তথ্যের ভিত্তিতে আমিরাতে প্রবাসীদের গ্রেপ্তার করা হয়। যারা আমিরাতের বাংলাদেশি প্রবাসীদের এই ক্ষতি করেছে, তাদের চিহ্নিত করে বিচারের আওতায় আনার দাবি জানানো হয় সংবাদ সম্মেলনে।
ছয় দফা দাবি পাঠ করেন সৌদিফেরত মাইন উদ্দিন বাবু। তিনি বলেন, ‘দেশের মানুষের স্বার্থে আমরা যৌক্তিক আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেছি। দীর্ঘদিন বিদেশে অবস্থান করে দেশের জন্য অবদান রেখেছি। অথচ এই অন্তর্বর্তী সরকার আমাদের কোনো খোঁজ নিল না।’
আমিরাতফেরত খালেদ সাইফুল্যাহ বলেন, ‘অতি দ্রুত প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে আমাদের সাক্ষাতের ব্যবস্থা করে দিতে হবে। আমরা দেশের মানুষের সঙ্গে এক হয়ে প্রবাসে আন্দোলন করেছি। আজ দেশে এসে আমরা মানবেতর জীবন যাপন করছি। কেউ আমাদের খোঁজ নেয় না।...আমরা চাই জুলাই-আগস্টের বিপ্লবের সঙ্গে আমাদের প্রবাসীদের ত্যাগও লেখা হোক। আমাদের যাঁরা বিদেশে আন্দোলন করেছেন, তাঁদের নামও ইতিহাসে লেখা হোক।’
আমিরাতফেরত আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের যখন ফেরত পাঠানো হয়, বিমানবন্দরে এসে এক গ্লাস পানি পর্যন্ত পাইনি। তাঁরা আমাদের ফুল দিচ্ছেন; আমাদের সঙ্গে ফটোসেশন করছেন, কিন্তু আমরা কতটা কষ্ট করে এসেছি, সেই খবর তাঁরা আমাদের কাছে শোনেননি। নতুন বাংলাদেশে আমরা এখনো বঞ্চিত।’
উল্লেখ্য, কোটা সংস্কার আন্দোলনের প্রতি সংহতি জানিয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতে বিক্ষোভ করায় ৫৭ বাংলাদেশিকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দিয়েছিলেন সে দেশের আদালত। বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের তৎপরতায় তাঁদের ক্ষমা করে আমিরাত সরকার। গত নভেম্বরের শেষের দিকে আটক আরও ৭৫ প্রবাসী বাংলাদেশিকে ক্ষমা করে আমিরাত সরকার।