২০২৩-২৪ মৌসুমে দর
চট্টগ্রামে প্রতি কেজি ১৭১ টাকা ৯১ পয়সা।
শ্রীমঙ্গলে প্রতি কেজি ১৭১ টাকা ৩৮ পয়সা।
পঞ্চগড়ে প্রতি কেজি ১০৫ টাকা ১৯ পয়সা।
চা চাষের ইতিহাসে সর্বোচ্চ উৎপাদন হয়েছিল ২০২৩ সালে। সেই চা নিলামে বিক্রি শেষ হয়েছে গত ৮ এপ্রিল। তাতে দেখা যায়, নিলামে প্রতি কেজি চা গড়ে বিক্রি হয়েছে ১৭১ টাকা ২৪ পয়সা। চায়ের নিলামের গত ১২ বছরের ইতিহাসে এই দর সবচেয়ে কম। এ অঞ্চলে চা চাষ শুরু হয় ১৮৪০ সালে।
চায়ের বিপণনের নিয়ম অনুযায়ী, বাগানমালিকেরা বাগান থেকে পাতা তুলে চা তৈরির পর তা গুদামে পাঠান। ব্রোকার্স প্রতিষ্ঠানগুলো সেখান থেকে নমুনা সংগ্রহ করে। নমুনা অনুযায়ী চায়ের মান নির্ধারণ করে তারা। এরপর প্রতি সপ্তাহে নিলামে সর্বোচ্চ দরদাতার কাছে চা বিক্রি করা হয়।
লট অনুযায়ী সর্বোচ্চ দরদাতারা কর পরিশোধ করে গুদাম থেকে চা তুলে নেন। এর বাইরে বাগানমালিকেরা চাইলে নিজস্ব বাগানের উৎপাদিত চায়ের ২৫ শতাংশ নির্ধারিত পরিমাণ কর দিয়ে প্যাকেটজাত করে বাজারে বিক্রি করতে পারেন।
বর্তমানে দেশে তিনটি নিলামকেন্দ্র—চট্টগ্রাম, শ্রীমঙ্গল ও পঞ্চগড়ে চায়ের নিলাম অনুষ্ঠিত হয়। এই তিন নিলামকেন্দ্রের তথ্যে রেকর্ড উৎপাদন ও সর্বনিম্ন দরের চিত্র উঠে এসেছে। ব্রোকার্স প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতিবেদনেও এ হিসাব তুলে ধরা হয়।
নিলামে যে দরে চা বিক্রি হচ্ছে, তা দিয়ে উৎপাদন খরচ উঠছে না। তবে চা বোর্ডের পদক্ষেপ ইতিবাচক।কামরান টি রহমান, সভাপতি, বাংলাদেশ টি অ্যাসোসিয়েশন
নিলামের প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০২৩-২৪ মৌসুমে চট্টগ্রামে ৫০টি নিলামে চা বিক্রি হয়েছে ৯ কোটি ৪৮ লাখ কেজি। প্রতি কেজি চায়ের গড় দর পাওয়া গেছে ১৭১ টাকা ৯১ পয়সা। শ্রীমঙ্গলে ২৫টি নিলামে ১৩ লাখ ৪০ হাজার কেজি চা বিক্রি হয়েছে। প্রতি কেজি চায়ের গড় দর ছিল ১৭১ টাকা ৩৮ পয়সা। এ ছাড়া পঞ্চগড়ে ১৪টি নিলামে ৯ লাখ ৬০ হাজার কেজি চা বিক্রি হয়েছে প্রতি কেজি গড়ে ১০৫ টাকা ১৯ পয়সায়। সব মিলিয়ে তিনটি নিলামকেন্দ্রে ৯ কোটি ৭১ লাখ কেজি চা বিক্রি হয়েছে। এতে গড় দর পাওয়া গেছে ১৭১ টাকা ২৪ পয়সা।
চা বোর্ড ও ব্রোকার্স প্রতিষ্ঠানগুলোর তথ্যে দেখা যায়, গত ১২ বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম দরে চা বিক্রির রেকর্ড রয়েছে ২০১১-১২ মৌসুমে। সেবার প্রতি কেজি চা নিলামে গড়ে বিক্রি হয়েছে ১৫৬ টাকা ১৪ পয়সায়। এরপর সবচেয়ে কম দর ছিল সদ্য শেষ হওয়া ২০২৩-২৪ মৌসুমে।
গত ১২ বছরে নিলামে চায়ের সবচেয়ে ভালো দাম পাওয়া গেছে ২০১৮-১৯ মৌসুমে। ওই সময়ের নিলামে প্রতি কেজি চা গড়ে বিক্রি হয়েছে ২৬২ টাকা ৯৬ পয়সায়। সেবার ২ হাজার ৮৬ কোটি টাকার চা নিলামে বিক্রি হয়েছিল।
জানতে চাইলে চা বেচাকেনায় যুক্ত একজন ব্যবসায়ী প্রথম আলোকে জানান, সদ্য শেষ হওয়া মৌসুমে চায়ের চাহিদার চেয়ে উৎপাদন ছিল বেশি। আবার সমতলের চায়ের মান ভালো ছিল না। তাতে নিলামে চায়ের দরপতন হয়। তবে নিলামে যেসব বাগানের চায়ের মান ভালো, সেগুলো ভালো দামে বিক্রি হয়েছে। গড়পড়তা ও নিম্নমানের চায়ের দাম ছিল কম।
২০২৩-২৪ মৌসুমে চায়ের নিলামে যে গড় দর পাওয়া গেছে, তা গত ১২ বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম।
মজুরি ও উপকরণের দাম বাড়ায় চা-শিল্পে উৎপাদন খরচ বেড়েছে। চা-বাগানের মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ টি অ্যাসোসিয়েশনের হিসাবে, উৎপাদন খরচের চেয়ে নিলাম দর অনেক কম। তাতে চা-শিল্পে উৎপাদকেরা লোকসান গুনছেন।
বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনে গত ২০ নভেম্বর পাঠানো এক চিঠিতে সংগঠনটি জানায়, ২০২২ সালে প্রতি কেজি চায়ের গড় উৎপাদন খরচ ছিল ২১৭ টাকা। ২০২৩ সালে উৎপাদন খরচ আরও বেড়েছে বলে জানিয়েছেন সংগঠনটির সভাপতি কামরান টি রহমান। ২৪ এপ্রিল চা বোর্ডের ন্যূনতম মূল্য নির্ধারণবিষয়ক একটি কমিটির বৈঠকের কার্যবিবরণীতে বলা হয়েছে, ২০২৩ সালে চা উৎপাদনে ৪৬৫ কোটি টাকা লোকসান হয়েছে।
উৎপাদন খরচের চেয়ে নিলামে দাম কমায় চা বোর্ড ২০২৪-২৫ মৌসুমের নিলামে পরীক্ষামূলকভাবে ন্যূনতম মূল্যসীমা নির্ধারণ করে দিয়েছে। নতুন মৌসুমে প্রথম নিলাম অনুষ্ঠিত হয়েছে গত সোমবার।
ব্রোকার্স প্রতিষ্ঠানগুলোর তথ্যে দেখা যায়, প্রথম নিলামে ১৪ লাখ কেজি চা তোলা হয়েছিল। এর মধ্যে বিক্রি হয়েছে ৭ লাখ ২০ হাজার কেজি চা। প্রতি কেজি চা বিক্রি হয়েছে ২৭০ টাকা ৯৮ পয়সায়। গত মৌসুমের প্রথম নিলামে গড় মূল্য ছিল ২৪৯ টাকা ২৩ পয়সা। অর্থাৎ চা বোর্ডের নতুন পদক্ষেপে গতবারের তুলনায় ভালো দাম পাওয়া গেছে।
চায়ের লিকারের ওপর ভিত্তি করে ছয় ধাপে ন্যূনতম মূল্য বা ফ্লোর প্রাইস নির্ধারণ করা হয়েছে। বাগানমালিকেরা ব্রোকার্স প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে চায়ের নমুনা পাঠানোর পর তারা লিকার রেটিং করবে। সবচেয়ে সাধারণ মানের চায়ের ন্যূনতম মূল্য হবে ১৬০ টাকা। এর চেয়ে ভালো মানের চায়ের ন্যূনতম মূল্য হবে যথাক্রমে ২১০, ২২৭, ২৪৫ ও ২৭০ টাকা। সবচেয়ে ভালো মানের চায়ের ন্যূনতম মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৩০০ টাকা।
বাংলাদেশ টি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি কামরান টি রহমান প্রথম আলোকে বলেন, নিলামে যে দরে চা বিক্রি হচ্ছে, তা দিয়ে উৎপাদন খরচ উঠছে না। তবে চা বোর্ডের পদক্ষেপ ইতিবাচক। এটা পুরো নিলাম মৌসুমে বাস্তবায়ন করা গেলে চা-শিল্প রক্ষা করা যাবে।