প্রদর্শনীর উদ্বোধনী, তার সঙ্গে বইয়ের মোড়ক উন্মোচন আর তপ্তদিনের শেষে ঘনিয়ে আসা সন্ধ্যায় সরোদ বাদনের মনোজ্ঞ আয়োজন ছিল আজ বুধবার গুলশান-২–এর নর্থ অ্যাভিনিউয়ের এজ গ্যালারিতে।
দেশের বিশিষ্ট স্থপতি কাশেফ চৌধুরীর কাজ নিয়েই এই আয়োজন। তিনি সাতক্ষীরায় ‘ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতাল’ ভবনের নান্দনিক স্থাপনার জন্য ২০২২ সালে যুক্তরাজ্যভিত্তিক রয়্যাল ইনস্টিটিউট অব ব্রিটিশ আর্কিটেক্টসের (রিবা) পুরস্কার পেয়েছেন। সেই স্থাপনার পূর্ণাঙ্গ মডেল, বিভিন্ন অংশের আলোকচিত্র, স্থাপত্য নকশা এসব নিয়েই ‘রাইজিং ওশানস অ্যান্ড দ্য স্পেসেস দ্যাট কেয়ার’ নামের প্রদর্শনী। সঙ্গে ছিল এই স্থাপনার প্রায় দেড় শ ছবি নিয়ে একই নামের একটি বই এবং কাশেফ চৌধুরীর স্থাপত্য বিষয়ে দুটি বক্তৃতা নিয়ে ‘দ্য কনসাসনেস অব প্লেস’ নামের আরেকটি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন। এই বই দুটি প্রকাশিত হয়েছে সুইজারল্যান্ডের কোয়ার্ট ভার্লাগ প্রকাশনী থেকে।
আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের আগে ছিল শিল্পী রাজরূপা চৌধুরীর সরোদবাদন পরিবেশনা। তিনি রাগ অনিলে আওচার আলাপ, জোর ও ঝালা বাদন করে শোনান।
প্রদর্শনীর উদ্বোধন ও গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন করেন প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা ও সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা কবি কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী। তিনি বলেন, স্থাপত্যকর্ম এমন একটি শিল্প, যেটি একই সঙ্গে ব্যবহারোপযোগী এবং নান্দনিক। একটি স্থাপত্যের সঙ্গে সেই এলাকার স্থানীয় ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্য, ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, মানুষের জীবনাচরণ এসব পরিচয়ও জড়িয়ে থেকে। কাশেফ চৌধুরীর স্থাপত্যকলায় এই বিষয়গুলো সন্নিবেশিত থাকে।
কামাল চৌধুরী আরও বলেন, আমাদের দেশ জলবায়ু পরিবর্তনজনিত প্রবল ঝুঁকিতে রয়েছে। উপকূল অঞ্চলে বিপুলসংখ্যক মানুষের বসবাস। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি পেলে এসব মানুষের বাসস্থান বিপর্যস্ত হবে, জীবনযাপন অনিশ্চিত হয়ে পড়বে। উপকূলবাসী ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য পরিবেশবান্ধব বাসস্থান নির্মাণের ক্ষেত্রে স্থপতিরা গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারেন বলে তিনি উল্লেখ করেন।
স্থপতি কাশেফ চৌধুরীর স্থাপত্যকলার বৈশিষ্ট্য নিয়ে আলোচনায় ইমেরিটাস অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম বলেন, তিনি বহু বছর থেকে তাঁর স্থাপত্যকর্ম দেখে আসছেন। কাশেফ চৌধুরী তাঁর কাজে প্রধানত স্থানীয় উপকরণ ব্যবহার করেন। বিদেশি উপকরণ ব্যবহারে তিনি আগ্রহী নন। যে এলাকায় তিনি কাজ করেন, সেখানকার স্থানিক বৈশিষ্ট্য, প্রকৃতি ও প্রতিবেশকে তিনি তাঁর স্থাপনার সঙ্গে যুক্ত করে নেন। নিসর্গ থেকে তিনি নান্দনিকতা তুলে আনেন। এর সঙ্গে আলোছায়া, বাতাসের স্বাভাবিক প্রবাহ, বৃষ্টির মতো প্রাকৃতিক উপাদানগুলোর সম্ভব সর্বাধিক প্রয়োগের চেষ্টা করেন। এসব কারণে তাঁর স্থাপত্যকলা একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য লাভ করে।
স্থপতি কাশেফ চৌধুরী তাঁর বক্তব্যে পাওয়ার পয়েন্টে স্থাপনাগুলোর ছবি ও বৈশিষ্ট্য তুলে ধরেন। সেসবের বিস্তারিত ব্যাখ্যা করেন। সাতক্ষীরার ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতাল তৈরির আগে তিনি গাইবান্ধায় ফ্রেন্ডশিপের আরেকটি ভবনের জন্য ২০১৬ সালে আগা খান স্থাপনা পুরস্কার পেয়েছিলেন। এই স্থাপনাগুলো নিয়ে তিনি আলোচনা করেন। তিনি বলেন, ব্রহ্মপুত্র ও পদ্মাপাড়ের মাটির ধরন, পানি, ধানের খড়, রোদ, গাছপালা প্রভৃতি তাঁর নান্দনিক ভাবনা ও পরিকল্পনায় উঠে আসে। এসবে তিনি একধরনের আধ্যাত্মিকতার অনুভব করেন। এই স্থাপত্যকলার ভেতর দিয়ে সেই আধ্যাত্মিকতারও প্রকাশ ঘটে। তাঁর ‘দ্য কনসাসনেস অব প্লেস’ বইতে এই বিষয়গুলো উঠে এসেছে।
এই বইতে যে দুটি বক্তৃতা অন্তর্ভুক্ত হয়েছে তার একটি তিনি ভারতে স্থাপত্য বিষয়ের এক সেমিনারে দিয়েছিলেন। অন্যটি ঢাকায় অনুষ্ঠিত কমনওয়েলথ অ্যাসোসিয়েশন অব আর্কিটেক্ট সম্মেলনে।
অনুষ্ঠানে আরও আলোচনা করেন বেসরকারি সংস্থা ফ্রেন্ডশিপের নির্বাহী পরিচালক রুনা খান। এই প্রদর্শনী সবার জন্য প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত আগামী ২ জুন পর্যন্ত খোলা থাকবে।