ঢাকায় নিযুক্ত জাপানের বিদায়ী রাষ্ট্রদূত ইওয়ামা কিমিনোরি সেমিনারে বক্তব্য দেন। ঢাকা, ২২ ডিসেম্বর
ঢাকায় নিযুক্ত জাপানের বিদায়ী রাষ্ট্রদূত ইওয়ামা কিমিনোরি সেমিনারে বক্তব্য দেন। ঢাকা, ২২ ডিসেম্বর

সেমিনারে জাপানের রাষ্ট্রদূত

বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে আস্থার সম্পর্ক গুরুত্বপূর্ণ

এই অঞ্চলের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ও স্থিতিশীলতার স্বার্থে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে পারস্পরিক আস্থার সম্পর্ক গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন ঢাকায় নিযুক্ত জাপানের বিদায়ী রাষ্ট্রদূত ইওয়ামা কিমিনোরি। তাঁর মতে, মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দরের মতো বড় প্রকল্পের সর্বোচ্চ সুফল নিশ্চিত করতে হলে আঞ্চলিক সহযোগিতা অপরিহার্য।

রাজধানীর ইস্কাটনে বিস মিলনায়তনে রোববার আয়োজিত এক আন্তর্জাতিক সেমিনারে বিশেষ অতিথির বক্তৃতায় জাপানের রাষ্ট্রদূত এই অভিমত দেন।

বঙ্গোপসাগরীয় অঞ্চলের যুক্ততা ও সম্ভাবনা নিয়ে যৌথভাবে ওই সেমিনার আয়োজন করে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ (বিআইআইএসএস-বিস) ও জাপানের ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপিং ইকোনমিকস।

বাণিজ্য ও বিনিয়োগের জন্য বঙ্গোপসাগর বিপুল সম্ভাবনাময় উল্লেখ করে ইওয়ামা কিমিনোরি বলেন, জাপান নানা ধরনের সহযোগিতা ও প্রকল্পের মাধ্যমে বাংলাদেশের সঙ্গে অংশীদারত্ব প্রতিষ্ঠা করেছে। জাপান বিশ্বাস করে, মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির স্বার্থে গুরুত্বপূর্ণ। একই সঙ্গে আঞ্চলিক সংযুক্তিতে এর ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। তিনি আরও বলেন, ‘গভীর সমুদ্রবন্দরের উদ্যোগটা শুধু দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতার স্বার্থে নেওয়া হয়নি। আঞ্চলিক সংযুক্তি ও বৈশ্বিক সরবরাহব্যবস্থায় বাংলাদেশকে যুক্ত করার অংশ হিসেবে এটা করা হয়েছে। তাই অর্থনৈতিক সমন্বয় খুবই জরুরি। প্রবৃদ্ধির স্বার্থে এই বন্দরের সর্বোচ্চ সদ্ব্যবহারের বিষয়ে আমাদের আলোচনা করা উচিত।’

বঙ্গোপসাগরীয় অঞ্চলের যুক্ততা ও সম্ভাবনা নিয়ে আয়োজিত সেমিনারে বক্তারা। ঢাকা, ২২ ডিসেম্বর

জাপানের রাষ্ট্রদূত বলেন, বাংলাদেশ ও ভারতের বন্ধু হিসেবে জাপান বিশ্বাস করে, দুই দেশের পারস্পরিক আস্থার ভিত্তিতে আঞ্চলিক সংযুক্তির সুযোগ খুঁজে বের করাটা জরুরি। তাঁর মতে, সংযুক্তি ও যোগাযোগের গুরুত্ব সীমান্ত ও রাজনীতির থেকে বেশি, যা আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা অর্জন এবং পারস্পরিক প্রবৃদ্ধির পথ সুগম করে। এই প্রেক্ষাপটে চলতি মাসে ঢাকায় বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের আলোচনা ভালো ইঙ্গিত।

ইওয়ামা কিমিনোরি মনে করেন, উপ-আঞ্চলিক সহযোগিতা অর্থাৎ ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোসহ এ অঞ্চলের অন্যান্য দেশের সঙ্গে যুক্ত না হলে মাতারবাড়ী সমুদ্রবন্দরের সর্বোচ্চ সুফল অর্জিত হবে না।

সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন বলেন, বঙ্গোপসাগর অঞ্চল অর্থনীতি ও ভূকৌশলগত কারণে সহযোগিতা ও প্রতিযোগিতার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। এ কারণেই আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিকভাবে বঙ্গোপসাগর এলাকায় বড় বড় শক্তির নজর পড়েছে। তিনি বলেন, ‘বঙ্গোপসাগর যেন সহযোগিতার কেন্দ্রে পরিণত হয়, আমরা সেই চেষ্টা করছি। যাতে করে এটি দ্বন্দ্ব-সংঘাতের কেন্দ্রে রূপ না নেয়। বঙ্গোপসাগর অঞ্চলে সমৃদ্ধির জন্য এখানকার দেশগুলোর মধ্যে সম্প্রীতি ও শান্তি থাকাটা জরুরি।’

পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, সাত বছরের বেশি সময় ধরে মিয়ানমারের বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে অবস্থান করছে। রোহিঙ্গাদের অধিকারসহ নিরাপদ প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করতে না পারলে এই অঞ্চলে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হবে না। নিরাপদ ও সমৃদ্ধ বঙ্গোপসাগর এলাকা গড়ে তোলার জন্য স্থিতিশীলতা দরকার। এ জন্য রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে সব অংশীজনকে সহযোগিতা করার আহ্বান জানান তিনি।

বিসের চেয়ারম্যান এ এফ এম গওসোল আযম সরকার সেমিনারের উদ্বোধনী অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন। স্বাগত বক্তৃতা করেন বিসের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল ইফতেখার আনিস।