সরকারি কর্মচারীরা (কর্মকর্তা-কর্মচারী) কোনো ফরম্যাট বা অভিন্ন ফরমে সম্পদের তথ্য বা বিবরণী সরকারের কাছে দাখিল করবেন, তা ঠিক করতে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।
আজ সোমবার সচিবালয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব মো. মোখলেস উর রহমান সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।
পাঁচ সদস্যের এই কমিটির আহ্বায়ক দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সচিব। কমিটির সদস্যসচিব জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের শৃঙ্খলা শাখার অতিরিক্ত সচিব। কমিটিতে আছেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর), অর্থ বিভাগ এবং মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রকের প্রতিনিধি।
মোখলেস উর রহমান বলেন, কমিটিকে একটি ন্যূনতম সময় দেওয়া হবে। সংক্ষিপ্ত সময় দেওয়া হবে। এই সময় সাত দিনের বেশি নয়। কমিটি একটি ফরম্যাট তৈরি করবে। সাত দিন পর ফরম অফিসে অফিসে পৌঁছানোর জন্য আরও সাত দিনের মতো সময় নেওয়া হবে। বলে দেওয়া হবে, কে কোথায় কবে জমা দেবেন। বছরে একবার এই বিবরণী জমা দিতে হবে। ফরমটি বাংলায় করে দেওয়া হবে।
গতকাল রোববার জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব মোখলেস উর রহমান স্বাক্ষরিত এক বার্তায় সব সরকারি কর্মচারীকে সম্পদের তথ্য বা বিবরণী দাখিল করার নির্দেশ দেয় সরকার।
এ প্রসঙ্গে আজ সচিবালয়ে মোখলেস উর রহমান বলেন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে এটি একটি বার্তা। আয়করের বিবরণী সবাই জমা দেন না। যাঁদের করযোগ্য আয় আছে, তাঁরাই কেবল দেন। আর এখন যাঁদের কোনো সম্পদ নেই, তাঁদেরও তথ্য বা বিবরণী জমা দিতে হবে। এটি জনস্বার্থে দিতে হবে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব বলেন, ‘দিন শেষে এবারও প্রমাণিত হলো, যাঁর সম্পদ কম, যাঁর স্বচ্ছতা আছে, যাঁর লোভ নেই, তাঁরাই সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবন যাপন করছেন। ’
মোখলেস উর রহমান বলেন, ‘সরকার তো বহুবার পরিবর্তন হয়েছে। এভাবে কেউ পালায়? বায়তুল মোকাররমের খতিব কেন পালাবেন? উনিও তো পালিয়েছেন। আমার ব্যাচমেট কয়েকজন সংসদ সদস্য হয়েছেন, তাঁরাও পালিয়েছেন।’
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব বলেন, এই বিবরণী জমার পর দুদক বিবেচনা করবে, কার সম্পদের হিসাবের জন্য তলব করা হবে।
সারা দেশে ১৫ লাখের মতো সরকারি কর্মচারী আছেন জানিয়ে মোখলেস উর রহমান বলেন, সম্পদের বিবরণী জমা না দিলে দণ্ড কী হবে, সেটিও বলে দেওয়া হবে। সোজা কথা, জমা না দিলে আইনানুগ খবর আছে। যত বড় যে–ই হোক, চোরকে চোর বলতে হবে।
বিদ্যমান আইন অনুযায়ী, প্রত্যেক সরকারি কর্মচারীকে চাকরিতে প্রবেশের সময় স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তির ঘোষণা দিতে হয়। এরপর পাঁচ বছর অন্তর সম্পদ কমা বা বৃদ্ধির বিবরণী নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে সরকারের কাছে জমা দেওয়ার নিয়ম আছে। দুর্নীতি রোধ ও চাকরিজীবীদের জবাবদিহি নিশ্চিত করতে আচরণবিধিমালায় এমন নিয়ম আছে। কিন্তু কাগজের এই নিয়ম মানা হয় না বললেই চলে। এর আগে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে একাধিকবার চিঠি দিলেও অগ্রগতি হয়নি।
গত ২৬ আগস্ট জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ভাষণে তিনি বলেছিলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের সব উপদেষ্টা দ্রুততম সময়ের মধ্যে তাঁদের সম্পদের বিবরণী প্রকাশ করবেন। পর্যায়ক্রমে সব সরকারি কর্মচারীর ক্ষেত্রে তা নিয়মিত ও বাধ্যতামূলক করা হবে। এখন অন্তর্বর্তী সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সব সরকারি কর্মচারীকে সম্পদের বিবরণী দাখিল করতে হবে।
গত জুলাই মাসে হাইকোর্ট সরকারি কর্মচারী ও তাঁদের পরিবারের সম্পদের বিবরণীর ঘোষণা এবং সময়ে সময়ে তা দাখিলসংক্রান্ত বিধি কঠোরভাবে মানতে নির্দেশ দিয়েছিলেন। এ বিষয়ে অগ্রগতি জানিয়ে তিন মাসের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়।
অন্যদিকে গত ১৪ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকারের আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলেন, সুপ্রিম কোর্টের সঙ্গে পরামর্শ করার পর বিচার বিভাগীয় সব কর্মকর্তা ও তাঁদের পরিবারের সদস্যদের দেশে-বিদেশে থাকা স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের বিবরণী ১০ কর্মদিবসের মধ্যে দাখিল করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
মাঠ প্রশাসনে বদলি নিয়ে করা এক প্রশ্নের জবাবে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব বলেন, বদলি, পদায়ন ও পদোন্নতি একটি চলমান প্রক্রিয়া। জেলা প্রশাসক (ডিসি) একটি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বাছাই করা হয়। ৬০০ জন কর্মকর্তার মধ্য থেকে বাছাইয়ের কাজ চলবে। আর এক দিন সময় লাগবে। এই তালিকা সারসংক্ষেপ করে সেখান থেকে যে ২৫ জেলার ডিসি প্রত্যাহার করা হয়েছে, সেখানে প্রথম দিতে হবে। এরপর আরও যেসব জেলায় প্রত্যাহার করা হবে, সেসব জেলায় ডিসি দিতে হবে। এক সপ্তাহের মধ্যে তা দেওয়া হবে।