৫ শিক্ষার্থীকে কারণ দর্শাতে নোটিশের তথ্য আদালতকে জানাল ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের নেত্রী সানজিদা চৌধুরী (বাঁয়ে) ও তাবাসসুম ইসলাম
ছবি: সংগৃহীত

কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) হলে ফুলপরী খাতুনকে নির্যাতনের ঘটনায় জড়িত হিসেবে তদন্ত প্রতিবেদনে নাম আসা শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি সানজিদা চৌধুরীসহ পাঁচ ছাত্রীকে (সানজিদার অনুসারী) কারণ দর্শাতে ৩ মে নোটিশ (সংযুক্ত) দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। কেন তাঁদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না—এ বিষয়ে সাত কার্যদিবসের মধ্যে তাঁদের জবাব দিতে বলা হয়েছে।

বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি রাজিক-আল-জলিলের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চে আজ সোমবার এই তথ্য তুলে ধরেন বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনজীবী। শুনানি নিয়ে আদেশ বাস্তবায়ন বিষয়ে জানাতে আগামী ১ জুন পরবর্তী দিন রেখেছেন।

নোটিশ পাওয়া অপর চার ছাত্রী হলেন হালিমা আক্তার, ইসরাত জাহান, তাবাসসুম ইসলাম ও মোয়াবিয়া জাহান।

গত ১২ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলের গণরুমে আটকে রেখে ফিন্যান্স বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্রী ফুলপরীকে অমানবিক নির্যাতন করা হয়। তিনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে অভিযোগ করার পর তা সারা দেশে আলোচনার জন্ম দেয়। ওই ঘটনা নিয়ে গণমাধ্যমে আসা প্রতিবেদন যুক্ত করে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইন অনুসারে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশনা চেয়ে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ও ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী গাজী মো. মহসীন রিট করেন।

রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ১৬ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট রুল ও নির্দেশনাসহ আদেশ দেন। এর মধ্যে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন ও কমিটির প্রতিবেদন দাখিলের বিষয়টিও ছিল। তিন সদস্যের কমিটির প্রতিবেদন এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন আদালতে উপস্থাপন করে রাষ্ট্রপক্ষ।

শুনানি নিয়ে গত ১ মার্চ হাইকোর্ট তদন্ত প্রতিবেদনে নাম আসা পাঁচ ছাত্রীকে সব ধরনের শিক্ষার কার্যক্রম থেকে সাময়িকভাবে বহিষ্কার (সাসপেন্ড) করাসহ কয়েক দফা নির্দেশসহ আদেশ দেন। নির্দেশনা বাস্তবায়নের অগ্রগতি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে জানাতে বলা হয়। এর ধারাবাহিকতায় আজ বিষয়টি ওঠে।

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্যাতনের শিকার শিক্ষার্থী ফুলপরী খাতুন

আদালতে রিটের পক্ষে আইনজীবী গাজী মো. মহসীন নিজে শুনানি করেন। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে আইনজীবী বি এম আবদুর রাফেল শুনানি করেন, সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী মোল্লা জীবন আহমেদ।

পরে আইনজীবী গাজী মো. মহসীন প্রথম আলোকে বলেন, ‘পাঁচ শিক্ষার্থীকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। তবে তাঁদের কারণ দর্শাতে ৩ মে নোটিশ দেওয়া হয়। ইচ্ছাকৃত এই দেরির জন্য ইবি উপাচার্য ও রেজিস্ট্রারকে আদালতে হাজির হতে নির্দেশ দেওয়ার আরজি জানাই। বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে ভবিষ্যতে যাতে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটে, সে ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে সতর্ক করতে আদালত বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনজীবীকে বলেছেন। ইচ্ছাকৃত অবহেলার প্রমাণ পেলে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না বলে শুনানিতে উল্লেখ করেছেন আদালত। আদেশ বাস্তবায়ন করে আগামী ১ জুনের মধ্যে আদালতকে জানাতে বলা হয়েছে।’

অবশ্য ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনজীবী বি এম আবদুর রাফেল প্রথম আলোকে বলেন, ‘৫ মার্চ নোটিশ দেওয়া হলেও আইনগত ত্রুটি থাকায় আদালতের নির্দেশ অনুসারে পাঁচ শিক্ষার্থীকে ৩ মে সংযুক্ত নোটিশ দেওয়া হয়। সাত কার্যদিবস আজ শেষ হচ্ছে। অভিযুক্ত শিক্ষার্থীরা অনলাইনের মাধ্যমে ইতিমধ্যে লিখিত জবাব দিয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এ ক্ষেত্রে ধীরগতিতে কার্যক্রম পরিচালনা করছে—শুনানিতে মন্তব্য করেছেন আদালত।’