কবি সুফিয়া কামালের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে তাঁর স্মরণসভায় বক্তারা। মঙ্গলবার রাজধানীর সেগুনবাগিচায় বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের আনোয়ারা বেগম মুনিরা খান মিলনায়তনে
কবি সুফিয়া কামালের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে তাঁর স্মরণসভায় বক্তারা। মঙ্গলবার রাজধানীর সেগুনবাগিচায় বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের আনোয়ারা বেগম মুনিরা খান মিলনায়তনে

আলোচনায় বক্তারা

মানবকল্যাণে অসামান্য অবদান রেখে গেছেন সুফিয়া কামাল

মানবজীবন ক্ষণ–আয়ুর। এই জীবনকালেও মানবকল্যাণে অসামান্য অবদান রেখে গেছেন কবি সুফিয়া কামাল। মানবমুক্তির জন্য নারীমুক্তি অপরিহার্য—আজীবন এই মন্ত্র ধারণ করেছেন তিনি। সমাজ থেকে সাম্প্রদায়িকতা আর মৌলবাদ প্রতিরোধে সুফিয়া কামাল সব সময় ছিলেন সোচ্চার।

সোমবার (২০ নভেম্বর) ছিল ‘জননী সাহসিকা’ কবি সুফিয়া কামালের ২৪তম মৃত্যুবার্ষিকী। এ উপলক্ষে মঙ্গলবার বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ আয়োজিত স্মরণসভায় তাঁকে নিয়ে এসব কথা বলেন বক্তারা। বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন কবি সুফিয়া কামাল।

রাজধানীর সেগুনবাগিচায় সংগঠনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আনোয়ারা বেগম মুনিরা খান মিলনায়তনে এই সভার আয়োজন করা হয়। বক্তারা বলেন, জাতি–ধর্ম–বর্ণনির্বিশেষে কবি সুফিয়া কামাল মানবতার চর্চাকে সব সময় গুরুত্ব দিয়েছেন। তিনি নারীমুক্তি তথা মানবমুক্তির আন্দোলনে পুরুষ সমাজের পাশাপাশি তরুণসমাজকে যুক্ত হওয়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন।

সুফিয়া কামালের মেয়ে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও মানবাধিকারকর্মী সুলতানা কামাল বলেন, তাঁর মা সুফিয়া কামাল ছিলেন সবার আশ্রয়। ব্যক্তিগত, সামাজিক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে তিনি নিজের চারিত্রিক দৃঢ়তা বজায় রাখতেন। তিনি ঐতিহ্য ও মেধাকে ধারণ করে পথ চলেছেন। জাতি–ধর্ম–বর্ণনির্বিশেষে সুফিয়া কামাল মানবতার চর্চাকে সব সময় গুরুত্ব দিয়েছেন।  

বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি ফওজিয়া মোসলেম বলেন, ‘সুফিয়া কামাল ছিলেন সমসাময়িক। তিনি বলতেন, খুব ভয় পাই একবিংশ শতাব্দী কেমন হবে, এই শতাব্দীর মানুষের মনুষ্যত্ব কেমন হবে? এখন নৈতিকতা সবচেয়ে বড় প্রশ্ন। ক্ষমতা, কালোটাকা ও পেশিশক্তির বিপরীতে আইনের শাসন জোরালো নয়। সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে আমরা পিছিয়েছি। নারীর প্রতি বিদ্বেষ বেড়েছে। সামাজিক আচরণবর্জিত একটা প্রজন্ম আমরা তৈরি করছি কি না, তা দেখতে হবে। মানবতাকে রক্ষা করো, মানবাধিকারকে প্রতিষ্ঠা করো স্লোগান সামনে নিয়ে আসতে হবে।’

সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু বলেন, মানবজীবন ক্ষণ–আয়ুর। এই জীবনকালে সুফিয়া কামাল মানবকল্যাণে অসামান্য অবদান রেখে গেছেন। এই মহীয়সী নারী মানবমুক্তির অন্বেষায় তাঁর কাজের মাধ্যমে ইতিহাসে স্থান করে নিয়েছেন। সমাজের মধ্যে তৈরি হওয়া অবক্ষয়, পরিবেশের যে কোনো বিপর্যয়, সাম্প্রদায়িকতা ও মৌলবাদ প্রতিরোধে তিনি সর্বদাই সোচ্চার ছিলেন।

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন সংগঠনটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাসুদা রেহানা বেগম ও গবেষণা কর্মকর্তা আফরুজা আরমান। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সাংগঠনিক সম্পাদক উম্মে সালমা বেগম।

অনুষ্ঠান শুরু করা হয় কবি সুফিয়া কামালের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে তাঁর প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে। সংগীত পরিবেশন করেন শিল্পী শারমিন সাথী ময়না। এ ছাড়া কবিতা আবৃত্তি করেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের তথ্য ও প্রযুক্তিবিষয়ক কর্মকর্তা দোলন কৃষ্ণ শীল। আলোচনা শেষে লীলাবতী নাগকে নিয়ে নির্মিত তথ্যচিত্র ‘লীলাবতী নাগ: দ্য রেবেল’ প্রদর্শিত হয়।