অভিযানের মধ্যেই সীতাকুণ্ডে আবার বিস্ফোরণ

বিস্ফোরণে বিধ্বস্ত অক্সিজেন পরিবহনের একটি ট্রাক। শনিবার সন্ধ্যা সাতটায় সীতাকুণ্ডের কদমরসুল এলাকায়
ছবি: সৌরভ দাশ

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে বিএম কনটেইনার ডিপোতে ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনার পর নড়েচড়ে বসেছিল সংশ্লিষ্ট প্রশাসন। কারখানা ও কনটেইনার ডিপোগুলোর অগ্নিনিরাপত্তাব্যবস্থা খতিয়ে দেখতে একের পর এক অভিযান পরিচালনা শুরু করেন চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালত। চলমান এ অভিযানের মধ্যে আবারও চট্টগ্রামে ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে।

এবার বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের কদমরসুল এলাকায় সীমা অক্সিজেন লিমিটেড নামের একটি অক্সিজেন কারখানায়। শনিবার বিকেল সাড়ে চারটায় এ বিস্ফোরণে ছয়জন মারা গেছেন। আহত হয়েছেন আরও অন্তত ২৫ জন। এই কারখানা থেকে পৌনে এক কিলোমিটার দূরে বিএম কনটেইনার ডিপো। গত বছরের ৪ জুন রাতে ওই ডিপোতে বিস্ফোরণ থেকে আগুন লাগে। ওই ঘটনায় অন্তত ৫০ জন নিহত ও দুই শতাধিক মানুষ আহত হয়েছিলেন।

বিএম কনটেইনার ডিপোর বিস্ফোরণের পর বিস্ফোরণ প্রতিরোধে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে বিভিন্ন এলাকায় অভিযান শুরু করেন চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালত। গত দুই মাসে কনটেইনার, পোশাক কারখানাসহ ৯টি কারখানায় অভিযান চালানো হয়। কিন্তু এর মধ্যে একটি কারখানাতেও পর্যাপ্ত অগ্নিনিরাপত্তাব্যবস্থা খুঁজে পাননি অভিযানে নেতৃত্ব দেওয়া নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। এসব প্রতিষ্ঠানে ছিল না যথাযথ অগ্নিনির্বাপণযন্ত্র, ছিল না অগ্নিনিরাপত্তা ছাড়পত্রও।

এসব অভিযানে একজনকে এক বছরের কারাদণ্ডও দেওয়া হয়েছিল। জরিমানা করা হয় প্রায় ২০ লাখ টাকা। এ ছাড়া নানা ধরনের নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছিল।

অভিযানে নেতৃত্ব দেওয়া চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট প্রতীক দত্ত প্রথম আলোকে বলেন, তিনি যে ৯টি প্রতিষ্ঠানে অভিযান পরিচালনা করেছেন, সেখানে অগ্নিনিরাপত্তাব্যবস্থার অনেক ঘাটতি ছিল। সার্বিকভাবে বলতে হলে, অগ্নিনির্বাপণ বা অগ্নিকাণ্ড প্রতিরোধে যেসব ব্যবস্থা বা পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন, তার ১০ শতাংশও খুঁজে পাননি। এ পরিস্থিতির জন্য প্রতিষ্ঠানগুলোর মালিকপক্ষের যেমন দায় আছে, তেমনি অনুমোদনকারী সংস্থাগুলোও দায় এড়াতে পারে না।

একই সঙ্গে প্রতীক দত্ত আরও বলেন, শুধু ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে এবং জেল-জরিমানার মাধ্যমে আগুন বা বিস্ফোরণের ঘটনা নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়।

জেলা প্রশাসনের একজন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, অগ্নিনিরাপত্তা বিষয়ে অভিযান পরিচালনার মানে অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোকেও সতর্ক করে দেওয়া, যাতে তারাও এ বিষয়ে পর্যাপ্ত নিরাপত্তাব্যবস্থা নেয়। কিন্তু অধিকাংশ প্রতিষ্ঠান এই বিষয়ে গুরুত্ব দেয় না। তার একটা প্রমাণ হচ্ছে সীতাকুণ্ডে আবার বিস্ফোরণের ঘটনা।

জানুয়ারি থেকে যত অভিযান

চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন চলতি বছরের ৩ জানুয়ারি অভিযান শুরু করে। ওই দিন চট্টগ্রামের কর্ণফুলী উপজেলার চর পাথরঘাটার পুরাতন ব্রিজঘাট এলাকায় সাহারা এন্টারপ্রাইজের মালিকানাধীন একটি কয়লার ডিপোতে অভিযান চালানো হয়। অবৈধভাবে দীর্ঘদিন ধরে কয়লা মজুত এবং ফায়ার সার্ভিস ও পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র না থাকার অভিযোগে ডিপোর ইনচার্জ মো. আলামিনকে এক বছরের কারাদণ্ড দেন জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালত। জরিমানা করা হয় পাঁচ লাখ টাকা।

এরপর ৭ জানুয়ারি নগরের হালিশহরের ইসহাক কনটেইনার ডিপোতে অভিযান চালিয়ে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দেখতে পান, সেখানে পর্যাপ্ত অগ্নিনির্বাপণযন্ত্র নেই। নেই অগ্নিনিরাপত্তা নকশাও। আবার জেলা প্রশাসন ও বিস্ফোরক পরিদপ্তরের কাছ থেকে ছাড়পত্র বা অনাপত্তি না নিয়ে ডিপোর ভেতরে পেট্রলপাম্প স্থাপন করা হয়েছে। এসব অপরাধে প্রতিষ্ঠানটিকে দুই লাখ টাকা জরিমানা করেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।

একই অভিযানে নগরের বাংলাবাজার এলাকায় আদিলা অ্যাপারেল লিমিটেড নামের একটি পোশাক কারখানাকে দেড় লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। এই কারখানায়ও অগ্নিনিরাপত্তা ছাড়পত্রের মেয়াদ ছিল না। এ ছাড়া অল্প কিছু অগ্নিনির্বাপণযন্ত্র থাকলেও সেসবের মেয়াদ ছিল না।

গত ১৫ জানুয়ারি নগরের কালুরঘাট ভারী শিল্প এলাকার হাজী সাবের টিম্বার কোম্পানি লিমিটেডেও পর্যাপ্ত অগ্নিনির্বাপণব্যবস্থা না থাকার প্রমাণ পান ভ্রাম্যমাণ আদালত।

এ ছাড়া গত ২০ ফেব্রুয়ারি নগরের পতেঙ্গার কাঠগড়ে অবস্থিত ভারটেক্স অব ডক লজিস্টিক সার্ভিস নামের একটি প্রতিষ্ঠানে অভিযান চালিয়ে কোনো ধরনের লাইসেন্স বা ছাড়পত্র ছাড়া পেট্রলপাম্প পরিচালনার প্রমাণ পেয়েছিলেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।