রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে বাগেরহাট জুড়ে বাড়ছে তীব্র ঝোড়ো বাতাস ও বৃষ্টিপাত। মধ্যরাত থেকে জেলার নদ-নদীতে জোয়ারের পানির চাপও বাড়তে শুরু করেছে। এখন পর্যন্ত জেলার বিভিন্ন উপজেলার নদী তীরবর্তী অন্তত অর্ধশত গ্রামে জোয়ারের পানি প্রবেশ করেছে।
থেমে থেমে প্রচণ্ড দমকা বাতাসে কেঁপে উঠছে ঘরবাড়ি। এমন পরিস্থিতিতে আতঙ্ক আর উৎকণ্ঠার মাঝে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছে উপকূলবাসী। ঝোড়ো বাতাসের কারণে পুরো বাগেরহাট জেলা বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।
শরণখোলা উপজেলার রায়েন্দা এলাকা থেকে আলী আকবর রোববার দিবাগত রাত ১টায় বলেন, শরণখোলায় প্রচণ্ড বাতাস ও বৃষ্টি হচ্ছে। বলেশ্বর নদে পানি দিনের জোয়ারের থেকেও বেড়েছে। পানি উঠে গেছে রায়েন্দা বাজারে। সবাই আতঙ্ক নিয়ে আছে।
মোংলার পশুর নদে পানিও প্রবাহিত হচ্ছে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে। জোয়ারের পানিতে তলিয়ে গেছে গোটা সুন্দরবন। বনের মাঝে কোথাও কোথাও ৫ থেকে ৭ ফিট পর্যন্ত পানি উঠেছে বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে।
স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, দিনের থেকে রাতের জোয়ারে দুই থেকে তিন ফুটের বেশি পানি বেড়েছে নদ নদীতে। শরণখোলা, মোংলা, মোরেলগঞ্জ, বাগেরহাট সদর, রামপালসহ বিভিন্ন এলাকায় বাঁধ উপচে জোয়ারের পানি প্রবেশ করেছে লোকালয়ে। রাতে শরণখোলা রাজৈর এলাকার স্লুইসগেট নির্মাণের জন্য দেওয়া বাঁধ ভেঙে লোকালয় প্লাবিত হতে শুরু করেছে। সাউথখালী ইউনিয়নের মূল বেড়িবাঁধের বাইরে দেওয়া রিং বাঁধও ভেঙে গেছে পানির তোড়ে। ভৈরব ও দড়াটানা নদীর পানি বাড়ায় জেলার সদর উপজেলায়ও প্লাবিত হয়েছে একটি গ্রাম। পশুর নদ তীরবর্তী মোংলার চিলা, জয়মনি, বৈদ্যমারিসহ কয়েকটি গ্রাম প্লাবিত হওয়ার পাশাপাশি বেশ কিছু ঘর বাড়ি বিধ্বস্তের খবর পাওয়া গেছে। বিভিন্ন এলাকায় উপড়ে গেছে অসংখ্য গাছপালা। এই অবস্থায় আতঙ্কে নির্ঘুম রাত কাটছে বাগেরহাটবাসীর।
এদিকে বৈরী আবহাওয়ার কারণে রোববার সকাল থেকেই বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন ছিল জেলার বিভিন্ন এলাকা। দুপুর থেকেই পল্লী বিদ্যুতের আওতাধীন জেলার প্রায় পাঁচ লাখ গ্রাহক বিদ্যুৎহীন। এরপরও দু এক জায়গায় কিছু সময়ের জন্য বিদ্যুতে এলেও। সন্ধ্যা থেকে পল্লী বিদ্যুতের আওতাধীন জেলার সকল এলাকা অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়। বাগেরহাট পৌরসহরে ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড-ওজোপাডিকোর বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক থাকলেও রাত এগারোটার পর তাও বন্ধ হয়ে যায়। ফলে পুরো জেলাই এখন বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন। এতে কিছু এলাকায় মোবাইল নেটওয়ার্কও ব্যাহত হচ্ছে। সকাল থেকে বিদ্যুৎ না থাকায় অনেকের মুঠোফোনও বন্ধ হয়ে গেছে। এতে করে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে না পেরে উৎকণ্ঠে আছেন পরিবারের অন্য সদস্যরা।
বিভিন্ন এলাকায় গাছ পড়ে তার ছেঁড়া ও বৈদ্যুতিক খুঁটি ভাঙার কারণে সন্ধ্যা থেকে পুরোপুরি সরবরাহ বন্ধ রেখেছে বাগেরহাট পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি। এর মহাব্যবস্থাপক সুশান্ত রায় বলেন, ঝড় থামার পর সরবরাহ লাইন চেক করে ও ঝড়ে বিদ্যুতের লাইনে পড়া গাছপালা না সরিয়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ চালু করা সম্ভব হচ্ছে না।