রাশিয়া থেকে সরকারি পর্যায়ে গম আমদানির প্রক্রিয়া প্রায় চূড়ান্ত হয়েছে। প্রাথমিকভাবে ওই দেশ থেকে সাড়ে তিন লাখ টন গম কিনবে বাংলাদেশ। আগামী কয়েক দিনের মধ্যে এ বিষয়ে চুক্তি চূড়ান্ত হবে।
গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় মস্কো থেকে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত কামরুল আহসান মুঠোফোনে প্রথম আলোকে এ তথ্য জানান।
এর আগে দুপুরে ঢাকায় রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত আলেক্সান্দার মান্টিটস্কি সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে বলেন, রাশিয়া থেকে সরকারি পর্যায়ে গম ও সার আমদানির বিষয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে আলোচনা হচ্ছে। প্রাথমিকভাবে সাড়ে তিন লাখ টন গম ও এক লাখ টনের বেশি পটাশ সার পাঠানো হবে।
রাশিয়া-ইউক্রেন সংকটের ফলে সৃষ্ট খাদ্যসংকট নিয়ে জানতে চাইলে রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত বলেন, বৈশ্বিক খাদ্যসংকট নিয়ে আমাদের উদ্বেগ রয়েছে। সে কারণে ইউক্রেন থেকে খাদ্য সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে রাশিয়া উদ্যোগ নিয়েছে। তবে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকটে রাশিয়ার কোনো দায় নেই। কেননা, রাশিয়া কোনো ধরনের অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা দেয়নি। ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। তাই এই সংকটের জন্য আপনারা রাশিয়ার ওপর দায় চাপাবেন না।
কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, গতকাল মস্কোয় রাশিয়া থেকে গম ও সার কেনার বিষয়ে দুই দেশের কর্মকর্তাদের মধ্যে আলোচনা হয়েছে। মূলত পণ্যের দাম ও প্রক্রিয়া নিয়ে তারা আলোচনা করেন। ভার্চুয়াল আলোচনায় খাদ্যশস্য রপ্তানিবিষয়ক রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় সংস্থা প্রোডিনটর্গ ও রাশিয়ার খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে রাষ্ট্রদূতের বৈঠকে খাদ্য মন্ত্রণালয় ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের কর্মকর্তারা যুক্ত ছিলেন। খাদ্য অধিদপ্তর ও প্রোডিনটর্গের মহাপরিচালক চুক্তিতে সই করবেন।
জানতে চাইলে রাষ্ট্রদূত কামরুল আহসান বলেন, রাশিয়ার খাদ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বুধবারের বৈঠকে গম কেনার বিষয়ে ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে। আগামী কয়েক দিনের মধ্যে চুক্তি সইয়ের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। চুক্তি সইয়ের পর ঋণপত্র খোলা থেকে ৪৫ দিনের মধ্যে বাংলাদেশ গম আমদানি করবে। তিনি জানান, রুশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বুধবারের বৈঠকে সার আমদানির বিষয়েও আলোচনায় অগ্রগতি হয়েছে। খুব শিগগিরই এক লাখ টনের বেশি সার আমদানির বিষয়টি চূড়ান্ত হতে যাচ্ছে।
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে ক্রেমলিনের অভিযান শুরুর পর রাশিয়া থেকে পণ্য আমদানি বন্ধ রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়ার ওপর ব্যাংকিং লেনদেনসহ বিভিন্ন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এর ফলে ঋণপত্র খোলা, পণ্যের চালানের নিশ্চয়তা পাওয়ার মতো বিষয়গুলো ঝুলে ছিল। এর পাশাপাশি নিষেধাজ্ঞার কারণে লেনদেনের ধরন নিয়ে অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। পাশাপাশি কৃষ্ণসাগরে জাহাজ চলাচল এখনো নিরাপদ নয়। সম্প্রতি রাশিয়ার কৃষি ও খাদ্যপণ্য আমদানি থেকে যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়েছে।
বাংলাদেশের গম আমদানির অন্যতম উৎস ছিল রাশিয়া ও ইউক্রেন। দেশের মোট চাহিদার অন্তত ২৫ ভাগ গম আমদানি হতো এই দুই দেশ থেকে।
এদিকে ঢাকায় নিযুক্ত রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত গতকাল বিকেলে রাশিয়া দূতাবাস আয়োজিত এক গোলটেবিল বৈঠকে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে বলেন, বাংলাদেশের কাছে অপরিশোধিত তেলের পাশাপাশি পরিশোধিত তেল কেনার প্রস্তাব দিয়েছে রাশিয়া। এ বিষয়ে দুই পক্ষের মধ্যে আলোচনা চলছে। ইউক্রেনে রাশিয়ার ‘বিশেষ সামরিক অভিযানের’ ছয় মাস পূর্তিতে দূতাবাস ওই আলোচনার আয়োজন করে।
বাংলাদেশের কাছে বিক্রির জন্য রাশিয়া ডিজেলের যে নমুনা দিয়েছে, তাতে বিএসটিআই অনুমোদিত মাত্রার চেয়ে অনেক গুণ বেশি সালফার রয়েছে। রাশিয়ার ডিজেল ডার্টি (নোংরা) জ্বালানি বলে বাংলাদেশকে কম দামে বিক্রির প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে কি না, গোলটেবিল আলোচনার পর এই প্রতিবেদকের এ প্রশ্নের জবাবে আলেক্সান্দার মান্টিটস্কি বলেন, জ্বালানি তেল বিক্রির বিষয়ে দুই দেশের মধ্যে আলোচনা চলছে। কিন্তু বিষয়টি চূড়ান্ত না হওয়া পর্যন্ত এ নিয়ে কোনো মন্তব্য করা সমীচীন হবে না।
ব্যবসা–বাণিজ্যের ক্ষেত্রে দুই দেশের নিজস্ব মুদ্রায় লেনদেনের বিষয়ে জানতে চাইলে রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত বলেন, আর্থিক লেনদেনের বিষয়ে দুই দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তাদের মধ্যে আলোচনা হচ্ছে। এ বিষয়ে তাঁরা সিদ্ধান্ত নেবেন।
বাংলাদেশের সমুদ্রসীমায় তেল–গ্যাস অনুসন্ধানে রাশিয়ার জ্বালানি প্রতিষ্ঠান গাজপ্রমের কোনো পরিকল্পনা আছে কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, সিদ্ধান্তটা বাংলাদেশকে নিতে হবে।